ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়

ইতিবাচক ধারায়  রপ্তানি আয়

কোলাজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০৫

রাজনৈতিক অস্থিরতার ধকল অনেকটা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের রপ্তানি খাত। গত নভেম্বরে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ মাসে রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে। এর আগের তিন মাসে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল খুবই কম, মাত্র ৩ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানি আয়ের সর্বশেষ তথ্য এবং এ সম্পর্কিত বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয় ৩৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। চলতি বছরের একই মাসে হয়েছে ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে এ বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। 

বিগত সরকারের সময় রপ্তানি আয়ের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এখন সে রকম কিছু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, রপ্তানির প্রকৃত তথ্যই তুলে ধরা হচ্ছে। 

রপ্তানি আয় বাড়ার কয়েকটি কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের মধ্যেও শ্রমিক-মালিকরা উৎপাদন চালু রেখেছেন। মূলত তাদের কঠোর পরিশ্রমে রপ্তানিতে ভালো ফল এসেছে। তা ছাড়া এখন রপ্তানির ‘পিক সিজন’। সামনে খ্রিষ্টানদের বড়দিনসহ বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। এ ছাড়া বিগত সময়ের ক্রয়াদেশগুলোও এ সময় সম্পন্ন হয়েছে। এসব কারণে রপ্তানি বেড়েছে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। শিল্প এলাকায় যৌথ বাহিনী মোতায়েন থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব উদ্যোগ রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে। যদিও কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। কিছু কারখানায় সারাবছরই এসব দাবিদাওয়া নিয়ে টুকটাক ঝামেলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার মেলায় ই-টিকিট থাকবে। ঘরে বসেই টিকিট কেনা যাবে। সে জন্য কাজ চলছে। তা ছাড়া অবকাঠামোসহ বেশ কিছু নতুনত্ব থাকবে মেলায়। 

ইপিবি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয় ১ হাজার ৭৮১ কোটি ১ লাখ ডলারের। 

রপ্তানি বেশি বেড়েছে তৈরি পোশাক খাতে। নভেম্বর মাসে এ খাতে রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। মাসটিতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

নভেম্বরে অন্যান্য খাতেও রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে হিমায়িত ও তাজা মাছ রপ্তানি ১৫ শতাংশের বেশি, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রায় ১৬ শতাংশ, ওষুধশিল্পে ৫২ শতাংশের বেশি, প্লাস্টিক পণ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রিন্টিং উপকরণ, প্রকৌশল পণ্য, জাহাজ, নৌকা ও নৌযান উপকরণের রপ্তানি আয় অনেক বেড়েছে। 

তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি বছরের নভেম্বরে সার্বিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ ও কাচ ও কাচের তৈরি পণ্য রপ্তানি ৬৬ শতাংশ কমেছে।

বেশ কিছু খাতে রপ্তানি আয় বাড়লেও সার্বিকভাবে নভেম্বর মাসের রপ্তানি আয় গত অক্টোবরের চেয়ে কমই রয়ে গেছে। ইপিবির তথ্যমতে, গত অক্টোবরে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি ছিল। 

ইপিবি বলছে, গত পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৩৫৭ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জার্মানিতে মোট রপ্তানি হয়েছে ২১০ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পণ্য। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ইত্যাদি দেশ।

আরও পড়ুন

×