- অর্থনীতি
- প্রস্তাবিত বাজেট স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা
প্রস্তাবিত বাজেট স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ

সরকার ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সুপারিশ বা প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। বরং স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্যের সঙ্গে তা যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ রোববার বাজেট প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
কারওয়ানবাজার বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলন অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক এবং ই-ক্যাব সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন উপস্থিত থেকে নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, সরকার প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। যা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আকারের বাজেট। প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক বা উল্লেখযোগ্য কোনো সুখবর নেই বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক প্রস্তাব দেওয়ার পরও এ খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর, সফটওয়্যার ও আইটিইএসের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা এবং সর্বোপরি দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে সফটওয়্যার ক্রেতাকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেছিলাম। অথচ এগুলোর কোনোটাই বিবেচনায় আনা হয়নি। অপরদিকে, অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং সফটওয়্যারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই হলো, প্রতিটি খাত হবে স্মার্ট। যেখানে শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি খাত, জ্বালানি খাত- সবগুলো খাতই হবে স্মার্ট। কিন্তু সফটওয়্যারের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং ভ্যাট আরোপ করায় এই সফটওয়্যারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
বিসিএসের প্রতিনিধি বলেন, আমরা পুরোপুরি হতাশ। বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ল্যাপটপ, এফএমসি প্রিন্টার ও টোনার কার্টিজ আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার ফলে বর্তমানে মোট শুল্কহার ২৬ শতাংশ, যা এ বছর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো একই রকম আছে। একটুও পরিবর্তিত হয়নি। এতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় সম্পূর্ণরূপে ব্যহত হবে।
বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে বিপিও পরিষেবা পেয়ে থাকেন। তাই বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির শিল্পের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। কনট্যাক্ট সেন্টারের অনেক সফটওয়্যার এখনো দেশে তৈরি হচ্ছে না, যা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ- সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং অন্যান্য সফটওয়্যার আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এই শিল্পের সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির ফলে এই শিল্পে মাত্র ৩০০ জনশক্তি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭০ হাজারেরও অধিক জনশক্তির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই শিল্পের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০২৪ সালে থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে, ভবিষ্যতে বিপিও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, ক্রেতা আকর্ষণ কমে যাবে, নতুন বিনিয়োগ ব্যাহত হবে এবং সর্বোপরি বিপিও শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সকল সেবাকে আইটিইএসের অন্তর্ভুক্তি না করা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত সামগ্রীর উপর শুল্ক না কমায় এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার না করা, ইন্টারনেট সেবার প্রসার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে।
মন্তব্য করুন