- অর্থনীতি
- রিহ্যাবের নির্বাচন স্থগিত, অভিযোগ পক্ষে-বিপক্ষে
রিহ্যাবের নির্বাচন স্থগিত, অভিযোগ পক্ষে-বিপক্ষে

অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ২০২৩-২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন। আদালতের নির্দেশনায় এ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। তপশিল অনুযায়ী আগামী ৯ অক্টোবর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
প্রায় এক দশক ধরে সরাসির ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত না হওয়ায় রিহ্যাবের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। একটি পক্ষ ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ নামে একটি প্যানেল গঠন করেছে। বর্তমান পর্ষদ থেকেও ১০ জন ব্যবসায়ী প্রার্থী হয়েছেন। তপশিল অনুযায়ী গতকাল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। এর আগেই নির্বাচন বাতিলের নোটিশ দিয়েছে রিহ্যাব। ভোট স্থগিত হওয়ায় প্রার্থীদের একটি পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বর্তমান পর্ষদ নির্বাচন স্থগিত করতে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। তারা বলছে, আদালত স্থগিত করলে কারও কিছু করার থাকে না।
রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, আদালতের স্থগিতাদেশের পর গতকাল এ বিষয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রিহ্যাব পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন কার্যক্রম ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী চলমান ছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত এ নির্বাচনকার্য বিষয়ে স্থিতাবস্থায় রাখার নির্দেশনা দেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এ প্রেক্ষাপটে রিহ্যাব নির্বাচনের সব কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। পদত্যাগের বিষয়ে জানতে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সরকার তারিকুল আলমকে একাধিকবার ফোন ও খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।
রিহ্যাবের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সরকার তারিকুল আলমকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠন করে। একই সঙ্গে একজন চেয়ারম্যান ও দু’জন সদস্য নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। আদালতের স্থগিতাদেশের পর দুই বোর্ডের সবাই পদত্যাগ করেছেন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলে গত ১০ আগস্ট অভিযোগ তোলে রিহ্যাবের একটি পক্ষ। তাদের পক্ষে হ্যাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনু বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে এমন অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেন, রিহ্যাবের গঠনতন্ত্রের দুটি ধারা লঙ্ঘন করে গোপনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের ২৯ পদের বিপরীতে প্রার্থী হন ৪৮ জন ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে ঢাকার ২৬টি পরিচালক পদের বিপরীতে ৪৬ জন এবং চট্টগ্রামে তিনটি পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী হন দু’জন। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের ১০ জন নির্বাচনে প্রার্থী হন। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ নামের একটি প্যানেলের অধীনে চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ২৮ জন ব্যবসায়ী। এ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন জাপান সিটি গার্ডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা এখনও আমরা পাইনি। তবে নোটিশে লেখা হয়েছে, আদালত নির্বাচনী কার্যক্রম স্থিতাবস্থায় রাখতে বলেছেন। কিন্তু বাতিল করেননি। অথচ রিহ্যাব নোটিশ বোর্ডে বলেছে নির্বাচন বাতিল বলে প্রতীয়মান, যা আদৌ ঠিক নয়।
তিনি বলেন, ‘একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য সবাই যখন প্রস্তুত; তখন শেষ মূহূর্তে এসে নির্বাচনী কার্যক্রম কেন স্থগিত হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে আমরা যারা নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তারা আইনের আশ্রয় চাইব। আইন অনুযায়ী সামনের দিকে এগোবেন প্রার্থীরা। তা ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান কী কারণে পদত্যাগ করেছেন, সে বিষয়েও কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এখানেও অস্পষ্টতা রয়েছে।’
২০১৪ সালে ভোট ছাড়াই রিহ্যাবের সভাপতি নির্বাচিত হন শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর শামসুল আলামিন। এর পর গত তিন মেয়াদে সংগঠনটিতে কমিটি হয়েছে সমঝোতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা চার মেয়াদে সভাপতির পদে রয়েছেন আলমগীর শামসুল আলামিন।
তবে এবারের নির্বাচনে রিহ্যাবের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং চারজন সহসভাপতি প্রার্থী হননি। এ ব্যাপারে প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, আদালত স্থগিত করলে তো কারও কিছু করার নেই। তাছাড়া তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হননি। তবে নির্বাচন বোর্ড নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বলে তিনি শুনেছেন। সে কারণে হয়তো বোর্ডের চেয়ারম্যান-সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন।
নির্বাচন স্থগিত করার পেছনে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা থাকার অভিযোগের বিষয়ে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন সমকালকে বলেন, ‘একটি পক্ষ তো এ রকম বলবেই। তিনি জেনেছেন, আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তা ছাড়া স্থগিত হয়েছে বলে নির্বাচন হবে না– এমন নয়। নির্বাচন হতে পারে।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন বিভাগের মহাপরিচালক মালেকা খায়রুন্নেছা বলেন, এখনও আদালতের স্থগিত আদেশের কপি তাঁর হাতে আসেনি। পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী করণীয় ঠিক করা হবে।
মন্তব্য করুন