প্রায় ৮৪ শতাংশ কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তা (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার (এমএফএস) ওপর নির্ভরশীল। তাদের প্রায় ৮৩ শতাংশই এমএফএস সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। দেশের সব বিভাগে দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচিত ৪০০ সিএমএসএমই উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সিএমএসএমই ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের বাইরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করা হয় জরিপে। এতে দেখা যায়, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশের ব্যাংক কিংবা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতষ্ঠানে (এনবিএফআই) অ্যাকাউন্ট আছে। অর্থাৎ বাকি ৮২ শতাংশের এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট নেই। এক হাজার খানার আড়াই হাজার সদস্যের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ জরিপটি করা হয়।

জরিপের বিস্তারিত তুলে ধরেন পিআরআইর গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, অ্যাকাউন্ট না থাকার কারণ হিসেবে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা এর প্রয়োজন না থাকার কথা জানিয়েছেন। প্রায় ৩৪ শতাংশ বলেছে, অ্যাকাউন্ট খোলার মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই তাদের। ১০ শতাংশ বলেছে, তারা জানে না কীভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।

খানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রভাব বিষয়ক জরিপটিতে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ের তথ্য বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়াগের ক্ষেত্রে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রভাব মূল্যায়নের উদ্দেশে জরিপ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেবাধর্মী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এতে সহায়তা দিয়েছে।

কর্মশালায় পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে শহরকেন্দ্রিক। এখন এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামের হাটবাজারেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং তিনগুণ ব্যয় সাশ্রয়ী। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতি। মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ গ্রামে থাকে। তারা কৃষি এবং অকৃষি বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধায় গ্রামে বিনিয়োগ বাড়ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বড় বাধা ব্যাংক না থাকা। ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে এনবিএফআইর কাছ থেকে অনেকে ঋণ নিচ্ছে উচ্চসুদে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার। তিনি বলেন, ডিজিটাল আর্থিক সেবায় রীতিমতো বিপ্লব চলছে দেশে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ বিপ্লব শুরু হয়। মোবাইল ফোন এখন অর্থনৈতিক সেবার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এই সেবা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ানো সম্ভব। এতে দুর্নীতিও কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।