নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়ক উন্নয়ন কাজের পূর্বধলা বাজার অংশে ড্রেন নির্মাণ ছাড়াই চলছে কাজ। অপরিকল্পিত আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তা নতুন করে ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। সড়কের দুই পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রেখে এবং মূল রাস্তার ওপর প্রায় দেড় ফুট উঁচু ঢালাই দিয়ে সংস্কার কাজ করায় বিপাকে পড়ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সংস্কার কাজে তদারকিও নেই। ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী– এমন অভিযোগ রয়েছে।

নেত্রকোনা শহরের সাতপাই থেকে পূর্বধলা উপজেলার কুমারখালী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে এরই মধ্যে তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এ প্রকল্পে। প্রথম দিকে পূর্বধলা বাজার অংশে আরসিসি ঢালাই ও দুই পাশে ড্রেন (নালা) নির্মাণ ছাড়া কাজ করার প্রতিবাদে স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। এ কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়ে নতুন করে প্রাক্কলন তৈরি করে প্রস্তাব পাঠানো হলে অনুমোদিত হয়। এই নতুন প্রাক্কলন অনুযায়ী, পূর্বধলা বাজার অংশের এক কিলোমিটার রাস্তার আরসিসি ঢালাই কাজ চলমান। তবে নালা নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন জানান, প্রাক্কলনে নালা নির্মাণের কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাঁরা শুধু রাস্তা নির্মাণ করে যাচ্ছেন। এতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে পূর্বধলা বাজারবাসী। তা ছাড়া মূল রাস্তা থেকে প্রায় দেড় ফুট উঁচু ঢালাইয়ের কাজ করায় নিচে পড়ে যাচ্ছে পূর্বধলা বাজারের প্রায় ৫০০ দোকানঘর। এই আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তার দুই পাশে ১৫টির মতো সংযোগ সড়ক রয়েছে। এই রাস্তাগুলোও নিচে পড়ে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে এই সড়কে নেত্রকোনা থেকে পূর্বধলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নের দরপত্র আহ্বান করা হয়। রানা বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। পরে রানা বিল্ডার্স কাজ না করে ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। শেষ দিকে তারাও কাজ না করে ওয়াসিম এন্টারপ্রাইজ নামে আরেক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। এখন সড়কের কাজ করছে ওয়াসিম এন্টারপ্রাইজ।

পূর্বধলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বধলা থানা থেকে জামতলা পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এ জন্য রাস্তার পাশে ১৫ ইঞ্চি উঁচু ইটের গাঁথুনি দিয়ে মাঝখানে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পিলার রেখেই ইটের গাঁথুনি দেওয়া হয়েছে। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। রাস্তার দুই পাশে নালার ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার পানি দোকানে প্রবেশ করার উপক্রম। অনেক ব্যবসায়ী দোকানের সামনে ইটের গাঁথুনি দিয়ে পানি ফেরানোর চেষ্টা করছেন। এই রাস্তার দুই পাশের পানি পাশের ধলাই নদীতে নামানোর জন্য জামতলা অংশে একটি ইউ আকৃতির নালা রয়েছে। সেটি একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছ। এতে ভবিষ্যতে রাস্তার দুই পাশের পানি সরানো যাবে না।

কথা হয় পূর্বধলা বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত চন্দ্র কর, ব্যবসায়ী ইসমত আলী ফকির ও পূর্বধলা বাজারের বাসিন্দা ফয়েজ উদ্দিন ফকিরের সঙ্গে। তাঁরা জানান, পূর্বধলা সদর বাজারের এই রাস্তার দুই পাশে নালার ব্যবস্থা না রাখায় দুর্ভোগে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, কোনো প্রকৌশলীর উপস্থিতি ছাড়াই মধ্যরাতে এই রাস্তার কাজ যেনতেনভাবে করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রডের দূরত্বের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নির্দেশনা। ঠিকাদারের ইচ্ছামতো দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের রড, বালু, ইট, পাথর সুড়কি। সিমেন্ট ও বালুর অনুপাত ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না। এসব দেখার কেউ নেই। ঢালাইয়ের পাশে ইটের গাঁথুনি কোথাও কোথাও খুলে যাচ্ছে। তা ছাড়া ঢালাইয়ের পুরুত্বও ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।
ব্যবসায়ী স্বপন চন্দ্র সরকারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে রাস্তার মাটি সরিয়ে আরসিসি ঢালাই করলে দোকানগুলো নিচে পড়ত না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াসিম এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মফিদুল ইসলাম ওয়াসিমের ভাষ্য, তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গুণগতমান বজায় রেখেই রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। দিনে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার কারণে রাতে কাজ করতে হয়। প্রাক্কলনে নালা নির্মাণের নির্দেশনা ছিল না। এ কারণে নালা নির্মাণ ছাড়াই সড়কের কাজ করা হচ্ছে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, প্রাক্কলনে ড্রেনসহ আরসিসি ঢালাইয়ের পরিকল্পনা থাকলেও বরাদ্দ না বাড়ানোর কারণে নালা ছাড়াই রাস্তার কাজ চলছে। পরে নতুন প্রাক্কলনের মাধ্যমে নালা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। অফিসে জনবলের সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ কাজে যথাযথ তদারকি করা হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।