কুমিল্লার চান্দিনায় সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম নেওয়া নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মৃত ঘোষিত ওই নবজাতকে ওষুধের কার্টনে করে বাড়িতে নেওয়া হয়। দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় হঠাৎ কেঁদে ওঠায় আত্মীয়-স্বজনরা ওই নবজাতককে আবারও একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবশ্য নবজাতককে বাঁচানো যায়নি। 

সোমবার সকালে চান্দিনা উপজেলা সদরের পল্লী বিদ্যুৎ রোড এলাকার চান্দিনা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ওই নবজাতকের জন্ম হয়েছিল। চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।   

শিশুটির পরিবার জানায়, দেবিদ্বার উপজেলা তেবারিয়া গ্রামের আব্দুল বারেকের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারকে সোমবার (২৯ মে) সকালে চান্দিনা উপজেলা সদরের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনে তার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক কিছুক্ষণ পর নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন। 

ওই প্রসূতির বড় বোন জরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার বোনকে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষা করে তারা বলছে দ্রুত সিজার করতে হবে, নতুবা বড় সমস্যা হবে। আমরা কিছু না বুঝেই দ্রুত সিজার করতে রাজি হই। অপারেশনের পর ডাক্তার বাচ্চাটিকে কয়েকটি ঝাঁকি দিয়ে বলেন, বাচ্চা মারা গেছে। পরবর্তীতে হাসপাতালের স্টাফরা একটি ওষুধের কার্টনের ভেতর  রেখে দেন শিশুটিকে। সকাল ৯টার দিকে হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে তার বাবার বাড়ি বুড়িচংয়ের আবিদপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুটি জন্মের পর কাটা নাভিতে পর্যন্ত বাঁধ দেয়নি কেউ। দুই-একটি ঝাঁকি দিয়ে বলে শিশুটি মারা গেছে। আমার বোনের সিজারের পরপর ওই হাসপাতালে অন্য রোগীর আরও একটি সিজার করানোর তাড়া ছিল তাদের। তাই নার্স ও ডাক্তারদের অবহেলার কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।’ 

প্রসূতির বাবা আব্দুল বারেক বলেন, ‘নাতির মৃত্যুর কথা শুনে আমি জানাজা দিতে আবিদপুর যাই। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ শিশুটি নড়েচড়ে ওঠে। এ অবস্থা দেখে আমরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর আবারও শিশুটি চিৎকার করে ওঠে। তখন অটোরিকশায় করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার আবারও নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন।’

সিজারিয়ান সম্পন্ন করা চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত নবজাতক জন্মের এক-দুই মিনিটের মধ্যে নড়াচড়া বা চিৎকার না করলে ডাক্তারি ভাষায় তাকে মৃত বলা হয়। ওই শিশুটির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। পরবর্তীতে কিছু ঘটে থাকলে তা চিকিৎসাবিদ্যা সমর্থন করে না।’

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই নবজাতকের পরিবার অভিযোগ করলে তদন্ত করে অবহেলার সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’