দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবাণিজ্য চালু রোববার

তামাবিল স্থলবন্দর
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০ | ০১:০৮ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর -০০০১ | ০০:০০
করোনা মহামারীর কারণে ২ মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ময়মনসিংহের শুল্কস্টেশনগুলো রোববার থেকে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সীমান্তে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে। তবে সীমান্ত হাট বন্ধই থাকছে।
গত বুধবার মেঘালয় সরকারের প্রধান সচিব এম ডট এস রাও রাজ্যের রাজনৈতিক শাখাসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, ভারতের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত নির্দেশনা মেনে রাজ্যে সীমান্ত বাণিজ্য ফের চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে রাজ্যের স্ব স্ব জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সময়সূচি নির্ধারণ করবেন।
ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলি, ছাতক, ইছামিতি ও চেলা এবং সিলেটের তামাবিল, ভোলাগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ সীমান্তের শুল্কস্টেশনের আমদানিকারকসহ শ্রমিকরা উজ্জীবিত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ৩ শুল্কবন্দরে প্রায় ৮০০ আমদানিকারক ভারতীয় কয়লা ও পাথর আমদানির সঙ্গে যুক্ত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কয়লা শুল্কস্টেশন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে। শুল্কস্টেশন চালু থাকলে কমপক্ষে ৫০ হাজার শ্রমিক এসব বন্দরে কাজ করেন। আমদানিকারক ও শ্রমিকরা আশা করছেন বন্দর চালু হওয়ায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হবে। সীমান্ত অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে ওঠবে।
বড়ছড়া শুল্কবন্দরের শ্রমিক আমির হোসেন বলেন, ২ মাসের বেশি সময় ধরে শ্রমিকরা বেকার, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সীমিতভাবে বন্দর চালু হলেও কিছু শ্রমিকের বাঁচার পথ তৈরি হবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, করোনার কারণে হঠাৎ করে আমদানি বন্ধ হওয়ায় অনেক আমদানিকারক সংকটে পড়েছেন। তারা ভারতে এলসি দিয়েছিলেন, মালামাল পাননি। আবার দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে কয়লা বা পাথর বিক্রি করেছেন, টাকা পাননি। এখন পাথরের মৌসুম সীমান্ত বাণিজ্য চালু হলে যারা পাথরের জন্য এলসি করেছেন তাদের পাথর আসবে। যেসব কয়লার ট্রাক লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছিল, তাদের কয়লা আসবে।
আমদানিকারক ও তাহিরপুর সীমান্তের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, আমি নিজেও পাথর ও কয়লার জন্য ভারতে এলসি দিয়ে রেখেছি। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সীমান্ত বাণিজ্য চালু হলেও জেলার অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কম করে হলেও ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সদস্য সচিব রাজেশ তালুকদার জানান, মেঘালয় সরকারের প্রধান সচিবের ইস্যু করা চিঠি রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে পেয়েছি আমরা। একজন প্রতিষ্ঠিত রপ্তানিকারকের সঙ্গেও শনিবার কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন তারা রপ্তানী কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তাহিরপুর কয়লা আমদানী কারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দোকার বলেন, শারীরিক দূরত্ব মেনে কার্যক্রম চালালে জীবন-জীবিকা দুটোই রক্ষা পাবে। সরকারেরও রাজস্ব পাওয়ার সুযোগ হবে।
সিলেটের তামাবিল শুল্কস্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সজিব মিয়া বলেন, পুনরায় সীমান্তবাণিজ্য চালুর জন্য ভারতের রপ্তানিকারকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুনেছি। দুই দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরাও আজকালের মধ্যে মতবিনিময় করতে পারেন।
সিলেটের কাস্টমস বিভাগের সহকারী কমিশনার আহমেদুর রেজা চৌধুরী বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য চালুর নির্দেশনার বিষয়টি আমিও জেনেছি। ভারতের সীমান্তবর্তী জেলার জেলা প্রশাসকরা এক্ষত্রে নিশ্চয়ই আরও নির্দেশনা জানাবেন।