পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফ্রেমিংহ্যাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ড. মোমেন বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এই অর্থনীতিবিদের জন্ম ১৯৪৭ সালে সিলেটে

সমকাল :এক বছর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার সময় আপনি এক সাক্ষাৎকারে সমকালকেই দুটি অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলেন- অর্থনৈতিক কূটনীতি ও জনকূটনীতি। এক বছরে কতটুকু পেরেছেন?

এ কে আব্দুল মোমেন :অর্থনৈতিক কূটনীতি অগ্রাধিকারে রাখার মূল কারণ ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার আগের দুই মেয়াদে আমাদের জাতীয় অগ্রগতির জন্য বেশ কিছু রূপকল্প, রূপরেখা ও রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। ২০২১, ২০৩০, ২০৪১। এগুলো অর্জন করতে গেলে আমাদের উন্নয়নের গতি আরও বাড়াতে হবে। আমাদের প্রয়োজন আরও বিনিয়োগ, আরও রপ্তানি বৃদ্ধি। প্রয়োজন নতুন বাজার, রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণ। এখন আমরা শুধু মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি করি। এর পরিধি বাড়াতে হবে। জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। যাতে করে বিদেশে তারা ভালো কাজ, ভালো বেতন পায়। দায়িত্ব নিয়ে আমি এসব বিষয়ে জোর দিতে চেয়েছি।

সমকাল :প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পেরেছেন?

আব্দুল মোমেন :আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক। প্রায় এক কোটি ২২ লাখ। বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকায় যারা, তাদের অনেকেই ভালো অবস্থানে। অনেকের টাকা আছে, অনেকের কানেকশনস, প্রভাব আছে। তাদেরও উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছি। গণচীনে ৬৬ শতাংশ এফডিআই বা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আসে প্রবাসী চীনা জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। চীনে প্রবাসীদের এই ভূমিকা সম্ভব হলে আমাদের দেশে কেন হবে না?

সমকাল :অর্থনৈতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে গত এক বছরে কতটা সাফল্য পেয়েছেন?

আব্দুল মোমেন :আমি গত এক বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন দেশে নিয়ে গিয়েছি। নিজেও সঙ্গে গেছি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। যার ফলে সামনের দিনগুলোতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়বে। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান থেকে বিনিয়োগ আসবে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিউনিখে গিয়েছিলেন। সেখানে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আপনি জেনে খুশি হবেন, গত বছর আমাদের দেশে বিনিয়োগের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যান্য দেশে যেখানে বৃদ্ধির হার মাত্র ১০-১২ শতাংশ।

সমকাল :আপনি পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির কথা বলছিলেন। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের কতটা কাজে লাগানো যায়?

আব্দুল মোমেন :অনেক কাজে লাগানো যায়। ১৯৭১ সালে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছিল নামমাত্র। কিন্তু প্রবাসী বাঙালিরা তাদের বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। জর্জ হ্যারিসন পর্যন্ত এতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। আমি এ জন্য পাবলিক ডিপ্লোম্যাসিতে জোর দিই। যেমন রোহিঙ্গা সমস্যা। সরকারের দিক থেকে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিরা এটা নিয়ে কনসার্ট করতে পারে, বিক্ষোভ করতে পারে, সমাবেশ করতে পারে, জনমত তৈরি করতে পারে।

সমকাল :পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির ক্ষেত্রে নিজস্ব থিঙ্কট্যাঙ্ক থাকা জরুরি। যেমন ভারতে ওআরএফ আছে, ডিপিজি আছে। আমাদের পরিস্থিতি কেমন?

আব্দুল মোমেন : এমন থিঙ্কট্যাঙ্ক থাকা উচিত। আমি শুরু করেছি। আমরা ঢাকা ডায়লগ করেছি। কক্সবাজারে ওআরএফের সঙ্গে যৌথভাবে একটা করেছি।

সমকাল :পররাষ্ট্রনীতি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ নিয়ে নিজেদের থিঙ্কট্যাঙ্ক কি তৈরি করতে পারছি?

