২৩ পােশাক কারখানার পাওনা পরিশােধ করছে না মোজাইক
ফাইল ছবি
আবু হেনা মুহিব
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ | ২২:৩০
অস্ট্রেলিয়ার ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান মোজাইকের কাছে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এক রকম পথে বসার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের ২৩ কারখানা। বিভিন্ন সময় এ কারখানাগুলো থেকে প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৩ লাখ ডলার মূল্যের পোশাক নিয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এর পুরো অর্থই এখন অনাদায়ী। মূল্য পরিশোধে মোজাইক কর্তৃপক্ষ এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সুফল মিলছে না। বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই বলে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
অর্থ আদায়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার আবারও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিমপসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন সরকার নিযুক্ত বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। এতে বলা হয়, গত ৯ মার্চ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর– দুই দফায় বিজিএমইএ ১৬টি কারখানার প্রায় ১৪৯ কোটি ডলার অনাদায়ী অর্থ আদায়ে সহযোগিতা চেয়ে হাইকমিশনকে অনুরোধ জানায়। অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ওই অনাদায়ী পরিস্থিতির মধ্যেই মোজাইকের কাছে আরও ৭টি কারখানার প্রায় ৫০ লাখ ডলার পাওনার তথ্য জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। এ কারাখানাগুলোর অস্তিত্ব এবং লাখো শ্রমিকের রুটিরুজির স্বার্থে সব পাওনাদি আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। চিঠির সঙ্গে কারখানার বিস্তারিত এবং মোজাইকের সঙ্গে লেনদেন ও যোগাযোগর সব তথ্য দেওয়া হয়।
নিজের দেশের ব্র্যান্ড মোজাইকের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের অনুরোধের জবাবে কিছু দিন আগে বিজিএমইএর কাছে পাঠানো চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন বলেছে, বিষয়টি নিয়ে তারা ইতোমধ্যে ক্যানবেরায় যোগাযোগ করেছে। এতে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি মারাত্মক আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশের রপ্তানিকারকদের পাওনা পরিশোধেও একই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। পাওনা অনাদায়ী থাকলে সংশ্লিষ্ট কারখানা এবং বিজিএমইএর জন্য যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়টি স্বীকার করেছে তারা। তবে এ ধরনের বেসরকারি বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারের ভূমিকা রাখার খুব একটা সুযোগ নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছে হাইকমিশন।
মোজাইক ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য বলছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অধীনস্থ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড বন্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ ফ্যাশন সামগ্রীর খুচরা বিক্রেতা বড় গ্রুপগুলোর একটি তারা। গ্রুপের ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে– মিলারস, রকম্যানস, ননি বি, রিভারস, কেটিস, অটোগ্রাফ, ডব্লিউ. লেন, ক্রসরোডস ও বেমে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বিল অব লেডিং অর্থাৎ রপ্তানি বিল জমা দেওয়ার চার মাসের মধ্যে রপ্তানির অর্থ পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। তবে পণ্য হাতে পেলেও আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অর্থ পরিশোধ করছে না মোজাইক। এখন রপ্তানিকারকদের কাছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ সংগঠনের সদস্য কারখানাগুলোর কাছে মোজাইকের সঙ্গে লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল। এর পরই বিভিন্ন কারখানা তাদের বাজে অভিজ্ঞতার কথা জানায়।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, রপ্তানি মূল্য না পাওয়ার এরকম পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী কারখানার পথে বসার দশা হয়। অতীতে এরকম ভারতীয় লিলিপুট এবং পিককের ঘটনায় অনেক কারখানা সর্বস্বান্ত হয়েছে। অথচ কারখানার কোনো দায় নেই। এরকম অবস্থায় কোনো কারখানার একার পক্ষে কিছু করারও সুযোগ কম। এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পদক্ষেপ নেওয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশের সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারে। এতে রপ্তানি আয় আসবে, কারখানাগুলো টিকে যাবে, শ্রমিকরাও কাজ হারাবেন না।
ক্ষতিগ্রস্ত ২৩ কারখানার মধ্যে রয়েছে– বিগ বস করপোরেশন, অ্যাক্টিভ কম্পোজিট মিলস, সাভার সোয়েটার্স, পদ্মা সাটেল, আরব ফ্যাশন, সুলতানা সোয়েটার্স, ওসিস ফ্যাশন, এফএনএফ ট্রেন্ড ফ্যাশন, ফ্যাব্রিকা নিট কম্পোজিট, এনআরএন নিটিং অ্যান্ড গার্মেন্টস, স্মাগ সোয়েটার্স, ভুয়ান ওয়ার্মটেক্স, ফাইন সোয়েটার্স, হেরা সোয়েটার্স, হাইড্রোক্সাইড নিটওয়্যার, মেগা ডেনিম, মেনস ফ্যাশন, অ্যাসরোটেক্স গ্রুপ, রিয়াজ নিটওয়্যারস, ইমপ্রেস নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইল, প্রিটি সোয়েটার্স, রায়ান নিট কম্পোজিট এবং এএসটি নিটওয়্যার।
- বিষয় :
- পোশাক কারখানা