তুলনাটি হয়তো একেবারেই বাড়াবাড়ি। তারপরও কল্পনায় কিছুক্ষণের জন্য কুমিল্লাকে যেন কাল ‘লুসাইল’ মনে হয়েছিল। মেসি-এমবাপ্পে হয়ে ধরা দিচ্ছিলেন কলিনড্রেস-দিয়াবাতে! সেই গোল খাওয়া, গোল শোধ করা। পিছিয়ে পড়ে এগিয়ে যাওয়ার উত্তেজনা কাটতে না কাটতেই সমতায় আসা এবং শেষ পর্যন্ত দু’দলকে টাইব্রেকারের মতো হাঁড়িকাঠের নিচে যাওয়া!

যাঁরা খেলা হচ্ছে নাকি– বলতে বলতে টেলিভিশন সেটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন গতকাল, তাঁদের মধ্যেই জেগে উঠেছিল ভেতরে সুপ্ত থাকা আবাহনী-মোহামেডান সমর্থকের স্বত্বটাই। প্রিয় দলের গোল দেওয়া বা গোল খাওয়া তাঁদের আন্দোলিত করেছে। কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতিও উস্কে দিছে। বিশ্বকাপের মতো প্রকাশ্য এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হয়নি তাঁদের।

তবে ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডানের যে ঐতিহাসিক সৌন্দর্য রয়েছে, তা তাঁরা ফিরে পেয়েছেন নিশ্চিত। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহামেডান। কিন্তু তার মধ্যেও জিতে গেছে ঘরোয়া ফুটবল।

বাফুফের কর্মকর্তাকে ফিফার নিষেধাজ্ঞা, কাজী সালাউদ্দিনের মিডিয়াকর্মীদের প্রতি অসম্মান-অশ্রদ্ধা, নারী ফুটবলে ঝোড়ো হাওয়া– সব মিলিয়ে যে ফুটবলকে মনে হচ্ছিল মৃতপ্রায়, সেই ফুটবলকেই যেন বুকভরা বিশুদ্ধ শ্বাস দিল আবাহনী-মোহামেডানের ধ্রুপদি একটি ম্যাচ। যেখানে আবাহনীর হয়তো হৃদয় ভেঙেছে; কিন্তু মোহামেডান তার সাদা-কালোর মধ্যেই আবার রঙিন বসন্ত খুঁজে পেয়েছে। বাঙালির তুমি ফুটবল … । এভাবেই বেঁচে থাকুক প্রাণের ফুটবল।

রোল অব অনার (ফেডারেশন কাপ)

মৌসুম                   চ্যাম্পিয়ন                    রানার্সআপ

২০২২-২৩             মোহামেডান                আবাহনী
২০২১-২২              আবাহনী                     রহমতগঞ্জ
২০২০-২১              বসুন্ধরা                       সাইফ স্পোর্টিং
২০১৯-২০              বসুন্ধরা                       রহমতগঞ্জ
২০১৮                    আবাহনী                    বসুন্ধরা কিংস
২০১৭                    আবাহনী                    চট্টগ্রাম আবাহনী
২০১৬                   আবাহনী                    আরামবাগ
২০১৫                  শেখ জামাল                মুক্তিযোদ্ধা
২০১৩                  শেখ জামাল                মুক্তিযোদ্ধা
২০১২                  শেখ রাসেল                 শেখ জামাল

যেভাবে ৮ গোল: ১৭ মিনিট: গোল (আবাহনী) : দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে থ্রো পাস দেন এমেকা। ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে এসে ডান পায়ের যে প্লেসিং শট নেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, তা চলে যায় মোহামেডানের জালে।

৪৩ মিনিট: গোল (আবাহনী) : মাঝমাঠ থেকে হৃদয়ের উড়ন্ত পাস খুঁজে নেয় ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে। মোহামেডানের হাসান মুরাদ যখন চার্জে গেলেন, তখন বল কিন্তু জালে।

৫৬ মিনিট: গোল (মোহামেডান) : মাঝমাঠ থেকে কামরুলের সেটআপে বল পেয়ে যান সুলেমান দিয়াবাতে। তিনি ঠান্ডা মাথায় গোল করেন।

৬০ মিনিট: গোল (মোহামেডান) : মুজাফফরভের দূরপাল্লার শট শহীদুল আলম সোহেল আটকানোর পর বল পেয়ে যান বাঁ দিকে থাকা জাফর ইকবাল। তাঁর আড়াআড়ি ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন দিয়াবাতে।

৬৬ মিনিট: গোল (আবাহনী) : আবারও লিড আবাহনীর। ডান প্রান্ত থেকে ফাহিমের ক্রস সুজন ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। সামনে পাওয়া বল নিয়ে গোল করেন এমেকা।

৮৩ মিনিট: গোল (মোহামেডান) : কামরুলের কর্নারে সুলেমান দিয়াবাতের হেড দূরের পোস্ট দিয়ে চলে যায় জালে। গোলরক্ষক শহীদুলের কিছুই করার ছিল না। হ্যাটট্রিক করেন মালির এ ফরোয়ার্ড।

১০৫ মিনিট: গোল (মোহামেডান) : বক্সে ওয়ান-অন-ওয়ান পজিশনে দিয়াবাতেকে ফাউল করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না শহীদুলের। রেফারিও বাজান পেনাল্টির বাঁশি। স্পট কিকের আগে দিয়াবাতের সঙ্গে মোহামেডানকে নিখুঁত পেনাল্টিতে এগিয়ে নেন এই ফরোয়ার্ড।

১১৭ মিনিট: গোল (আবাহনী) : বাঁ প্রান্তে থাকা কলিনড্রেস একটু পেছনে বাড়িয়ে দেন এমেকাকে। তিনি পাস দেন রহমত মিয়াকে। বল থামিয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে যে বুলেট গতির শট নেন রহমত মিয়া, তা চলে যায় মোহামেডানের জালে।