আব্দুল মোমেন :আছে। যেমন শাহরিয়ার কবিরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এটা গড়ে উঠেছিল অন্য লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু এখন এটা থিঙ্কট্যাঙ্ক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেমন আছে পিআরআই। আওয়ামী লীগের পক্ষে গড়ে ওঠা সিআরআই খুবই ভালো কাজ করছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। আরও কিছু আছে। কিন্তু তারা খুব শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠেনি। আমরা আরও নতুন নতুন থিঙ্কট্যাঙ্ক চাই। যেগুলো বিশেষভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করবে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

সমকাল :ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্কগুলো অনেক সিরিয়াস কাজ করে। সরকারও সহায়তা করে। যেমন উজানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও ওআরএফ অভিন্ন নদী নিয়ে অনেক কাজ করেছে। ভাটির দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে তেমন দেখি না।

আব্দুল মোমেন :দেখুন, আমাদের সরকারের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের দেশের নাগরিক সংগঠনগুলো সিরিয়াস কাজের চেয়ে গান-বাজনায় বেশি আগ্রহী।

সমকাল :আপনি কি এটা অন দ্য রেকর্ড বলছেন?

আব্দুল মোমেন :অবশ্যই লিখতে পারেন। এটা খারাপ কোনো কথা না। একটা মিডিয়াম অব এক্সপ্রেশন। আমি বলতে চাইছি, আমরা কাজের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতায় নজর দিই বেশি। আমাদের কমিউনিটি গবেষণার চেয়ে স্লোগান বেশি পছন্দ করে। সারা বছর কাজ করতে চায় না।

সমকাল :সরকারের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে নাগরিকদের। যেমন রোহিঙ্গা ইস্যুতে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে গেছে। আমরা যেতে পারিনি। শুধু আলাপ-আলোচনা চালিয়ে গেছি।

আব্দুল মোমেন :কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা আলোচনা চলছে। আমরা আদালতে গেলে তারা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিত। আমরা চাই, যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিক মিয়ানমার। এ জন্য আমরা সব অপশন খোলা রাখতে চাই। কৌশলগত কারণে যাইনি। এটাই কূটনীতির কৌশল।

সমকাল :এই মামলায় গাম্বিয়া কি বাংলাদেশের পর্যাপ্ত সহায়তা পেয়েছে?

আব্দুল মোমেন :আমরা এটা ভেরি স্মার্টলি করেছি। গাম্বিয়া ছোট রাষ্ট্র, একা মামলা করতে ভরসা পাচ্ছিল না। এ জন্য ওআইসির রেজ্যুলেশন নিয়েছি আমরা। সেখানে যদিও একমাত্র ইন্দোনেশিয়া এর সমর্থনে ছিল না। রক্ষা যে, তুরস্ক বড় সমর্থন দিয়েছিল। সৌদি আরবও সমর্থন দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসে আমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছি। ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠিয়েছি। তারা দ্য হেগে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

সমকাল :বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে না যাওয়াতে কী লাভ হয়েছে?

আব্দুল মোমেন :আমরা অব্যাহত যোগাযোগ ও আলোচনার মধ্যে রয়েছি। আদালতে গেলে আলোচনা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। তাদের টিম আগের চেয়ে বেশি সাড়া দিচ্ছে। আমরা বলেছি, এই সংকট মিয়ানমারে তৈরি হয়েছে। সমাধানও মিয়ানমারকে করতে হবে। মিয়ানমার আমাদের অঙ্গীকার করেছে যে, তারা সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করে না।

সমকাল :রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনে মিয়ানমারের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আব্দুল মোমেন :রোহিঙ্গাদের মাঝিদের নিয়ে গিয়ে সাইট ভিজিট করাতে বলেছি। কিন্তু সেটা তারা করেনি। আমরা বলেছি, তোমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো যেমন আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র থেকে নন-মিলিটারি, সিভিলিয়ান পর্যবেক্ষক রাখাইনে নিযুক্ত করতে পারে। মিয়ানমার এ ব্যাপারে হ্যাঁ-না কিছু বলে না। ভালো খবর, চীনও একই প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমারকে।

সমকাল :চীন তো মোবাইল ডিপ্লোম্যাসির প্রস্তাব দিয়েছে।

আব্দুল মোমেন :চীন বলছে, দুটি মোবাইল থাকবে। একটা থাকবে পরিবারপ্রধানের কাছে। আরেকটি পরিবারের কাছে। পরিবারপ্রধান রাখাইনে  গিয়ে পরিস্থিতি দেখে ফোন দিলে বাকিরা বাংলাদেশ থেকে যাবে।

সমকাল :মিয়ানমার কি এই পদ্ধতিতে রাজি?

