ঢাকা শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে: র‌্যাপিড

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে: র‌্যাপিড

এফইএস ও র‌্যাপিডের যৌথ সেমিনার

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২১:৪০ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২১:৪৪

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোট হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে ইইউ অঞ্চল থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউ-এর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আংশিক কার্যকর হয়েছে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভিয়েতনামের রপ্তানি বাড়ছে, কমছে বাংলাদেশের। আগামীতে এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। 

বুধবার এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। জার্মানির উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক ইবার্ট স্ট্রিপটাং (এফইএস) এবং র‌্যাপিড যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি। সভাপতিত্ব করেন র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ।  

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০২৭ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর এফটিএ শতভাগ কার্যকর হবে। তখন দেশটি ইইউতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করবে। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্কারোপ হবে।  

উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের নভেম্বর এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। উত্তরণের পরবর্তী তিন বছর বর্তমানের মতই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে। তারপরই ইইউতে রপ্তানিতে ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আশঙ্কা- ইইউ এবং অন্যান্য বাজার মিলে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি আয় হারাবে বাংলাদেশ। 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২০ সালে ইইউ-ভিয়েতনাম এফটিএ সইয়ের পর কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনামের ৭১ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ভোগ করছে। বাকি পণ্যগুলোতে বর্তমানে ৪ থেকে ৬ শতাংশর হারে শুল্কারোপ রয়েছে। এতেই ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। গত বছর ইইউতে ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের এ পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার। তবে ভিয়েতনামের রপ্তানিতে পণ্যের মধ্যে শুধু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিই ছিল মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ। পোশাকের হিস্যা ৮ শতাংশের মতো। কারণ তৈরি পোশাক এখনও শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আসেনি। গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে পোশাক পণ্যে। এর বিপরীতে অস্ত্র বাদে সব পণ্য (ইবিএ) স্কিমের আওতায় বাংলাদেশের পণ্য এখনও শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এ সুবিধায় গত বছর পর্যন্ত পোশাকের রপ্তানি ইউর মোট আমদানির ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ তৈরি পোশাকে এখনও বাংলাদেশ আধিপত্য বজায় রেখেছে। 

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় আসতে পারে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক ওই সুবিধার আওতায় থাকবে না। কারণ ইইউর তৈরি পোশাক আমদানির নির্ধারিত সীমার ওপরে আছে বাংলাদেশের পোশাকের অবস্থান। এ সুরক্ষায় নীতির আওতায় বাদ পড়বে পোশাকের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা। উৎস বিধির শর্তও জটিল হবে। তখন পোশাকে ১২ শতাংশ হারে শুল্কারোপ হবে। 

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দেশের মতো কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বাড়ছে ইইউতে। বাংলাদেশ এখনও তুলানির্ভর পোশাক উৎপাদন করে। ভিয়েতনাম কৃত্রিম তন্তুর পোশাক উৎপাদন করে। এছাড়া ইইউ এফটিএ সুবিধা কাজে লাগাতে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে ব্যবসার পরিবেশে ব্যাপক সংস্কার উন্নয়ন করেছে ভিয়েতনাম। রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কাঁচমাল উৎপাদন করছে দেশটি। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।  

এই বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত প্রকাশ করে তৈরি পোশাকের নিট ক্যাটেগরির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ভিয়েতনাম তৈরি পোশাকে বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি হুমকি হবে না। কারণ, সেখানে বস্ত্র ও পোশাক খাতে শ্রমিক সংকট আছে। এ দুই খাতে কাজ করাকে শ্রমিকেরা অসম্মানের মনে করে। ইইউ গ্রিন ডিলের শর্ত পরিপালন তাদের জন্যও কঠিন। শুল্কমুক্ত রপ্তানিতে উৎস বিধির শর্তও জটিল। 

ইআরডি সচিব সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি বলেন, ব্যবসা পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক নীতিমাল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। অবকাঠামো, লজেস্টিকস সুবিধা বাড়াতে ঋণ, প্রযুক্তিসহ সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতি আছে উন্নয়ন সহযোগীদের। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, তুলানির্ভরতা পোশাক এখনও মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশ। ভিয়েতনামে এ হার উল্টো। প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে কৃত্রিম তন্তুর পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন,  প্রতিযোগী দেশের তুলনায় উৎপাদনশীলতায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। 

আরও বক্তব্য দেন ইইউ দুতাবাসের ট্রেড কাউন্সিলর আবু সায়েদ বেলাল, বাংলাদেশে এফইএসের আবাসিক প্রতিনিধি ড. ফিলিক্স গার্ডস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আয়েশা আক্তার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের পরিচালক ড. শামীমা নাসরিন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম, বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর প্রমখ। 
 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×