চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার অর্ধেকেরও কম। প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম থাকায় উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে অর্থ ছাড়ের পরিমাণ কমেছে। ঋণের প্রতিশ্রুতিও কমিয়েছেন তাঁরা। এ বাস্তবতায় আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা কমেছে। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের পরিমাণও কমেছে।

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অনুমোদিত বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৭টি। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এ সংখ্যা ছিল ২৯৫টি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) ১১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করা হয়। নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ৩৭ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বেশি।

বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা কমে আসার কারণকে খুব বড় করে দেখছে না পরিকল্পনা কমিশন। জানতে চাইলে কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য সত্যজিত কর্মকার সমকালকে বলেন, প্রকল্প সংখ্যা কমলেও অর্থের পরিমাণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী এডিপিতে বিদেশি সহায়তার প্রাক্কলন বেড়েছে।

বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা কমে আসার কারণে এডিপিতে বিদেশি ঋণ সহায়তার প্রাক্কলন ও পরিমাণও কমেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রাক্কলন ছিল ৯১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে বিদেশি ঋণ ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এ পরিমাণ আরও কমতে পারে। প্রতিবছরই মূল এডিপির বরাদ্দ থেকে সংশোধিত এডিপি ছোট হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরও মূল এডিপির চেয়ে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প কমলে কী ক্ষতি জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, অর্থনীতিতে এর নানামুখী অভিঘাত আছে। ডলার সংকটের বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশি ঋণ এখন খুব বেশি প্রয়োজন। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড় এবং প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়ার সামাজিক অভিঘাতটাও বেশ উদ্বেগজনক। সরকারের টাকার সংকটের বাস্তবতায় বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সন্তোষজনক না হলে কর্মসংস্থান কমবে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয়ের জোগানে অর্থ সংকট দেখা দেবে।

আগামী এডিপিতে বিদেশি ঋণ সহায়তা সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে বেশি পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। টাকার অঙ্কে ৪৭ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা, যা এডিপিতে বিদেশি সহায়তার ৪১ শতাংশ। প্রকল্প সংখ্যাও সর্বাধিক ৬৪টি এ খাতে। চলতি অর্থবছর মোট বিদেশি ঋণের ৩৯ শতাংশের বেশি বরাদ্দ ছিল পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে। চলতি অর্থবছর এ হার ছিল ১৯ শতাংশের মতো। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি সহায়তা চলতি অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। স্বাস্থ্য খাত এডিপি বাস্তবায়নে অনেক পিছিয়ে আছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে বিদেশি ঋণ সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ৫৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে যা ছিল ৩৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গেল ৯ মাসে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের বিপরীতে অর্থ ছাড় কমেছে ২১ শতাংশ। এ সময় প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৩ শতাংশেরও বেশি।