নোভারটিসের মালিকানায় আসছে রেডিয়েন্ট ফার্মা

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিসের বাংলাদেশে থাকা কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ার দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস কিনে নিচ্ছে। এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেড (এনবিএল)। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হবে। এনবিএলের অধিকাংশ মালিকানা রেডিয়েন্টের কাছে স্থানান্তরের মাধ্যমে নোভারটিসের লক্ষ্য বর্তমান আইনি সত্তার মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের বিশ্বমানের ব্র্যান্ডগুলোর সরবরাহ রোগীদের কাছে অব্যাহত রাখা।
গতকাল বৃহস্পতিবার নোভারটিস বাংলাদেশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোম্পানিটি কত দামে তাদের শেয়ার বিক্রির চুক্তি করেছে, তা প্রকাশ করেনি। রেডিয়েন্ট ফার্মাও এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। নোভারটিস বাংলাদেশ ও রেডিয়েন্ট ফার্মা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯৭৩ সাল থেকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি নোভারটিস বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশে এনবিএলের মাধ্যমে ব্যবসার ধারাবাহিকতা ও উদ্ভাবনী ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতে অঙ্গীকারবদ্ধ নোভারটিস। এ ছাড়া এনবিএলের অধীনে থাকা সব স্থায়ী কর্মীকে কমপক্ষে তিন বছর একই সুযোগ-সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রেডিয়েন্ট। এ হস্তান্তরের মাধ্যমে কর্মীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

গতকাল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেলা ১১টায় শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণা দেওয়া হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন নোভারটিসের হেড এশিয়া অ্যাসপায়রিং মার্কেটস কেভিন জু ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সিনা ইবনে জামালী। এ সময় দুই প্রতিষ্ঠানেরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নোভারটিসের হেড এশিয়া অ্যাসপায়রিং মার্কেটস কেভিন জু বলেন, ‘গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এনবিএলে আমাদের শেয়ার শীর্ষস্থানীয় একটি দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমাদের উদ্ভাবনী ওষুধগুলোর মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি আমরা বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন ও তাদের সুদীর্ঘ জীবন অর্জনে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। উপরন্তু আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের কর্মীদের প্রতি ন্যায্য আচরণ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় রেডিয়েন্টকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’

রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী তাঁর বক্তব্যে রেডিয়েন্ট ও নোভারটিসের মধ্যে নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের দিক তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, এ অংশীদারিত্ব দেশের মানুষের জন্য নোভারটিসের উদ্ভাবনী পণ্য সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি নোভারটিসের পূর্ববর্তী কোম্পানি সিবা-গেইগি এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে নোভারটিসের উল্লেখযোগ্য অবদানের প্রশংসা করেন। এ শেয়ার হস্তান্তর উভয় প্রতিষ্ঠান এবং বৃহত্তর পরিসরে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন তিনি।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। রেডিয়েন্ট ফার্মার সাড়ে ৬ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পোর্টফোলিওতে শতাধিক নিবন্ধিত ব্র্যান্ড এবং ১২টি আন্তর্জাতিক অংশীদার রয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই মালিকানা স্থানান্তর দীর্ঘমেয়াদে উভয় প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
এ বিষয়ে ডিসক্লেইমার বা স্বচ্ছতার ঘোষণায় নোভারটিস বাংলাদেশ জানিয়েছে, ‘আমাদের বর্তমান বিশ্বাস ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে এবং জানা-অজানা নানা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সাপেক্ষে এ ধরনের বিবৃতি তৈরি করা হয়। অনুমানগুলো ভুল প্রমাণিত হলে অথবা উল্লিখিত ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তার কোনো কিছু ঘটলে, প্রকৃত পরিস্থিতি সেই বিবৃতি থেকে অনেকটাই ভিন্ন হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত হস্তান্তর প্রক্রিয়া প্রত্যাশিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন হবে কিনা বা আদৌ সম্পন্ন হবে কিনা, তার নিশ্চয়তা প্রদান করে না। এ ছাড়া ওই হস্তান্তর প্রক্রিয়া থেকে প্রত্যাশিত সুবিধাগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বা আদৌ অর্জিত হবে কিনা, তাও নিশ্চিত করা যাবে না। ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আমাদের প্রত্যাশাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত হতে পারে। বর্তমান তারিখ ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে উল্লিখিত তথ্যগুলো প্রদান করেছে নোভারটিস। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি অথবা নতুন তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ভবিষ্যৎমুখী বিবৃতিগুলো আপডেট করার কোনো দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তায় না।’