আব্দুল মোমেন :তারা হ্যাঁ বা না কিছুই বলে না। যে কোনো প্রস্তাবেই বলে, আমরা পরে জানাব। আর জানায় না। ঢাকায় তাদের নতুন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছেন। এখনও দেখা করতে আসেননি। কিছুদিন আগে চীনের কুনমিংয়ে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রেডক্রসের মধ্যে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে। আমাদের দুই দেশের প্রতিনিধি সেখানে গেছেন। কিন্তু মিটিংয়ের সময় দেখা গেল, মিয়ানমার অনুপস্থিত। কোনো নোটিশ ছাড়া। মিয়ানমারের দিক থেকে সিনসিয়ারিটির অভাব রয়েছে।

সমকাল :চীনের দূতিয়ালিতে আমরা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছিলাম। এখন চীন কী করছে?

আব্দুল মোমেন :রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন এখন ত্রিপক্ষীয় অংশীদার হয়েছে। আমরা ত্রিপক্ষীয় কমিটি করেছি। বিশেষত গত জুলাই মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পর থেকে তারা যথেষ্ট সিরিয়াস। তাদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা যতদূর সম্ভব মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটাবেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীন প্রতিদিন অন গ্রাউন্ড কাজ করছে।

সমকাল :চীনের এই ভূমিকা থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের কোনো ডেটলাইন কি পাওয়া যেতে পারে?

আব্দুল মোমেন :ডেটলাইন পাওয়া যাবে না; কিন্তু আমি আশাবাদী। আগেও ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রেশার বাড়াতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতের প্রভিশনাল জাজমেন্ট আসবে। তখন  প্রেশার বাড়বে।

সমকাল :আমাদের পক্ষে রায় আসবে, আপনি নিশ্চিত?

আব্দুল মোমেন :আমার ধারণা, আমাদের পক্ষে আসবে। দেখা যাক!

সমকাল :অন্য কোনো দেশ ভূমিকা রাখতে পারত?

আব্দুল মোমেন :সিঙ্গাপুর ভূমিকা রাখতে পারত। মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয় সিঙ্গাপুরের ব্যাংকিং দিয়ে। তারা আমাদের সমর্থন দেয় না। জাপানের অনেক বিনিয়োগ মিয়ানমারে। আমাদের সঙ্গেও অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো। জাপান চাইলে পারত; কিন্তু সেই ভূমিকায় পাচ্ছি না।

সমকাল :ভারতও তো রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখছে না।

আব্দুল মোমেন :ভারত আমাদের এক নম্বর প্রতিবেশী। এখন তো ভালো সম্পর্ক। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল, তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের পক্ষে থাকবে। মিয়ানমারে তাদের প্রভাব আছে; কিন্তু প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখেনি। এবার অবশ্য জাতিসংঘে কোনো পক্ষে ভোট দেয়নি। ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে কিছু বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চেয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, তারা মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে মিয়ানমার তাদের কথা শুনবে। এ ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে গ্যাপ রয়েছে।

সমকাল :অথচ বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিল।

আব্দুল মোমেন :অবশ্যই। দেখুন, ভারতের যত প্রতিবেশী রাষ্ট্র রয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিয়ে আসছে। পাকিস্তান তো ভারতের 'শত্রু'। শ্রীলংকার সঙ্গেও দহরম-মহরম নেই। আগে নেপালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ভুটানও আগামীতে কী করবে, জানা নেই। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের প্রত্যাশামতো ভূমিকা রাখছে না।

সমকাল :বরং ভারতের দিক থেকে আমরা নতুন 'রোহিঙ্গা ইস্যু' দেখছি। তাদের এনআরসি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।

আব্দুল মোমেন :এনআরসি নিয়ে আমরা ভারত সরকারকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি। আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বারবার কথা বলেছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রত্যেকবার তারা বলেছেন, এনআরসি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে না; কিন্তু আমাদের আশঙ্কা দূর হয়নি।

