অস্ত্রের মুখে পদত্যাগ করানো হয় এসআইবিলের এএমডিকে
আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৬
চট্টগ্রামভিত্তিক একটি বড় শিল্প গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়ায় অস্ত্রের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল গ্রুপটির দখলে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) আবু রেজা মো. ইয়াহিয়াকে। ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে চায় খাওয়ানোর দাওয়াত দিয়ে তাকে পদত্যাগ করানো হয়। একই সঙ্গে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
মঙ্গলবার সমকালকে লিখিতভাবে এ তথ্য জানান আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামভিত্তিক ওই শিল্পগোষ্ঠী যখন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দখল করে, তখন তিনি ব্যাংকটির স্টেটিউটরি পোস্ট ‘কোম্পানি সেক্রেটারি’ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেই দিনই তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অমান্য করে ৫৬ বছর বয়সে তার নিয়মিত চাকরির অবসান ঘটানো হয়। তবে তখন তাকে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয়। এরপর পাঁচ বছর তিনি ডিএমডি হিসেবে চাকরি করলে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। তার চেয়ে অনেক জুনিয়র কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার মেধার মূল্যায়ন করে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর এভাবে বঞ্চিত রাখার পর তাকে অপেক্ষাকৃত ছোট ও দুর্বল ব্যাংক এসআইবিএলে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানে বাধ্য করা হয়। তখন মাত্র একদিনের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংক ত্যাগ করে এসআইবিলে যোগদান করতে হয় তাকে।
লিখিত বক্তব্যে আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া বলেন, এসআইবিলে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ব্যাংকে বোর্ড মিটিং চলা অবস্থায় আমাকে ডিবি অফিস থেকে ফোন করা হয় এবং পরদিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে ডিবি অফিসে চা খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। যথাসময়ে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হলে সকাল থেকে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ওই শিল্প গ্রুপকে অবৈধ বিনিয়োগ প্রদানে আমি অসম্মতি জানাই কেন? এছাড়া বারবার প্রশ্ন করা হয়, ওই গ্রুপটির বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র করছি? এভাবে জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ষড়যন্ত্রের স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। আমি তাদের বারবার বলি আমি প্রফেশনাল ব্যাংকার। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে অন্য কিছুর সঙ্গে কখনোই যুক্ত ছিলাম না ও হবো না।
ডিবি কার্যালয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানসিক অত্যাচারের মাধ্যমে জেরা করা হয় ও স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তি না দিলে, গভীর রাতে তৎকালীন ডিবি প্রধানের কক্ষে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তৎকালীন ডিবি প্রধান আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং অপবাদ দেয় যে, আমি ওই গ্রুপ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকেই জামাত-শিবিরের কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। এখন সরকার উচ্ছেদে জামায়াত-বিএনপিকে সাহায্য করছি। আমাকে জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এখনই পদত্যাগ করতে হবে অথবা গ্রুপটি যেভাবে বলে সেভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু তাদের পক্ষে অবৈধ কোনো কাজ কিংবা বিনিয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানালে তখন অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে করানো হয় এবং বলা হয় পরের দিনই দেশত্যাগ করতে। চাকরি দুই বছরের চুক্তি থাকলেও এক বছরের মাথায় তখন বাধ্য হয়ে পরেরদিন পদত্যাগ পত্র জমা দেই এবং দেশত্যাগ করি। পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন বিদেশে মানবেতর জীবন যাপন করি।
তিনি জানান, এসআইবিএলে তার চাকরি দুই বছরের চুক্তি থাকলেও এক বছরের মাথায় তাকে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করে ও দেশত্যাগে বাধ্য করে।
আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া বলেন, আমি সারাজীবন দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছি। অপরদিকে সবসময় আমি ওই গ্রুপের বড় বড় অবৈধ বিনিয়োগ প্রদানে অসম্মতি জানিয়েছি ও অর্থ পাচারেরে কাজে বাঁধা দেই।
এসআইবিলের যোগদানের আগে আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে অনার্স ও মার্স্টাস শেষ করেন ১৯৮৯ সালের মে মাসে প্রবেশনারী অফিসার হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে যোগ দেন।
- বিষয় :
- পদত্যাগ