ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

শুল্ক-করহার বাড়ানো, শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি

শুল্ক-করহার বাড়ানো, শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:৪৫

শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পের গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

শনিবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক উপস্থাপনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে সংগঠনটির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতির ১১টি বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর কর্মপরিকল্পনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তাসকীন আহমেদ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংকটময় মুহূর্ত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মূল কারণ হলো—সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতাসহ উচ্চ সুদহার। তা ছাড়া বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিএসএমই খাতে ঋণপ্রাপ্তি হলেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়, এটি বাড়াতে হবে এবং এই খাতের উদ্যোক্তারা যেন সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ পায়, তা নিশ্চিতকরণের কোনও বিকল্প নেই। কারণ আমাদের এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।

তিনি জানান, এবছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার উপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করবে।

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার দ্রুত এ সংস্কার কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন করবে, বেসরকারিখাতের পক্ষ হতে এটি আমরা প্রত্যাশা করছি। ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও আশাবাদী হবেন এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

নীতির ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সহায়ক কর কাঠামো প্রাপ্তি সাপেক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হন, সেক্ষেত্রে হঠাৎ মাঝপথে কর কিংবা শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা মোটেই কাম্য নয়, ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।

এলডিসি উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিলাম। তবে কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা পরবর্তী পট-পরিবর্তনসহ আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের ফলে এলডিসি উত্তরণ মোকাবিলার প্রস্তুতি বেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা কতটা প্রস্তুত তা নির্ধারণে সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মাঝে বিশদ আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি উত্তরণ হলে এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারিখাতকে সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের জিডিপিতে করের অবদান বেশ কম। এরূপ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনের কোনও বিকল্প নেই।

এসময় ডিসিসিআই সভাপতি সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করা এবং এডিপি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার পাশাপাশি সময়মতো প্রকল্প সমাপ্তিতে নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।          

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

×