- অর্থনীতি
- অবৈধ সুতা-বস্ত্রের দাপটে মার খাচ্ছে দেশীয় শিল্প
এনবিআরের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিটিএমএর চিঠি
অবৈধ সুতা-বস্ত্রের দাপটে মার খাচ্ছে দেশীয় শিল্প

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা সুতা ও কাপড় খোলাবাজারে বিক্রির ঘটনা বাড়ছে। আবার আমদানি চালানে উল্লেখিত ঘোষণার তুলনায় পরিমাণে বেশি সুতা ও কাপড় আনা হচ্ছে অসত্য ঘোষণার মাধ্যমে। এর বাইরে চোরাচালানের মাধ্যমে একটা বড় পরিমাণ সুতা ও কাপড় ঢুকছে দেশের বাজারে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে আসা এসব সুতা ও কাপড় স্থানীয় পণ্যের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। ঢাকা, নারায়ণঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব সুতা ও কাপড়। এতে মার খাচ্ছে স্থানীয় চাহিদার সুতা ও বস্ত্রশিল্প।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ডলার ও গ্যাস সংকটে বস্ত্রকলগুলো এমনিতেই নাস্তানাবুদ। ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাসের প্রয়োজনীয় চাপের অভাবে উৎপাদন নেমে এসেছে সক্ষমতার অর্ধেকে। উৎপাদন বেড়েছে অথচ দাম বাড়েনি। এ পরিস্থিতির মধ্যে যতটুকু উৎপাদন হয়, তার একটা বড় অংশ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদার জোগান দেওয়া মিলগুলোতে অবিক্রীত সুতা ও কাপড়ের স্তূপ জমেছে। শুধু অবিক্রীত সুতার পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা। কী পরিমাণ বস্ত্র অবিক্রীত তা হিসাব করার চেষ্টা করছে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ।অসত্য ঘোষণা এবং চোরাচালানে দেশে আনা সুতা, বস্ত্র ও রেডিমেড ড্রেস যাতে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হস্তক্ষেপ চেয়েছে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। গত বৃহস্পতিবার এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বরাবর বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন স্বাক্ষরিত চিঠিটি পাঠানো হয়। যেসব বাজারে এসব অবৈধ সুতা ও কাপড় বিক্রি হয় সেগুলোর একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। এতে নারায়ণগঞ্জ, বাবুর হাট, আড়াই হাজার, মদনগঞ্জ, গাওছিয়া, মাধবদী, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। এসব বাজারে তল্লাশি অভিযান চালানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের পক্ষ থেকে একসময় এসব বাজারে নিয়মিত তল্লাশি পরিচালনা করা হতো।
চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখাও করছে বিটিএমএর একটি প্রতিনিধি দল। দলে নেতৃত্ব দেন বিটিএমএর স্থানীয় স্পিনি ও ইউভিং মিলস উন্নয়ন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও লিটিল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী খোরশেদ আলম। সমকালকে তিনি জানান, কোন মার্কেটে কী ধরনের অবৈধ সুতা ও কাপড় বিক্রি হয় তার বিস্তারিত তারা তুলে ধরেছেন এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে যাওয়ার আগে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছেন তারা। তবে অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, এনবিআরের চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কোনো অভিযান চালাতে পারে না তারা। খোরশেদ আলম জানান, তাঁর কারখানায় ২৫ কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত।
বিটিএমএর প্রধান নির্বাহী মনসুর আহম্মেদ সমকালকে বলেন, স্থানীয় বাজারে বছরে ৮ বিলিয়ন মিটার বস্ত্রের চাহিদা আছে। দেশীয় বস্ত্রকলগুলো এ চাহিদার শতভাগ মেটাতে সক্ষম। এতে অবৈধভাবে যেসব বস্ত্র দেশে ঢুকছে তা উদ্বৃত্ত হিসেবে বাজারকে অস্থির করে তুলছে। বিটিএমএর সদস্য কারখানা ৫১৯টি। এর মধ্যে শতভাগ স্থানীয় বাজারের জন্য সুতা তৈরি করে ২০০ কারখানা।
জানা গেছে, অবৈধ সুতা ও কাপড় বিক্রি না করার জন্য বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবর পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে বিটিএমএর পক্ষ থেকে। একই অভিযোগ এবং বাজারের তালিকা এ চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়। অবৈধ সুতা ও বস্ত্র যাতে বিক্রি করা না যায়, এ ব্যাপারে সমিতির হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিটিএমএ।
মন্তব্য করুন