মূল্যস্ফীতি ফের দুই অঙ্কে
কোলাজ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৪
সবজির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল অক্টোবর মাসে। সাম্প্রতিক মাসগুলোত বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও টানা বৃষ্টিতে সবজির আবাদ ব্যাহত হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের দামেও লাগাম টেনে ধরা যায়নি। এর মধ্যে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক কমিয়েছে। দেশে ডলারের দর ১২০ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল আছে। এতে আমদানি ব্যয় আরও কিছুটা কমেছে। কিছু পণ্যের দর বেঁধেও দেওয়া হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতাই রয়ে গেছে। ফলে গত অক্টোবর মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমার পর গত অক্টোবরে ফের দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে মূল্যস্ফীতি। মাসটিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে যা ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এদিক মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নিয়ে গতকালই সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন, গত মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। বন্যায় পণ্য সরবরাহে বাধা ও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের কিছুটা বেতন বাড়াসহ বিভিন্ন কারণেই এটি বেড়েছে। তাছাড়া গত জুলাই মাসের পর থেকে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে অনেকটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। বেইজ ইফেক্টের কারণে গত বছরের তুলনায় এই বছর প্রতিমাসেই মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি দেখাচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, আমদানি বাড়িয়ে সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে রমজানের আগে ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট প্রত্যাহার করা এবং নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি গ্রুপ, মেঘনা, বসুন্ধরা, টিকে গ্রুপসহ অল্প কয়েকটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল, চিনি ও গম আমদানি করে। বাল্কে এসব পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আগামী দুই-তিন মাসের জন্য শুধু নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে চালের মূল্য উচ্চ পর্যায়ে, তবে এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নয়। গত বছর একই সময়ে চালের দাম এখনকার চেয়ে ৫-৬ টাকা বেশি ছিল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম কম। এ কারণেই চলের ওপর আমদানি শুল্ক শূন্য করে দেওয়ার পরও আমদানি হচ্ছে না। চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় এবার হয়তো চাল আমদানি করার ততটা প্রয়োজন পড়বে না।
মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমে আসবে– এমন আশা প্রকাশ করে গভর্নর বলেন, মুদ্রাবিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি কমতে বাধ্য। মুদ্রানীতি সংকোচন করার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, আমদানি বাড়াতে পেঁয়াজ, আলু, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের শুল্ক কমিয়েছে সরকার।
গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল। আগস্টে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়। সেপ্টেম্বরে আরও কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মাস এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত
অক্টোবর মাসে শহরের তুলনায় গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। গ্রামে এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শহরে যা ছিল ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
- বিষয় :
- মূল্যস্ফীতি