সপ্তাহের শুরুতে বড় পতন শেয়ারবাজারে

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
গত সপ্তাহের দরপতনের পর দেশের শেয়ারবাজারের চলতি সপ্তাহের লেনদেনও শুরু হয়েছে বড় দরপতনে। অধিকাংশ শেয়ারের দরপতনের সঙ্গে বাজার মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। তবে আরও দরপতনে আগে যে মূল্য পাওয়া যায়, অনেকে সে দরে শেয়ার বিক্রি করায় টাকার অঙ্কে লেনদেন বেড়েছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধি পাওয়া বীমাসহ বেশ কিছু শেয়ারের দরপতন হয়েছে।
গতকাল দরপতনের শীর্ষে থাকা এমারেল্ড অয়েল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত শেয়ার। প্রায় ১০ শতাংশ হারে দর হারিয়ে শেয়ারটির দর ১২৩ টাকা ২০ পয়সায় নেমেছে। সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম অনুযায়ী গতকাল এ শেয়ারের এর চেয়ে বেশি দর হারানোর সুযোগ ছিল না। বিপুল সংখ্যক বিক্রয় আদেশের বিপরীতে এ শেয়ারটি ক্রেতাশূন্য ছিল।
এমারেল্ড অয়েলসহ গতকাল মোট ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দর ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে। এর অন্যতম হলো– মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স, ন্যাশনাল ফিড মিলস, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, আরডি ফুড, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ, ফু-ওয়াং ফুডসহ বেশ কিছু বীমা কোম্পানি।
দরপতনে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২০ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২৬৪ পয়েন্টে নেমেছে। যদিও লেনদেনের শুরুতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির ওপর ভর করে সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৯৬ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। ব্যাপক দরপতনে তা লেনদেনের শেষে সর্বোচ্চ অবস্থানের তুলনায় প্রায় ৩৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২৬২ পয়েন্টে নেমেছিল।
তবে এ অবস্থার মধ্যেও কিছু শেয়ারে থেমে নেই কারসাজি। বন্ধ, রুগ্ণ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে দর বাড়াচ্ছে কারসাজি চক্র। অনেকের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্লিপ্ততা এ জন্য প্রধানত দায়ী।
দরপতনের মধ্যেও গতকাল দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলসের শেয়ারদর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বেড়ে ১৫২ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এ শেয়ারের দর ছিল ৯২ টাকা। লোকসানি এ কোম্পানিটি ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরে ১০ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে ৫৩ টাকা করে লোকসান করেছিল।
গত হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে অর্থাৎ গত মার্চ পর্যন্ত তা পৌনে ৪২ টাকা ছাড়িয়েছে। ভালো শেয়ারগুলোর ক্রেতা না থাকলেও স্বল্প মূলধনি এ কোম্পানির ২ লাখ ১৭ হাজারের বেশি শেয়ার সোয়া ৩ কোটি টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে আড়াই গুণের বেশি শেয়ার বৃদ্ধির পরও শেয়ারদর সমন্বয় না হওয়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রে। এ কোম্পানির শেয়ারদর ৯ শতাংশ বেড়ে সাড়ে ৮৮ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। অবশ্য লেনদেনের শুরুতে দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দর ৮৯ টাকা ৩০ পয়সায়ও কেনাবেচা হয়েছিল। শুরুতে ডিএসইর পরিকল্পনা অনুযায়ী দর সংশোধন হলে গতকাল এ শেয়ারটির কেনাবেচা শুরু হতো ৩১ টাকা ৬০ পয়সায়। একেবারে শেষ মুহূর্তে ডিএসইর ত্বরিত পদক্ষেপে দর সংশোধন প্রক্রিয়া বাদ দেওয়া হয়।
লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লেনদেনের শেষ পর্যায়ে দিনের সর্বোচ্চ দর ধরে রাখতে না পারলেও এমবি ফার্মার শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরেই কেনাবেচা হয়েছে। এ শেয়ারটি সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সাড়ে ৭ শতাংশ দর বেড়ে সর্বশেষ ৮২৭ টাকা ৮০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। মাত্র তিন কার্যদিবস আগেও এ শেয়ারটি ৬৭৫ টাকায় কেনাবেচা হয়েছিল।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার ওপরে থাকা এ তিন কোম্পানির বাইরে আরও তিন কোম্পানির শেয়ারদর ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে বেড়েছে। এগুলো হলো– ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, জুট স্পিনার্স এবং শমরিতা হাসপাতাল।
খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল বীমা খাতের লেনদেন হওয়া ৫৫ কোম্পানির মধ্যে ৪৬টিরই দরপতন হয়েছে, দর বেড়েছে মাত্র চারটির। গত মাসে বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর হু হু করে বেড়েছিল। এখন এসব শেয়ারের দর নিম্নমুখী। দরবৃদ্ধির এক পর্যায়ে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬০ শতাংশ বীমা খাতে হয়েছিল, গতকাল তা ৩০ শতাংশে নেমেছে। ডিএসইতে গতকাল প্রায় ৫৩২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার
- অর্থনীতি
- দরপতন