১৫ বছরে আইটি খাতের বহু টাকা অন্যত্র গেছে: অর্থ উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ২০:৩৩
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গত ১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে বহু টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু সেই অর্থ আইটিতে খরচ হয়নি। এসব অর্থ চলে গেছে অন্য জায়গায়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) উদ্বোধন করেন। এর অধীনে সাতটি কাস্টমস এজেন্সিকে একক প্ল্যাটফর্মে আনা হয়েছে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ সহজতর করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকার বলেছিল, দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করে ফেলেছে। উন্নতির মহাসড়কে নিয়ে গেছে। এ ধরনের অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। আইটি খাতে অনেক কাজ করতে হবে। কারণ, গত ১৫ বছরে আইটি খাতে বহু টাকা বরাদ্দ হলেও সেই অর্থ আইটিতে খরচ হয়নি। চলে গেছে অন্য জায়গায়।
তিনি বলেন, সেবাপ্রত্যাশীদের সেবা পেতে এক অফিস থেকে অন্য অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এনএসডব্লিউ চালু হওয়ায় তাদের হয়রানি কমবে। আগামী মার্চ থেকে আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনে যেতে চায় সরকার। এ জন্য ডিজিটাইজেশন প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখনও অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। ওপরে থেকে নিচে কিংবা নিচের থেকে ওপরে (এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়) ফাইল যেতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। একটা চিঠিতে সই করার পর দেখা যায়, সেটি আরেকটা সইয়ের জন্য ঘুরে আসতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। এসব জটিলতা দূর করতে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা খুবই দরকার। সত্যিকার অর্থে পেপারলেস পদ্ধতিতে যেতে হবে।
এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, আমাদের ১৯টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রায় ১১০ ধরনের সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে। ব্যবসায়ীর সব লাগে না। এখন যে ব্যবসায়ীর যেটা লাগবে, তিনি এই সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে তা সহজে নিতে পারবেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য-সংক্রান্ত যে কোনো কাজে এই সংস্থাগুলোর কাগুজে সনদ নেবে না এনবিআর। সব জমা দিতে হবে অনলাইনে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এনএসডব্লিউর আওতায় আসা সংস্থাগুলো হলো– পরিবেশ অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অথরিটি ফর কেমিক্যাল উইপনস কনভেনশন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
এসব সংস্থা ইতোমধ্যে তাদের অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে আমদানি ও রপ্তানি-সংক্রান্ত সব ধরনের শংসাপত্র, লাইসেন্স এবং পারমিট পাবেন। কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য সশরীরে অফিসে যেতে হবে না।
এনবিআর জানিয়েছে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকি ১২টি সংস্থাকে এনএসডব্লিউর আওতায় আনা হবে।
এনএসডব্লিউর সুবিধা
২০১৭ সালে এনবিআর ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ প্রকল্প চালু করে। এর উদ্দেশ্য হলো, কাস্টমস-সংক্রান্ত ১৯টি সংস্থার কার্যক্রমকে একত্রিত করা। এটি কাগজপত্রের ঝামেলা দূর করে এবং সময় বাঁচিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম আরও সহজ করে তুলবে।
এ প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সম্পর্কিত পারমিট, লাইসেন্স, শংসাপত্র এবং শুল্ক ঘোষণার প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করবে। এটি ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র, সময় এবং খরচ কমাবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নির্মিত এ প্ল্যাটফর্ম কর ফাঁকি রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়ে শংসাপত্র, লাইসেন্স ও পারমিট নিতে পারবেন। জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইস্যু করা প্রশংসাপত্রের মাধ্যমে পণ্য দ্রুত খালাস করা সম্ভব হবে।
সিস্টেমটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থার জন্য একটি ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য উইন্ডো সরবরাহ করবে।
- বিষয় :
- অর্থ উপদেষ্টা