বাজেটে সংস্কার আনার এখনই উপযুক্ত সময়

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:২০
নির্বাচনের পর নতুন সরকারের মাত্র কয়েক মাস হয়েছে। বাজেটে সংস্কার আনার জন্য এই সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। দেশের অর্থনীতি নানা প্রতিকূলতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে গুণগত মানের সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা জরুরি। সেই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও ব্যাংক খাতে দুরবস্থা দূর করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। চলমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে বাজেটে সংস্কার আনা জরুরি।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) আয়োজিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
বাজেট ও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ কোটি টাকার আশপাশে। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিকীসহ অন্যান্য পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে সুদহার। কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত অর্থে মুক্ত অর্থনীতির অনুসারী না, কল্যাণকর অর্থনীতির অনুসারী। আসন্ন বাজেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন ঘটবে। সরকারের আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো মাথায় রেখে বাজেট করা হবে।
নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, বাজেটে কী হচ্ছে, না হচ্ছে এসব বিষয় সাধারণ মানুষ জানতে চায় না। তারা চায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসুক। আগামী বাজেটে এ বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজেটে যা করার আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমির খাজনা আদায়ে তহসিল অফিস আছে। আর জেলা পর্যায়ে পর্যন্ত কর কর্মকর্তা আছেন। উপজেলা পর্যায়েও মানুষের আয় বেড়েছে; কিন্তু করদাতা বাড়েনি। কর খেলাপিদের বা দুর্নীতিগ্রস্তদের বাড়তি সুযোগ দেওয়ায় সাধারণ করদাতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগামী বাজেটে বড় সংস্কার প্রয়োজন। গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। নির্বাচনের আগে সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল। তবে নির্বাচনের পর এখনই সংস্কার করার উপযুক্ত সময়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, দেশে এখনও পরোক্ষ কর অনেক বেশি। অথচ উন্নত বিশ্বে প্রত্যক্ষ কর বেশি। এতদিন এসব জায়গায় সংস্কার আনা যায়নি। এখন সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে। বছরের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি না করে বছরজুড়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বাজেট তৈরি করা হচ্ছে, পাস হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে বাজেটে অনেক বেশি সংস্কার প্রয়োজন। বাজেট প্রণয়নে সংসদীয় কমিটির সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর আদায় প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এনফোর্সমেন্ট বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির ডায়াবেটিস বলে মনে করেন তিনি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় আগামী বাজেটে সংস্কারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে ব্যবসা পরিচালনা সহজ হয়। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারলে কর দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে, যা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়িয়ে দেবে।
দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং লম্বা বাজেট বক্তৃতার সমালোচনা করেন। তিনি বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের দাবি জানান। আর মূল্যস্ফীতি কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর দাবি জানান ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
- বিষয় :
- বাজেট