- সম্পাদকীয় ও মন্তব্য
- সর্বাগ্রে দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
সর্বাগ্রে দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
সমাজ

দুর্নীতি সমাজের জন্য এক ভয়াবহ ব্যাধি। দুর্নীতি সমাজকে কলুষিত করে। সমাজকে কলুষমুক্ত করতে দরকার দুর্নীতির নির্মূল। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন নিয়ে প্রায়শ সমাজে আলোচনা হয়। দেশে যেমন আলোচনা হয়, তেমনি বিদেশেও আলোচনা হয়। আবার একদল আছে, যারা দেশে দুর্নীতি হয়- এ কথা স্বীকার করতে রাজি নয়। অন্যদিকে আরেক দল আছে, যারা মনে করে যে, দুর্নীতি সব দেশেই কমবেশি হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ নিয়ে দেশে যত রাজনীতি হয়েছে, এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে ততটা অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করা কঠিন। আর যেসব সংস্থা এ বিষয়কে অনেক বেশি জনসমক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছে, এর বিরুদ্ধে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তেমন কোনো সহজ ও জুতসই পরামর্শ দিতে পারেনি।
দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয়েছে, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে প্রথম দরকার, এর প্রতি সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। দেশে দুর্নীতির একটি প্রধান উৎস হচ্ছে অপচয়। যে দেশে যত বেশি বেহিসাবী ব্যয় করার সুযোগ থাকে, সে দেশে তত বেশি দুর্নীতির সুযোগ থাকে। আমাদের দেশ ও সমাজে প্রতিটি সরকারি কাজে বা প্রকল্প-কর্মসূচিতে সূক্ষ্ণ হিসাব না করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন খাতে যেমন অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়, তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দও দেওয়া হয়। অতিরিক্ত বরাদ্দ যেমন দুর্নীতি সৃষ্টি করে, তেমনি কম বরাদ্দও দুর্নীতির সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত বরাদ্দ থেকে যে দুর্নীতির সৃষ্টি হয়, সেটি বোঝা অনেক সহজ; কিন্তু কম বরাদ্দ থেকে যে দুর্নীতি হয়, তা হয়তো অনেকে লক্ষ্য করেন না। যেমন- কোনো একটি রাস্তা মেরামতের জন্য দরকার ১০ লাখ টাকা; কিন্তু দেওয়া হলো ৬ লাখ টাকা। তখন ওই কাজটি ভালোভাবে করার জন্য সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীলের মধ্যে আর আগ্রহ থাকে না। তাকে তখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তিনি পুরো রাস্তাটি মেরামত করবেন অত্যন্ত হালকাভাবে, নাকি যতটুকু করা যায় ততটুকু করবেন? যদি পুরোটা করেন, তাহলে তা হবে অতি নিম্নমানের আর যদি আংশিক করেন, তাহলে অনেকেই মনে করবেন, পুরো কাজের বরাদ্দ ছিল, কিন্তু আংশিক করে টাকাটা মেরে দিয়েছেন। ফলে ওই কাজটি ভালোভাবে না করে একটু দায়সারাভাবে কিছুটা করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করার প্রবণতা থাকে। দুর্নীতির সঙ্গে তাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে রাখা দরকার।
দুর্নীতি নির্মূলে সচেতন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্নীতি দমনের একটি বড় হাতিয়ার হতে পারে অপচয় বন্ধ করা। দুর্নীতি না বলে যদি বলা হয় অপচয় বন্ধ করুন, তাহলে কেউ তাতে তেমন আপত্তি করবেন না; কারণ এতে সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। দুর্নীতির প্রধান একটি উৎস বরাদ্দের মধ্যে লুকায়িত থাকে। একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। ১৯৯২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর এক বছরের গাড়ি পরিচালন এবং মেরামত ব্যয় ধরা ছিল ১০ লাখ টাকা। আমাদের প্রকল্পের দুটি গাড়ি এবং তিনটি মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫ লাখ টাকা। আবার আরেকজন কর্মকর্তার একটি কার মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫ লাখ টাকা। যার কার মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫ লাখ টাকা, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার গাড়িটি বিক্রি করলে কত টাকায় বিক্রি হবে? তিনি বললেন, ১.৫ লাখ টাকা। তাহলে সহজেই বোঝা যায়, সমস্যাটা কোথায়। অর্থাৎ যদি বরাদ্দ এভাবে রাখা হয়, তাহলে তা ব্যয় করার জন্য মিথ্যা ভাউচার তৈরি করা লাগবে।
