- অর্থনীতি
- ব্র্যাক ব্যাংকের বড় শক্তি সুশাসন
সাক্ষাৎকার: সেলিম আর. এফ. হোসেন
ব্র্যাক ব্যাংকের বড় শক্তি সুশাসন

সেলিম আর. এফ. হোসেন
২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেলিম আর. এফ. হোসেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান। ব্র্যাক ব্যাংক ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট এ ব্যাংকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি
সমকাল: বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বিভিন্ন আর্থিক সূচকে ব্র্যাক ব্যাংক শীর্ষে রয়েছে। এর কারণ কী?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: ২০২২ সাল থেকে চার বছরে ব্যাংকের ব্যবসাকে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। আগের ৫ বছর গড়ে যেখানে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল, সেখানে ২০২২ সালে আমানত বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ। এভাবে গড়ে ব্যালেন্সশিটের আকার ২৬ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর শেষে ব্যালেন্সশিটের আকার ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা রয়েছে। গ্রাহক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, বিদেশি করেসপনডেন্ট সবার মাঝে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রোফাইল বড় হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি সুশাসন। ব্যাংকের ব্যবসার ভিত্তিই হচ্ছে সুশাসন, নিয়মানুবর্তিতা এবং কাজের স্বচ্ছতা। ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রথম থেকে সুশাসনে জোর দিয়েছেন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। পর্ষদ সদস্যরা সবসময় চান ব্যাংক আরও বড় হোক, আরও ভালো হোক। ব্যাংকের এমডিকে পর্ষদ ক্ষমতায়ন করেছে, এমডি পুরো টিমকে ক্ষমতা দিয়েছেন। অত্যন্ত পেশাদার একটি টিম এখানে কাজ করে। এটিই ব্র্যাক ব্যাংকের শক্তি।
সমকাল: প্রযুক্তিনির্ভর সেবায় ব্র্যাক ব্যাংক কীভাবে তুলনামূলক ভালো করছে?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: প্রযুক্তিতে আমরা ২০১৮ সাল থেকে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। প্রযুক্তিতে বছরে আমরা ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করছি। ব্র্যাক ব্যাংকের ‘আস্থা’ অ্যাপে অনেক সহজে লেনদেন করতে পারছে। করপোরেট গ্রাহকদের জন্য ‘করপনেট’ নামে একটি অ্যাপ আছে। গত বছর ওই অ্যাপে ২ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
সমকাল: অনেকে নানা উপায়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন। ব্যাংক খাতে এর প্রভাব কেমন?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: কোনো সন্দেহ নেই, ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ কমানো। গ্রাহকদের কিছু ছাড় দিয়ে আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে কোনো সুফল আসেনি। খেলাপি ঋণের সমাধান করতে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বা ব্যাংকাররা কিছু করতে পারবেন না। সামাজিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা লাগবে। ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২০২১ সালের ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে কমে গত বছর ৩ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমেছে।
সমকাল: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি সংকট আমাদের কতটুকু প্রভাবিত করেছে?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: করোনার ধাক্কা বাংলাদেশ দ্রুত কাটিয়ে উঠেছিল। গরিব দেশ হয়েও বিনামূল্যে সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে বিরাট একটা চাপ তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। এক বছরে টাকার বিনিময় হার কমেছে ২৫ শতাংশের মতো। মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের কাছাকাছি চলে গেছে। অবশ্য গত বছরের তুলনায় ডলারের ওপর চাপ ধীরে ধীরে কমেছে।
সমকাল: ডলার বাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি কমানোর উদ্যোগকে কীভাবে দেখেন?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: আমাদের এতদিনের আমদানি নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বারবার দেখিয়েছেন, প্রচুর ওভার ইনভয়েসিং ছিল। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অনেক অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। একশ টাকার পণ্য অনেকে চারশ টাকা দেখিয়ে আনছিল। একটি বিষয় খেয়াল করলে বোঝা যাবে, এবারের রোজায় আমাদের কোনো পণ্যের সংকট হয়নি। অথচ এবার রমজানে মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার।
সমকাল: আইএমএফের শর্তের আলোকে নতুন সুদহার ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আপনি এটিকে কীভাবে দেখেন?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: সুদহার, বিনিময় হার সবই বাজারভিত্তিক হওয়া দরকার। তবে আমাদের অর্থনীতি আমদানিনির্ভর। যে কারণে একবারে কিছু করলে তার একটি ধাক্কা আছে। ওখানে পৌঁছানোর যাত্রা আগামী জুলাই থেকে শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এভাবে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে।
সমকাল: সামগ্রিকভাবে আগামী দিনে ব্যাংক খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ কী কী?
সেলিম আর. এফ. হোসেন: প্রথম বড় চ্যালেঞ্জটা সুশাসনের। ব্যাংকে পর্ষদকে নিরপেক্ষ করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনার কাজে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পেশাদার এমডি এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। তৃতীয়ত, চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো। আর ব্যাংকিং খাতের নিয়মকানুন শিথিল নয়, আন্তর্জতিক মানের করতে হবে।
মন্তব্য করুন