একনেকে অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত শতাধিক প্রকল্প ফেরত
উন্নয়ন প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নে কঠোর সরকার

ফাইল ফটো
আবু হেনা মুহিব
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ১০:৩০ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ১০:৪২
উন্নয়ন প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি পুনঃপর্যালোচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রয়োজন ছিল না, কম প্রয়োজনীয় কিংবা শুধুই রাজনৈতিক কারণে নেওয়া প্রকল্প আলাদাভাবে চিহ্নিত করছে। খতিয়ে দেখছে শেষ হওয়া এবং চলমান প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ। নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই নীতি নেওয়া হচ্ছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য পাঠানো শতাধিক প্রকল্প ফেরত নেওয়া হয়েছে।
সাধারণত একনেক সভায় উত্থাপিত সব প্রকল্পই অনুমোদিত হয়। ব্যতিক্রম হিসেবে বছরে দু-একটি ফেরত দেওয়ার নজির রয়েছে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার একনেক সভা হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সর্বশেষ সভা হয় ২ জুলাই। এ হিসাবে অন্তত আটটি একনেক সভা যথাসময়ে হয়নি। এসব সভায় অনুমোদনের জন্য শতাধিক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে এগুলো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) আকারে কমিশনে পাঠানো হয়েছিল।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একনেকের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কমিশনের যে বিভাগ থেকে প্রকল্পগুলো একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল, সে বিভাগেই ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ প্রস্তাব ও বিভিন্ন প্যাকেজের ব্যয় আবারও যাচাই করতে বলা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কোনো অংশ পরিবর্তন কিংবা সংযোজন-বিয়োজন লাগলে ডিপিপি সংশোধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুনর্যাচাইয়ে যেসব প্রকল্পে ত্রুটি পাওয়া যাবে না, সেগুলো উপদেষ্টার নজরে আনার নির্দেশনা রয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প তিনি নিজে আবারও যাচাই-বাছাই করবেন। ৫০ কোটি টাকার কম বরাদ্দের প্রকল্প পরিকল্পনামন্ত্রী বা উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এসব প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তবে অবহিত করার নিয়ম রয়েছে। এখন এ ধরনের প্রকল্পও পুনর্যাচাইয়ের তালিকায় রাখা হয়েছে।
জানা যায়, পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রতিটি প্রকল্প ফের যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। মূল্যায়ন শেষে প্রয়োজনে এসব প্রকল্প ছাঁটাই করার কথাও জানান তিনি। কারণ হিসেবে উপদেষ্টা বলেছেন, এ মুহূর্তে প্রকল্পগুলো অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। অনেক প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নেওয়া। আবার কিছু প্রকল্প রাজনৈতিক প্রভাবে ও ঠিকাদারের স্বার্থে গ্রহণ করা। কিছু ‘প্রেস্টিজ’ প্রকল্পও ছিল, যেগুলো প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এসব কারণেই প্রতিটি প্রকল্প যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পরে উপদেষ্টা ব্রিফিংয়ে বলেন, কেন প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগল? সময় বেড়ে যাওয়া মানেই তো ব্যয় বৃদ্ধি। নকশা কেন বারবার পরিবর্তন করতে হবে? দুর্নীতির কথা কে না জানে! সড়কসহ বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে শোনা যায়। প্রকল্প মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এসব খতিয়ে দেখা হবে। এ মূল্যায়নের একটি প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনেও সংরক্ষণ করা হবে প্রমাণ হিসেবে, যাতে আগামীর জন্য একটি দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া যায়।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, একনেকে পাঠানোর তালিকায় তাদের বিভাগের ছয় প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলোর কোথায় কোন দুর্বলতা, তা পর্যালোচনা করছেন তারা। ফের বাছাইয়ের পরও ত্রুটি ধরা পড়লে বিপদ হতে পারে– আশঙ্কা থেকে বিশেষ সতর্ক কর্মকর্তারা। এ কর্মকর্তার ধারণা, পুনর্যাচাইয়ে প্রায় সব প্রকল্পের বরাদ্দ অর্ধেক কমে আসতে পারে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রকল্পের নকশায় সতর্ক নজর দেওয়ার ফলে যথাসময়ে শেষ হবে নির্মাণকাজ। বাস্তবায়নের মাঝপথে প্রকল্প সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। বিগত বছরগুলোতে খুব কম প্রকল্প সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন করা গেছে।
- বিষয় :
- উন্নয়ন
- অন্তর্বর্তী সরকার
- একনেক