ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

এনবিআর বিলুপ্ত

কলম বিরতিতে সারাদেশে রাজস্ব কর্মকাণ্ড প্রায় অচল

কলম বিরতিতে সারাদেশে রাজস্ব কর্মকাণ্ড প্রায় অচল

ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫ | ১৯:২৬ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ | ২৩:০১

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা- এই দুই ভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। মধ্যরাতে জারি করা এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সারাদেশে একযোগে কলম বিরতি পালন করছেন এনবিআরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেন তারা। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম এ কলম বিরতি কর্মসূচির বাইরে ছিল।

এর আগে নতুন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে তিন কর্মদিবস কলম বিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। 

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা যথারীতি নিজ নিজ দপ্তরে এসেছেন। তবে তারা কোনো দাপ্তরিক কাজ করেননি। রাজস্ব ভবনের প্রায় সবগুলো ফ্লোর ফাঁকা দেখা গেছে। এনবিআরের ভবিষ্যৎ কী হবে, পদায়ন কীভাবে হবে, তারা কে কার নিয়ন্ত্রণে যেতে হবে- এসব নিয়েই আলোচনা ছিল নিজেদের মধ্যে। 

তবে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনবিআরের কর, শুল্ক ও মূসক নীতি বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। 

এদিকে কলম বিরতির ঘোষণার কারণে সেবাপ্রত্যাশী গ্রাহকেরও তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি এনবিআরে। ফলে দুপুর ১টার পর তারা কর্মে ফিরলেও বুধবার এক প্রকার নিষ্প্রাণ ছিল রাজস্ব ভবন।  

তবে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় এনবিআরের অধীন প্রতিটি কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসেও কলম বিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যথারীতি বৃহস্পতি ও শনিবার একইভাবে এই কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট) সাধন কুমার কুণ্ডু বলেন, একযোগে দেশের সব অফিসে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি পালন করছে। এই আন্দোলন একটা প্রতীকী মেসেজ- সরকারের কাছে কর্মকর্তাদের কিছু বলার আছে। দেশের ও দশের ভালোর জন্য সবার অংশগ্রহণ এবং মতামতের ভিত্তিতে যে উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটা সবাই মেনে নেবে। এ ক্ষেত্রে সবার দাবি, এই অধ্যাদেশ বাতিল করে অংশীজনদের নিয়ে নতুন করে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে। 
আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ৮ ঘণ্টার বদলে ৩ ঘণ্টা কাজ করলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ হবে না। এটাই স্বাভাবিক।

উপকর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহীও জানিয়েছেন, সারাদেশে তাদের এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

তবে এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে রাজস্ব বোর্ডের এক সদস্য বলেন, এনবিআরের কোথাও কর্মবিরতি চলছে না। বিশেষ করে তিনি তার অধীনের অফিসারদের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন। 

তার ভাষ্য, কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ অন্যদের ভিন্ন দিকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। নতুন অধ্যাদেশে কর্মকর্তাদের স্বার্থে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। কর, কাস্টম ও ভ্যাট- এই তিন বিভাগে পদায়ন ও পদন্নোতির বিষয়ে আইন রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সবকিছু হবে। অনেকেই অধ্যাদেশ ভালোভাবে না বুঝেই আন্দোলন করছেন। বিষয়গুলো স্পষ্ট হলে অচিরেই আন্দোলন থেমে যাবে। 

এদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের স্বার্থে রাজস্ব ব্যবস্থার একটি যুগোপযোগী ও টেকসই সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজন। 

রাজস্ব সেবা বিঘ্ন হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে এতে বলা হয়, করদাতা ও সেবা প্রার্থীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য ঐক্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কর ও শুল্ক ক্যাডারের দুই সংগঠন শুরুতে থেকেই অনড় ছিল। তবে এখন দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতারা পিছু হটেন। তারা নিজেদের পদোন্নতির সুযোগ নিয়ে চুপসে যান বলে সংগঠনের অন্য নেতাদের অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির পদে থাকা অনেক কর্মকর্তা গতকাল পদত্যাগ করেছেন। 

জানা গেছে, ৫১ সদস্যের কর ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ১৮ জন পদত্যাগ করেছেন। আর কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের ২১ সদস্যের কমিটি হওয়ার পরেই ৫ জন কর্মকর্তা অবসরে চলে যান। বাকি ১৬ জনের মধ্যে ১২ জনই পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে  সমিতির সহসভাপতি, মহাসচিব, ট্রেজারার, যুগ্ম মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন।

সোমবার গভীর রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের ২৫ দিন পর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এই অধ্যাদেশ কার্যকর করবে।

আরও পড়ুন

×