- অর্থনীতি
- রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতি থাকবে
এমসিসিআই ও পিআরআইর বাজেট পর্যালােচনা
রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতি থাকবে

কর কাঠামোয় অর্থবহ সংস্কার উদ্যোগের ব্যর্থতায় গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব খুব একটা বাড়ছে না। প্রতিবছর বাজেটে এক বছরের জন্য অ্যাডহক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা দিয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি হবে আগামী অর্থবছরে।
শনিবার বাজেট-পরবর্তী এক আলোচনায় এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। ‘নাজুক অবস্থা থেকে বাংলাদেশের সহনসক্ষমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’বিষয়ক এ আলোচনা সভা যৌথভাবে আয়োজন করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এমসিসিআই ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরাই। রাজধানীর মতিঝিলে এমসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান। সভায় পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার ও ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ। এমসিসিআইর সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন. করিমের সঞ্চালনায় আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন সাবেক সভাপতি আনিস এ দৌলা, বর্তমান সহসভাপতি কামরান টি রহমান, পরিচালক আদিব এইচ খান প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে গ্রামীণ উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সবদিক থেকেই গ্রামের মানুষের ভালো হয়েছে বাজেট। তবে কর আদায়ে সহায়তার জন্য এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন বক্তার সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর এজেন্টে সারাদেশে একবারে বাস্তবায়ন না করে পরীক্ষামূলকভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে চালু করা যেতে পারে। এ ব্যবস্থায় কর দেওয়ার বিষয়ে অনেকে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। ভর্তুকি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বাজেটে ভর্তুকি থেকে সরে আসার ঘোষণা প্রচ্ছন্নভাবে আছে।
ড. সাদিক আহমেদ বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, রাজস্ব আহরণ, ঘাটতি অর্থায়ন ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয়ের জোগান– এই চার প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাজস্ব জোগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অতি উচ্চাভিলাষী। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ শতংশ বড়, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। গত ছয় অর্থবছরে রাজস্ব বেড়েছে ১০ শতাংশ হারে। অবশ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব কর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে হয়তো অতিরিক্ত কিছু রাজস্ব আহরণ বাড়তে পারে। তাই বলে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি অসম্ভব। অর্থবহ সংস্কারের ফলে রাজস্ব বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ড. সাদিক আহম্মেদ বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক। তবে মূল্যস্ফীতির জন্য অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনাও দায়ী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমপর্যায়ের দেশ কিংবা ইউরোপ, আমেরিকা সব দেশেই অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, থাইল্যান্ড গত বছরের জুনের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে গত এপ্রিলে ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি ভিয়েতনামের মূল্যস্ফীতিও ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছে। ড. সাদিক মনে করেন, প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ১৬০টি গুরুত্বপূণ পণ্যে কর কমানো যেতে পারে। ডলার এবং টাকার বিনিময় হারের কারণে রপ্তানিকারকরা ২০ শতাংশের মতো বাড়তি সুবিধা ভোগ করছেন এখন। এ কারণে অন্তত এক বছরের জন্য রপ্তানি প্রণোদনা স্থগিত রাখা যেতে পারে।
এমসিসিআইর পরিচালক আদিব এইচ খান বলেন, এতদিন ধরে বিদেশি ঋণে সুদের ওপর ব্যবসায়ীরা কর অব্যাহতি পেলেও এবার তা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে ১৯৭৬ সাল থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে বিদেশি ঋণ। এটা পাস হলে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময়ে সুদের বিপরীতে কর দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়িয়ে দেবে।
আলোচনায় অন্য বক্তারা টিআইএন থাকলে ২ হাজার টাকা আয়কর আরোপের সমালোচনা করেন। রাজস্ব নীতি এবং নৈতিকতার বিচারে সাংঘর্ষিক এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবি জানান তাঁরা।
মন্তব্য করুন