ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ

শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৪১ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৪৭

আরও চড়েছে মূল্যস্ফীতি। অক্টোবরের পর নভেম্বরেও সারাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি রয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় খাদ্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে শহর এলাকায়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে নভেম্বরে শহরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশের বেশি। মাসটিতে সারাদেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, সবজির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় অক্টোবর মাসে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় সবজি ও চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের দামেও লাগাম টেনে ধরা যায়নি। ডলারের দর স্থিতিশীল থাকা, কিছু খাদ্যপণ্যে শুল্ক কমানো, আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার পরও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতাই রয়ে গেছে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বাবদ মানুষের খরচের হিসাবের ভিত্তিতে প্রতি মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বিশ্লেষণ করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কত বাড়লো তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি। এটির ১২ মাসের গড় হিসাব করে তৈরি হয় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত। 

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে অনুযায়ী, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে সারাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। গ্রামে এ হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর শহরে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যে নভেম্বরে সারাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ হার গ্রামে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং শহরে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। 

গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল। আগস্টে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়। সেপ্টেম্বরে আরও কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মাস এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। 

চলতি অর্থবছরের বাজেটে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মূল্যস্ফীতি। সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে প্রসঙ্গটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই জানিয়ে একে বাজেটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে জানায় গবেষণা সংস্থাগুলো। এমনকি বাজেটের কিছু পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতির যে হিসাবটি পাওয়া যায় তাতে সে আশঙ্কার প্রতিফলনও ঘটে। ওই অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা গত ১৩ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। সেই অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।

গত অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার অনেকে বেশি। ওই অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে বেধে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের। বাজেট ঘোষণার সময় তা ছিল আরও কম, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। সে হিসাবে, টানা প্রায় আড়াই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক অর্থবছর ধরেই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল বাজেটে। তবে বাস্তবতার আলোকে সে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনা হচ্ছে। গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইছে সরকার।

আরও পড়ুন

×