সমকাল :এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

আব্দুল মোমেন :আমরা সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছি। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক ও সজাগ। ভারতের এনআরসি নিয়ে সেখানকার নাগরিকরাও সোচ্চার। সেখানকার বিরোধী দলগুলো যথেষ্ট সোচ্চার। তারা বুঝতে পারছে যে, এই প্রক্রিয়া গোটা ভারতকে অস্থিতিশীল করবে। তারাই বলছে, এনআরসি ভারতের মৌলিক পরিচয়ে আঘাত করছে।

সমকাল :আমাদের এখানে অনেকে মনে করেন, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে চাপ আসতে পারে।

আব্দুল মোমেন :আমার মনে হয় না। সরকারের দিক থেকে নানা কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। কিন্তু নাগরিকরা তো যে কোনো ইস্যুতেই কথা বলতেই পারে! এনআরসি নিয়ে ভারতের নাগরিকরা কথা বলতে পারলে বাংলাদেশের নাগরিকরা পারবে না কেন?

সমকাল :তিস্তা ইস্যুর কী হবে? ঝুলেই থাকবে?

আব্দুল মোমেন :ভারত সরকার বারবার বলছে, ২০১১ সালের অ্যাগ্রিমেন্টই বহাল আছে। এর কোনো কিছুই তারা পরিবর্তন করেনি। শুধু স্বাক্ষর করা যাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে।

সমকাল :এই পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশ কী করছে?

আব্দুল মোমেন :আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেট খেলা দেখতে যাওয়ার পেছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নও ছিল একটি কারণ।

সমকাল :ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

আব্দুল মোমেন :এই প্রতিক্রিয়া দুঃখজনক। ফেনীতে আমরা কী করেছি? ভারত ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে ফেনীর পানি উত্তোলন করছিল। আমরা চুক্তিতে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি দিয়েছি। তারা চুক্তি ছাড়াই এর দুই-তিনগুণ বেশি পানি তুলে নিচ্ছিল। আমরা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করায় এখন ১ দশমিক ৮২ কিউসেকের বেশি নিতে পারবে না।

সমকাল :চুক্তির উল্লিখিত পরিমাণের বেশি পানি তুলে নেবে না- এটা নিশ্চিত করা যাবে?

আব্দুল মোমেন : দুই দেশ সম্মত হয়েছি। চুক্তির ফলে এ ব্যাপারে ভারতের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। আমরা খাওয়ার পানি দিয়ে উদারতা দেখাতে পেরেছি। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানির ব্যাপারে এটা ভারতের জন্য একটা চাপ তৈরি করবে।

সমকাল :সর্বসম্প্রতি আপনার ভারত সফর বাতিল কি এনআরসি, সিএএ নিয়ে চাপ দেওয়ার জন্য?

আব্দুল মোমেন :আপনাদের কী ধারণা? এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

সমকাল :এনআরসি, সিএএ ইস্যুতে বাংলাদেশ আর কীভাবে ভারতকে চাপ দিতে পারে?

আব্দুল মোমেন :আমি মনে করি, ভারতবর্ষে যথেষ্ট জ্ঞানী ও বিবেচক মানুষ রয়েছেন। তারা এটা মেনে নেবেন না। আমি আশা করি, ক্ষমতাসীনদের বোধোদয় হবে। তারা ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্য বজায় রাখবেন। এনআরসি বা সিএএ হলে ভারতের দুর্বলতা বাড়বে। ভারতের বেশিরভাগ নাগরিক এটা পছন্দ করছে না। কেবল ভারতের নয়, বাংলাদেশ মনে করে- মিয়ানমারেরও বোধোদয় দরকার।

সমকাল :আমাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

আব্দুল মোমেন :আপনাকেও একটা প্রশ্ন করি। আমাদের দেশের নদীগুলোতে ভাঙন বাড়ছে কেন?

সমকাল :দুটি কারণে। প্রবাহের অস্থিরতা। শুকনো মৌসুমে পানি কম। বর্ষায় অনেক বেশি। আর নির্বিচার বালু উত্তোলন। বালু উত্তোলন নদীগুলোকে শেষ  করে দিচ্ছে।

আব্দুল মোমেন :আমারও তাই ধারণা। আমার বাড়ির পাশের ছোট ছোট নদীতে আগে কখনও ভাঙন দেখিনি। এখন ভাঙছে সেখান থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের কারণে। আপনাকে ধন্যবাদ।