ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আইএমএফের উদ্বেগ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আইএমএফের উদ্বেগ

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:২৩

প্রায় আড়াই বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। এ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধি দল বলেছে, যথাসময়ে মুদ্রানীতির সংকোচন ও এর সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট বাস্তবায়ন না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছে আইএমএফ মিশন। সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানায়।  
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে পরবর্তী কিস্তিতে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আশা করছে বাংলাদেশ। সবকিছু বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ। প্রধানত রাজস্ব আহরণ, বাজেট ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদসহ আরও কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কৌশল সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। জবাবে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে বর্তমান সরকার। ভবিষ্যতে এর সুফল পাবে বাংলাদেশ। এসব বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গেও তারা আলাদা বৈঠক করবে।    

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছি, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা পুরোপুরি না হলেও অনেকটা ফিরে এসেছে। বর্তমানে মুদ্রাবিনিময় হার আগের মতো ওঠানামা করে না। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে কিছুটা তারল্য সহায়তা লাগলেও ইসলামী ব্যাংক ভালোর দিকে ফিরে এসেছে। খারাপ অবস্থায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোও ভালো হয়ে আসবে। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো, রপ্তানিও কম নয়। মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সার্বিক আমদানি কিছুটা কম হলেও আগের চেয়ে বেড়েছে। এটা হয়তো আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে।’
তিনি জানান, প্রতিনিধি দলকে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। সার্বিকভাবে ভেবেচিন্তে এমনভাবে কার্যক্রমে নেওয়া হবে, যাতে সেগুলো আগামী সরকারও অব্যাহত রাখে। এসব বিষয়ে তারাও সম্মত হয়েছে। তারা যতগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে তার সব বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা, সেটা অন্য ব্যাপার। আশা করা
হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা সহায়তা করবে। 
চলমান ঋণ কর্মসূচির বাইরে বাড়তি ৩ বিলিয়ন ডলার চাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার পর এটি চূড়ান্ত হবে। পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের পর আগামী মার্চে আবার পর্যালোচনায় আসবে প্রতিনিধি দল। বর্তমান সরকার ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব ও অন্যান্য খাতে যে সংস্কার করতে যাচ্ছে, তাতে আরও কিছু অর্থ দরকার হবে। বিশ্বব্যাংকের কাছেও চাওয়া হয়েছে। সরকার আশা করছে, বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে আগামী জুন নাগাদ বাড়তি ৬ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, অনেক দিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে আইএমএফ মিশন উদ্বেগ জানিয়েছে। আইএমএফের পরামর্শে সুদহার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আবার বাড়তে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, অনেক আগেই মুদ্রানীতি আধুনিকায়নের পরামর্শ দেওয়া হলেও যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিনিধি দলটি দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ও মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এ ছাড়াও ব্যাংকে বেনামে শেয়ার ধারণ বন্ধ ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে প্রতিনিধি দল। 
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এরপর তিন কিস্তিতে সংস্থাটি থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে বেশ কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর-রাজস্ব সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×