কাপড় প্রসাধনী ও জুতার দোকানে সবজি

মিরাজ শামস
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২২:০১
করোনা মহামারিতে হিমশিম খাচ্ছেন ছোট দোকানিরা। দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ থাকায় এতদিন সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন। সাধারণ ছুটির পর আস্তে আস্তে দোকানপাট খুলতে শুরু করলেও বিক্রিবাট্টা নেই বললেই চলে। এমন বেকায়দা পরিস্থিতিতে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকে টিকে থাকার লড়াইয়ে বাধ্য হয়ে ব্যবসার ধরন বদলেছেন। কেউবা এক পণ্যের দোকানে এখন অন্য পণ্য তুলেছেন। এ প্রবণতা রাজধানীর শুধু এক এলাকার দোকানিদের মধ্যে নয়, বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। কাপড়, প্রসাধনী ও জুতার ছোট দোকানগুলোতে সবজি কিংবা মুদি পণ্যের মতো দৈনন্দিন চাহিদা বেশি এমন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এমনটি আগে কখনও চোখে পড়েনি।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনার কারণে পাড়া-মহল্লার অনেক ছোট দোকানি তাদের ব্যবসার ধরন বদলেছেন। কাপড়, প্রসাধনী ও জুতা বিক্রি কমে যাওয়ায় সেসব দোকানে চাল ও ডালসহ মুদি পণ্য বিক্রি করছেন অনেকে। কোনো কোনো দোকানি সবজি বা চা-পানও বিক্রি করছেন। শুধু ছোট দোকান নয়, কিছু সুপারশপেও পণ্য বিক্রিতে কিছুটা বদল এসেছে। আউটলেটের মধ্যে খাবার বিক্রি হতে দেখা গেছে। তোলা হয়েছে বিভিন্ন নতুন পণ্য।
মিরপুর-১ নম্বরে হাবুলের পুকুর পাড়ে ইয়মিন শু অ্যান্ড কসমেটিক্সের দোকানি মো. মুর্শিদ জানান, তিনি তিন বছর ধরে প্রসাধনী ও জুতা বিক্রি করছেন। করোনায় দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ থাকায় গ্রামে ফিরে যান। এক সময় ভেবেছেন সেখানেই থেকে যাবেন। তবে আয়ের কোনো পথ বের না হওয়ায় আবার ঢাকায় ফেরেন। সেই সময়ও নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য দোকান বন্ধ রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। তখন জুতা ও প্রসাধনী সরিয়ে রেখে সবজি তুলে দোকান চালু করেন। সবজির বিক্রি দিয়ে কোনো রকমে ব্যয় নির্বাহ করেন। এখন পর্যন্ত প্রসাধনী ও জুতার বিক্রি কম। পরে মুদি ও গৃহস্থালি আরও কিছু পণ্য বিক্রি শুরু করেন। নতুন এ কৌশলে সাড়ে ৯ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিয়ে এখন কোনো রকমে টিকে আছেন।
একই স্থানে দুই দোকান পরে মোশারেফ হোসেন নামে এক কাপড়ের দোকানিও একই কৌশল নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সবজি বিক্রি করেই মূলত দোকান ও সংসারের ব্যয় মেটাচ্ছেন। আক্ষেপের সুরে জানান করোনায় ঈদুল ফিতরের সময়েও কোনো কাপড় বিক্রি করতে পারেননি। আগের আনা কাপড়গুলো নষ্ট হওয়ার পথে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পোশাক বিক্রি নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে মুদি পণ্য ও সবজি বিক্রি বাড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।
মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক সংলগ্ন পীরেরবাগে জুতার দোকানে এখন চা-পান বিক্রি করছেন মো. জাফর। তিনি জানান, তার দোকানটি বেশ চালুই ছিল। কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বেশ গুছিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে বন্ধ থাকায় অনেক টাকার জুতা নষ্ট হয়েছে। এখনও বিক্রি কম থাকায় বাধ্য হয়ে চা-পান বিক্রির ব্যবস্থা করছেন। কোনো উপায় না পেয়ে টিকে থাকতে বিকল্প এ পথে হাঁটতে হয়েছে তাকে।
শুধু ছোট এসব দোকানি নয়, দেশের সবচেয়ে বড় সুপারশপ স্বপ্নের আউটলেটেও পণ্য বিক্রিতে এসেছে পরিবর্তন। করোনায় চাহিদা বাড়ায় নতুন ধরনের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি নিত্যপণ্যের পাশাপাশি খাবার বিক্রির ব্যবস্থাও করা হয়েছে কোনো কোনো আউটলেটে। অন্যদিকে করোনার বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে করোনার এ দুঃসময়ে একেবারে রাজধানী ছেড়েছেন অনেকে। জীবিকার তাগিদে বিকল্প বেছে নিয়েছেন। এমন একজন নিউমার্কেটের কাপড়ের ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম। তিনি এখন মৎস্য খামারি। তিনি জানান, করোনার কারণে কয়েক মাস দোকান বন্ধ থাকায় বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হয়েছে তাকে। মহামারির মধ্যে দুই ঈদে ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। অথচ সারাবছরের সমপরিমাণ বিক্রি হয় শুধু দুই ঈদে। ঈদের পরেও তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। এখন কর্মচারীর বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে বিকল্প ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি। পটুয়াখালীর বাউফলে গ্রামের বাড়িতে বায়োফ্লেক পদ্ধতিতে মাচ চাষে বিনিয়োগ করেছেন। শুরুতেই কাপড়ের ব্যবসার চেয়ে মাছ চাষ বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বড় পরিসরে মাছের খামার করার চিন্তাভাবনা করছেন।
- বিষয় :
- করোনা মহামারি
- ব্যবসা-বাণিজ্য
- ব্যবসায় মন্দা