- অর্থনীতি
- পেঁয়াজের পর আদার দামেও বড় দুশ্চিন্তা
পেঁয়াজের পর আদার দামেও বড় দুশ্চিন্তা

প্রায় এক মাস ধরে ভোক্তাকে ভোগাচ্ছে পেঁয়াজের বাজার। নিত্যপণ্যটির দাম এ সময়ে বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে আরেক দুশ্চিন্তার খবর দিচ্ছে মসলাজাতীয় পণ্য আদা। এটির দামও প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় আদার দাম বাড়ছে বলে দাবি পাইকার ও আমদানিকারকদের। তবে ভোক্তারা বলছেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি খরচ ও মজুতের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের তদারকি করলে দাম কমবে দরকারি এ পণ্যের।
মিয়ানমার ও ভারত থেকে আসা বেশিরভাগ আদাকেই দেশি বলে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে এখন ভারত, ভুটান ও ভিয়েতনাম থেকেও আমদানি হচ্ছে। এগুলোকেও দেশি আদা বলে বিক্রি করছেন তাঁরা। মাসখানেক আগে এসব আদার কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বাজারে এখন ইন্দোনেশিয়ার আদাও পাওয়া যাচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা এটি বিক্রি করছেন ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের এ সময়ে দেশি আদার কেজি ছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা; আর আমদানি করা আদার দাম ছিল ৮০ থেকে ১৩০ টাকা। টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরে দেশি আদার দাম বেড়েছে ১৭৫ শতাংশ। আর আমদানি করা আদার বেড়েছে ২১০ শতাংশ। কারওয়ান বাজারের পাইকারি আদা-রসুন বিক্রেতা ও ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জসিম সমকালকে বলেন, কয়েক দিন ধরে শ্যামবাজারে আদার সরবরাহ কমেছে। ১০০ কেজি কিনতে চাইলে আমদানিকারকরা দিচ্ছেন ৫০ কেজি। চায়না আদা পাওয়াই যায় না। পেলেও পাইকারিতেই প্রতি কেজির দাম ৫০০ টাকার কাছাকাছি পড়ে যায়। ভারতের কেরালার আদা না আসায় এখন ভুটান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসছে। সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।
সরবরাহে ঘাটতির কথা জানালেন আমদানিকারকরাও। শ্যামবাজার পেঁয়াজ-আদা-রসুন ব্যবসায়ী মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক ও আদা আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন বছরে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টন আদার প্রয়োজন হয়। এর সিংহভাগই আমদানি করা। সবচেয়ে বেশি আসে ভারতের কেরালা ও চীন থেকে। গত বছর কেরালার আদা পাইকারিতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ কারণে বাজারে দাম নাগালের মধ্যে ছিল। কিন্তু এবার কেরালার আদা আসছে না। চীন থেকেও আসছে খুব কম।
কম আসার কারণ জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, কেরালায় এবার উৎপাদন কম হয়েছে। তাছাড়া ডলারের সংকট এবং দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এলসি খুলে আদা আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে ৩২০ টাকার বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয় শুল্কসহ নানা খরচ। তাই আমদানিকারকরা কম আমদানি করছেন। তবে ব্যবসায়ীদের এসব যুক্তিকে দাম বাড়ানোর কৌশল মনে করেন ভোক্তারা। গতকাল কারওয়ান বাজারে ৪০০ টাকা দিয়ে এক কেজি ইন্দোনেশিয়ান আদা কেনেন ফেরদৌসী বেগম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী এই ক্রেতা সমকালকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে কম আসছে, এটা মিথ্যা কথা। বাজারে তো আদার অভাব নেই। কোরবানি ঈদ আসছে, তাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে আদার চাহিদা তিন লাখ টনের। তবে আমদানিকারকদের দাবি, চাহিদা রয়েছে ৬ থেকে ১০ লাখ টনের। দেশে উৎপাদন হয় খুবই কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আদা উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টন। ফলে চাহিদার বড় অংশই মেটাতে হয় আমদানি করে। সমকালের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে গত বছর মোট আদা আবাদ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল ২৯ হাজার ৪০৬ টন। বান্দরবানের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ নেয়াজ বলেন, এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০৫ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৪৭ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বান্দরবানে উৎপাদন বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তবে বান্দরবানের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। জেলা সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার আদা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে পাহাড়ের পরিস্থিতি ভালো নেই। দুর্গম এলাকার বসবাস করা আদা চাষিরা বেশিরভাগ বম সম্প্রদায়ের। তাঁরা বিভিন্ন কারণে চাষাবাদ করতে পারছেন না। ফলে চলতি বছর আদার উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মন্তব্য করুন