ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা
কর ছাড়ের সুবিধা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৪
কর আহরণ না বাড়ালে দেশ বিপদে পড়বে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, শিল্পে সুরক্ষা দেওয়ার দিন এখন আর নেই। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণের জন্য কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভ্যাট দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত না বাড়ালে বিপদে পড়তে হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বলে, তোমাদের এতো লোক কিন্তু ভ্যাট এতো কম কেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসা করার জন্য একটু অব্যাহতি দেন। এভাবে নানা যুক্তি তুলে ধরেন তারা। মানে শিশুকে লালন-পালন করা মতো।
বিভিন্ন খাতে কর কমিয়ে ও প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘৫০ বছর ধরে বহু শিশুকে (শিল্পকে) লালন করেছি, কর অব্যাহতি দিয়ে, প্রণোদনা দিয়ে। আর কতকাল শিশুকে লালন করব? কিন্তু সেসব শিল্প তো এখনও শিশুই রয়ে গেছে। শিল্প শারীরিক দিক থেকে বড় হয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলেন এখনও সুরক্ষা দিতে। এই সুরক্ষার দিন চলে গেছে। ২০২৬ সালে এসে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণ হওয়ার জন্য এসব কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
করদাতাদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কর আদায়ের সময় বন্ধুসুলভ হবেন। জোর করে আদায় করবেন না। যদি করদাতাদের অসুবিধা হয় শুনবেন, যথাসম্ভব কমপ্লায়েন্স মেনে তাদের সহায়তা করবেন। বিশেষভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বিষয় সরকার বিবেচনা করবে।
সেমিনারে অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। এ নিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে সবসময়ই কথা শুনতে হয়। বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে হয় ঋণ নিয়ে। রাজস্ব কমে গেলে ঋণ বেড়ে যাবে। অনেক সময় আয় দেখে ব্যয় কমাতে হয়। কিন্তু এতে উন্নয়ন কাজ কমে যায়। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে রাজস্ব বাড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীরাও বলে যে, ভ্যাট আদায় বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। নিবন্ধিত ভ্যাটদাতার সংখ্যা এখন ৫ লাখের কিছু বেশি। এই সংখ্যা ২০-২৫ লাখ করা সম্ভব। ভ্যাটের হার ৯ শতাংশ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কখনও বলিনি ৯ শতাংশ করা হবে।’
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ইপিজেড বা অন্যান্য জায়গায় যারা ব্যবসা শুরু করে, স্টার্টআপ আছে তাদের জন্য দুই-তিন বছর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া যায় কিনা তা এনবিআর দেখতে পারে।
মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর আমূল বদলে গেছে রাজস্ব প্রশাসনের চিত্র। রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে বড় সংস্কারের পথে হাঁটছে এনবিআর। ৫ আগস্টের পর মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৯৪টি নিরীক্ষা শেষ করে ১৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার মূসক ফাঁকি উদঘাটন করেছে। আদায় করেছে ৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
- বিষয় :
- ভ্যাট