ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

ঋণ পুনঃতপশিল নীতিমালায় কঠোরতা চায় আইএমএফ

ব্যাংক খাতের দুরবস্থা কাটানোর বিষয়ে আলোচনা

ঋণ পুনঃতপশিল নীতিমালায় কঠোরতা চায় আইএমএফ

লোগো

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৮

ঋণ পুনঃতপশিলেও আগের মতো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কোনো খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়মিত না দেখিয়ে গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার অন্তত তিন মাস পর নিয়মিত দেখানোর বিধান করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া ডাউনপেমেন্ট ও অনেক বেশি মেয়াদ দিয়ে ব্যাপক শিথিলতা এনে ২০২২ সালে জারি করা পুনঃতপশিল নীতিমালা সংশোধনীর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সংস্থাটির সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আর্থিক খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনায় একটি টিম দেশে এসেছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগসহ (ইআরডি) বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছে।
এই ঋণ কর্মসূচি চলাকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এরই মধ্যে আর্থিক খাত সংস্থারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে নতুন সরকার। অন্যদিকে, সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ ছিল খেলাপি।
জানা গেছে, গতকাল সংস্থাটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি সেশনে আর্থিক খাত পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এসব ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ জালিয়াতি বন্ধে কঠোরতা, আগের ঋণ উদ্ধারে সম্পদ জব্দ, পাচার করা অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এস আলম, বসুন্ধরা, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এসব ক্ষেত্রে আইএমএফের সহায়তার বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে আসে।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ বের করার বিষয়টি বৈঠকে আলোচনায় আসে। গভর্নর জানিয়েছেন, এখন আর কোনো খেলাপি ঋণ আড়াল করা হচ্ছে না। যে কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতের প্রকৃত স্বাস্থ্য দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ আড়াল করতে দেওয়া বিভিন্ন শিথিলতা তুলে নেওয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাব করার ক্ষেত্রে ছয় মাস অতিরিক্ত সময় দেওয়ার যে বিধান ছিল, এরই মধ্যে তা তিন মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগামী মার্চ থেকে কিস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই মেয়াদোত্তীর্ণ বলে হিসাব হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালাকে ইতিবাচক বলেছে আইএমএফ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের সঙ্গে সঙ্গে ওই ঋণটা নিয়মিত দেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করা হচ্ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পুনঃতপশিলের পর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার তিন মাস পর নিয়মিত দেখানো হয়। কেননা, পুনঃতপশিল করা ঋণ আদৌ পরিশোধ করবে কিনা, তা নিশ্চিত না। যে কারণে পুনঃতপশিলসহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে অনাদায়ী থাকা ঋণকে ‘ডিসট্রেস অ্যাসেট’ বা চাপযুক্ত ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
২০২২ সালের জুলাইয়ে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ঋণ পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠন নীতিমালায় ব্যাপক শিথিলতা এনে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে একটি ঋণ পুনঃতপশিলে যেখানে ডাউনপেমেন্ট বাবদ ১০ থেকে ৩০ শতাংশ জমা দিতে হতো। তবে রউফ তালুকদারের নীতিমালায় ডাউনপেমেন্টের হার কয়েক গুণ কমিয়ে আড়াই থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশে নামানো হয়। আগের নিয়মে একটি ঋণ সর্বোচ্চ তিন দফায় ৬০ মাসের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ ছিল। তবে নতুন নিয়মে চার দফায় সর্বোচ্চ ২৯ বছরের জন্য পুনঃতপশিল করা যাবে। এ ছাড়া একটি ঋণ পুনঃতপশিলের পর আগে যেখানে নতুন ঋণ নিতে বকেয়া স্থিতির অন্তত ১৫ শতাংশ জমা দেওয়ার বিধান ছিল, নতুন নিয়মে মাত্র ৩ শতাংশ দিলেই চলবে। সব ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ যত বেশি, তত ছাড় দেওয়া হয়। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতেই এসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এসব নীতিমালা আবার আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

×