জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দৃশ্যত জনতুষ্টির তেমন প্রকল্প রাখা হয়নি আগামী অর্থবছরের অনুমোদিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। মাত্র ৩৩টি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪টি। তবে আগামী এডিপিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের বিপরীতে থোক আকারে ১১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এ বাবদ কোনো বরাদ্দ ছিল না। আবার ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দও এক ধরনের থোক।

ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন সামনে রেখে জনতুষ্টির বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হবে এই থোক বরাদ্দের অর্থে। অনুমোদিত ৩৩টি নতুন প্রকল্পের বাইরে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত তালিকায় আরও ৮২৫টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ তালিকা থেকে জনতুষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু প্রকল্প বাছাই করে বাস্তবায়ন করা হতে পারে। বাস্তবায়নে গুরুত্ব বোঝাতে অননুমোদিত নতুন ৮২৫টির বেশিরভাগ প্রকল্পকে উচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের বরাদ্দ রাখা হতে পারে। সমকালকে তিনি বলেন, নতুন যে ৮২৫টি প্রকল্প অনুমোদনহীন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সে তালিকা থেকে বাছাই করে নির্বাচন সামনে রেখে জনতুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রকল্প বাছাই করে বাস্তবায়ন করতে পারে সরকার। গ্রাম এবং শহরভিত্তিক স্থানীয় উন্নয়নমূলক প্রকল্প এক্ষেত্রে জনরায় পক্ষে নেওয়ার জন্য বেশ কাজের। তবে এ থোক বরাদ্দ থেকে সরাসরি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের বাড়তি অর্থ ব্যয়ের সুযোগ নেই। থোক আকারে রাখা এ অর্থ প্রকল্পভিত্তিক খাতেই ব্যয় করতে হবে। অবশ্য, প্রকল্পের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণসহ তাঁদের সন্তুষ্ট করা যায়– এমন খাতে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে।

বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের বিপরীতে রাখা থোক এবং বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতের বরাদ্দ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিতে পারবে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের বাইরে অন্য কোনো খাতে এই বরাদ্দ ব্যয় করার সুযোগ নেই।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরাসরি থোক বরাদ্দ বেশি পাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। দুই হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ বিভাগের জন্য। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের জন্য রাখা হয়েছে ৩৬৩ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে এসব খাতের বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পেও বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়। সাধারণত, দৃশ্যমান এবং সরাসরি সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকে এসব খাতের প্রকল্প থেকে। ফলে বড় থোক বরাদ্দ থেকে জনতুষ্টির প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ তালিকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণে ৬টি প্রকল্প আছে। শিল্পপার্ক নির্মাণে ৯টি ও ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণে ৫টি প্রকল্প রয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ৯টি ও সুরক্ষা সেবায় ১৫টি প্রকল্প রয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) গত ১১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। এনইসি চেয়ারপারসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ৩৭ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বেশি।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যয় পরিকল্পনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ অন্তর্ভুক্ত। পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে মোট ব্যয়ের অনুমোদন দেবে জাতীয় সংসদ।