ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

করছাড়ের কারণে রাজস্ব কমছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

করছাড়ের কারণে রাজস্ব কমছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯:০৭

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেছেন, দেশের জনগণকে স্বস্তি দিতে ব্যাপকভাবে করছাড় দেওয়া হচ্ছে। মানুষ ভ্যাট কমানোর সুফল পাচ্ছে। তবে এতে রাজস্ব আদায় কমেছে। বাজার পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসলে আবারও ভ্যাট নেওয়া হবে। 

সোমবার জাতীয় ভ্যাট দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করছাড় কমানোর বিকল্প নেই। কাউকে করছাড় দেওয়া হলো, কাউকে দেওয়া হলো না- এটা এক ধরনের বৈষম্য। যদিও জনস্বার্থেই করছাড় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে অতিরিক্ত ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে এটা যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। করছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। 

তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে কোনও পণ্যের ওপর কেজিতে কতটা কর কমানো যেতে পারে, তার একটি ধারণাও দিয়েছে এনবিআর। কিন্তু সরকার আমদানি পর্যায়ে কর অব্যাহতি দিলেও বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম প্রত্যাশিত মাত্রায় কমেনি। তবে অনিয়ম ক্রমাগত সহ্য করতে থাকলে অনিয়ম বাড়বে। এ বিষয়ে কাউকে না কাউকে প্রতিবাদ জানাতে হবে।

আব্দুর রহমান খান বলেন, সিঙ্গেল রেটে ভ্যাট নির্ধারণ করলে ভালো হয়। তাতে লিকেজ বা ফাঁকি অনেক কমে যায়। এটা বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হয়। অবশ্যই সিঙ্গেল রেটে ভ্যাট নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এটা করা হবে। যেসব জায়গায় ছাড় দেওয়া রয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নিত্যপণ্য চাল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, ডিম ভোজ্যতেল ও খেঁজুরের ওপর করছাড় দেওয়া দেওয়া হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর আদায়ে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভ্যাট আদায় বাড়বে। কিছু পণ্য আছে ধারণা করা হয়, যেগুলো থেকে যথাযথ ভ্যাট পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে এক কোটি ১০ লাখ নিবন্ধিত করদাতা রয়েছে। সেই তুলনায় ভ্যাট নিবন্ধিত সংখ্যা অনেক কম। ভ্যাট নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা মাত্র ৫ লাখের কিছু বেশি। 

করদাতাদের ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ঘরে বসেই ভ্যাট নিবন্ধন, ভ্যাট পরিশোধ ও সহজেই ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া যায়। অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিলে অফিসে হার্ডকপি জমা দেওয়া লাগবে না। অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে হাতে কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত করনেট বাড়াতে হবে। যারা ভ্যাট রিটার্ন দেন তাদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে, তাদেরকে নেটের আওতায় আনা হবে। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে দ্বারে দ্বারে যাব এনবিআর। ভ্যাট নেটের পরিধি বাড়াতে পারলে বাকি ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা যাবে। 

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অত্যন্ত সততার সঙ্গে করদাতাদের সেবা দিতে হবে। করদাতারা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন তাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর জানায়, চলতি বছরে ভ্যাট সিস্টেমকে সামগ্রিকভাবে অনলাইন ভিত্তিক করে ঘরে বসে সব ভ্যাট সেবা প্রদানের জন্য একটি রোবাস্ট ভ্যাট সিস্টেম নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সারাদেশের ছাত্র-জনতা অংশ নিয়ে যেমন গণতান্ত্রিক মুক্তি নিশ্চিত করেছে, তেমনি দেশের জনগণ একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তিও নিশ্চিত করবে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৩ সাল থেকে ১০ ডিসেম্বর ‘ভ্যাট দিবস’ এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর ‘ভ্যাট সপ্তাহ’ উদযাপন করা হচ্ছে। ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবারের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ভ্যাট দেব জনে জনে, অংশ নেব উন্নয়নে’। এ শ্লোগানে মূলত ভ্যাট প্রদানে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরেও একইভাবে ‘ভ্যাট দিবস’ এবং ‘ভ্যাট সপ্তাহ’ উদযাপন করা হচ্ছে।

এ সময় এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

×