কাঁচামাল ও পণ্য সরবরাহে উৎসে কর কমছে
ঠিকাদারদের উৎসে করেও পরিবর্তন আসতে পারে

.
মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪ | ০০:৪৮ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ | ১২:৪৬
আগামী অর্থবছরের বাজেটে উৎপাদক পর্যায়ে কাঁচামাল সরবরাহ এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রস্তুত পণ্য সরবরাহের ওপর উৎসে করহার ১ শতাংশ করে কমানো হতে পারে। ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে উৎসে করহারে এ পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন ধরে এই করহার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উৎপাদক পর্যায়ে কাঁচামাল সরবরাহে ৪ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। আগামী অর্থবছরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হতে পারে। একইভাবে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহের জন্য বিদ্যমান উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট প্রস্তাব করা হবে, যেখানে এ ঘোষণা আসতে পারে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম সমকালকে বলেন, ব্যবসায়ীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে তারা উৎসে কর কমিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকার যদি এ ক্ষেত্রে ১ বা ২ শতাংশ কর কমায়, তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক হবে। আগামী বাজেটে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসুক, সেটিই আমাদের চাওয়া। তিনি আরও বলেন, উৎসে কর কাটার পর চূড়ান্ত কর হিসাবের সময় তা সমন্বয় করার বিধান রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান লোকসান করে, তাদের কেটে নেওয়া কর ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানের কম লাভ হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সমন্বয় করতে হয়।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথাসময়ে তা হয় না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার অংশ হিসেবে এ ধরনের উৎসে কর কাটার পদ্ধতি থেকেই বের হয়ে আসা উচিত।
নতুন বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআই, এমসিসিআইসহ কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে করহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাবের পাশাপাশি যথাসময়ে সমন্বয়ের দাবি জানায়। এ প্রস্তাবের পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে– উৎসে কর চূড়ান্ত করের সঙ্গে সমন্বয়ের বিধান থাকলেও বর্তমান কর কাঠামোতে যথাসময়ে তা সম্ভব হয় না। তাছাড়া প্রযোজ্য উৎসে করহার সমন্বয় করতে হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ হারে নিট মুনাফা করতে হবে, যা খুবই কষ্টসাধ্য।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো আরও বলেছে, কভিড-পরবর্তী অবস্থা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী নানা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য ও জাহাজীকরণ খরচ বৃদ্ধি এবং দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সামলাতে ব্যবসায়ীরা যখন হিমশিম খাচ্ছেন, তখন উচ্চ হারে উৎসে কর ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন করে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অধিক হারে ঋণ করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। এভাবে প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হয়ে গেলে এর প্রভাবে সরকারের রাজস্বও কমে যাবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনাই যুক্তিযুক্ত।
এদিকে আগামী বাজেটে ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য উৎসে করহারেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমান লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত উৎসে কর কাটা হয়। ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে ৩ শতাংশ, ২ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনে ৫ শতাংশ এবং ২ কোটির বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ উৎসে কর প্রযোজ্য। নতুন বাজেটে এ ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রে একক হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ হতে পারে। তবে ছোট স্থানীয় ঠিকারদার ও ব্যবসায়ীদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে উৎসে কর কর্তনকে ন্যূনতম কর হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং তাদের আয়ের পরিমাণের বেশি না হলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচিত করা হতে পারে।
এনবিআর-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, একাধিক করহার হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে নিম্নহারে কর দিয়ে থাকেন। একক হার বাস্তবায়ন হলে এভাবে কর ফাঁকির প্রবণতা কমে আসবে। তাছাড়া ছোট ঠিকারদারদের ক্ষেত্রে উৎসে করই চূড়ান্ত হিসেবে নিষ্পতির সুযোগ থাকায় তাদের ওপরও বাড়তি চাপ তৈরি হবে না। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোট ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে এক ধাপে উৎসে কর ২ শতাংশ বাড়লে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন। তাদের সুরক্ষায় বিকল্প কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা, তা ভেবে দেখার পরামর্শ তাদের।
- বিষয় :
- বাজেট