সরকার একটা বিষয় আমলে রাখে না। তা হলো, কীভাবে চাহিদাভিত্তিক বাজেট (নিড বেইজড বাজেট) তৈরি করা যায়। বর্তমানে দেশে জোগানভিত্তিক বাজেট (ফান্ড বেইজড বাজেট) তৈরি করা হয়। ফলে অপচয়ের সুযোগ থাকে সবসময়। যদি চাহিদাভিত্তিক বাজেট থাকে, তাহলে তাতে দুর্নীতি করার সুযোগ তেমন থাকবে না। যেমন- সরকারিভাবে কোনো কর্মকর্তাকে প্রতিদিন যদি বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ লিটার তেল, তাহলে তিনি ১০ লিটার খরচ না হলেও তা করবেন। প্রয়োজনে একটি মিথ্যা ভাউচার বানিয়ে তা করবেন। এভাবে যদি বরাদ্দ রাখা হয়, তাহলে কেউ না কেউ অপচয় করবেন এবং দুর্নীতি করতেই থাকবেন। এভাবে প্রতিটি কাজে যদি বরাদ্দ আসে, তাহলে সে দেশে যত চেষ্টা করা হোক, দুর্নীতি কমিয়ে আনা সহজ হবে না। বরাদ্দ যেখানে হচ্ছে সেখানে হাত দিতে হবে, দুর্নীতির উৎস বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি দমনের জন্য তাই প্রধানত দরকার অপচয় বন্ধ করা। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেয়ে অপচয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা অনেক সহজ এবং তা বেশি গ্রহণযোগ্য। ঘরের দরজা খোলা রাখলে চুরি হবেই। তারপর চোরের বাড়ি খুঁজে লাভ নেই, সেটি অনেক কঠিন কাজ। তার চেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ রাখার চেষ্টা করা উত্তম। অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় একসেস কন্ট্রোল। যেমন- ঢাকা শহরের রাস্তা খোঁড়ার ব্যাপারে বলা যায়, এখানে দুর্নীতির চেয়ে অপচয়ই প্রধান। দুর্নীতি না হলেও অপচয় তো হচ্ছে। আর এই অপচয় দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে।
দুর্নীতির আরেকটি বড় উৎস হচ্ছে সরকারি সেবা বা অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে উৎকোচের বিনিময়ে তা প্রদান করা। এটি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রথম প্রয়োজন সেবাদানের পদ্ধতিটি সহজ করা। প্রতিটি বিভাগে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে তা সহজীকরণ করা সম্ভব। এটি করলে ৮০ শতাংশ দুর্নীতি এমনিতেই লোপ পাবে। তাই দুর্নীতি দমনের জন্য জরুরিভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা হচ্ছে- ১. অপচয় রোধ করা; ২. চাহিদাভিত্তিক বাজেট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা; ৩. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের নিয়মকে জনবান্ধব করা; ৪. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ওই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির জন্য দায়ীর ব্যবস্থা করা; ৫. প্রতিটি দপ্তর-মন্ত্রণালয়-প্রতিষ্ঠানে একটি ইনটেলিজেন্স ইউনিট বা কাউন্টার ইনটেলিজেন্স ইউনিট তৈরি করা; ৬. প্রতি বছর দুর্নীতির ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করা (যা সামান্য টাকা খরচ করে করা সম্ভব) এবং ৭. সরকারি কর্মকর্তাদের নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পত্তি ক্রয়ে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি মনিটরিং টিম (টাস্ক ফোর্স) করায় এখন সেখানে নদীতীর রক্ষার নামে লুটপাট প্রায় বন্ধ হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত অন্য ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা যেতে পারে। দুর্নীতি দমন কঠিন হলেও একে সহজ করে তোলা যায়, আর এ কাজটি করার জন্য একটু ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার। দরকার সমাজের সচেতন মহলের সজাগ দৃষ্টি এবং সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীলদের ওপর তাদের চাপ অব্যাহত রাখা।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ ট্রাস্ট
দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয়েছে, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে প্রথম দরকার, এর প্রতি সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। দেশে দুর্নীতির একটি প্রধান উৎস হচ্ছে অপচয়। যে দেশে যত বেশি বেহিসাবী ব্যয় করার সুযোগ থাকে, সে দেশে তত বেশি দুর্নীতির সুযোগ থাকে। আমাদের দেশ ও সমাজে প্রতিটি সরকারি কাজে বা প্রকল্প-কর্মসূচিতে সূক্ষ্ণ হিসাব না করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন খাতে যেমন অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়, তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দও দেওয়া হয়। অতিরিক্ত বরাদ্দ যেমন দুর্নীতি সৃষ্টি করে, তেমনি কম বরাদ্দও দুর্নীতির সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত বরাদ্দ থেকে যে দুর্নীতির সৃষ্টি হয়, সেটি বোঝা অনেক সহজ; কিন্তু কম বরাদ্দ থেকে যে দুর্নীতি হয়, তা হয়তো অনেকে লক্ষ্য করেন না। যেমন- কোনো একটি রাস্তা মেরামতের জন্য দরকার ১০ লাখ টাকা; কিন্তু দেওয়া হলো ৬ লাখ টাকা। তখন ওই কাজটি ভালোভাবে করার জন্য সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীলের মধ্যে আর আগ্রহ থাকে না। তাকে তখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তিনি পুরো রাস্তাটি মেরামত করবেন অত্যন্ত হালকাভাবে, নাকি যতটুকু করা যায় ততটুকু করবেন? যদি পুরোটা করেন, তাহলে তা হবে অতি নিম্নমানের আর যদি আংশিক করেন, তাহলে অনেকেই মনে করবেন, পুরো কাজের বরাদ্দ ছিল, কিন্তু আংশিক করে টাকাটা মেরে দিয়েছেন। ফলে ওই কাজটি ভালোভাবে না করে একটু দায়সারাভাবে কিছুটা করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করার প্রবণতা থাকে। দুর্নীতির সঙ্গে তাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে রাখা দরকার।
দুর্নীতি নির্মূলে সচেতন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্নীতি দমনের একটি বড় হাতিয়ার হতে পারে অপচয় বন্ধ করা। দুর্নীতি না বলে যদি বলা হয় অপচয় বন্ধ করুন, তাহলে কেউ তাতে তেমন আপত্তি করবেন না; কারণ এতে সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। দুর্নীতির প্রধান একটি উৎস বরাদ্দের মধ্যে লুকায়িত থাকে। একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। ১৯৯২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর এক বছরের গাড়ি পরিচালন এবং মেরামত ব্যয় ধরা ছিল ১০ লাখ টাকা। আমাদের প্রকল্পের দুটি গাড়ি এবং তিনটি মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫ লাখ টাকা। আবার আরেকজন কর্মকর্তার একটি কার মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫ লাখ টাকা। যার কার মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫ লাখ টাকা, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার গাড়িটি বিক্রি করলে কত টাকায় বিক্রি হবে? তিনি বললেন, ১.৫ লাখ টাকা। তাহলে সহজেই বোঝা যায়, সমস্যাটা কোথায়। অর্থাৎ যদি বরাদ্দ এভাবে রাখা হয়, তাহলে তা ব্যয় করার জন্য মিথ্যা ভাউচার তৈরি করা লাগবে।
সরকার একটা বিষয় আমলে রাখে না। তা হলো, কীভাবে চাহিদাভিত্তিক বাজেট (নিড বেইজড বাজেট) তৈরি করা যায়। বর্তমানে দেশে জোগানভিত্তিক বাজেট (ফান্ড বেইজড বাজেট) তৈরি করা হয়। ফলে অপচয়ের সুযোগ থাকে সবসময়। যদি চাহিদাভিত্তিক বাজেট থাকে, তাহলে তাতে দুর্নীতি করার সুযোগ তেমন থাকবে না। যেমন- সরকারিভাবে কোনো কর্মকর্তাকে প্রতিদিন যদি বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ লিটার তেল, তাহলে তিনি ১০ লিটার খরচ না হলেও তা করবেন। প্রয়োজনে একটি মিথ্যা ভাউচার বানিয়ে তা করবেন। এভাবে যদি বরাদ্দ রাখা হয়, তাহলে কেউ না কেউ অপচয় করবেন এবং দুর্নীতি করতেই থাকবেন। এভাবে প্রতিটি কাজে যদি বরাদ্দ আসে, তাহলে সে দেশে যত চেষ্টা করা হোক, দুর্নীতি কমিয়ে আনা সহজ হবে না। বরাদ্দ যেখানে হচ্ছে সেখানে হাত দিতে হবে, দুর্নীতির উৎস বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি দমনের জন্য তাই প্রধানত দরকার অপচয় বন্ধ করা। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেয়ে অপচয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা অনেক সহজ এবং তা বেশি গ্রহণযোগ্য। ঘরের দরজা খোলা রাখলে চুরি হবেই। তারপর চোরের বাড়ি খুঁজে লাভ নেই, সেটি অনেক কঠিন কাজ। তার চেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ রাখার চেষ্টা করা উত্তম। অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় একসেস কন্ট্রোল। যেমন- ঢাকা শহরের রাস্তা খোঁড়ার ব্যাপারে বলা যায়, এখানে দুর্নীতির চেয়ে অপচয়ই প্রধান। দুর্নীতি না হলেও অপচয় তো হচ্ছে। আর এই অপচয় দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে।
দুর্নীতির আরেকটি বড় উৎস হচ্ছে সরকারি সেবা বা অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে উৎকোচের বিনিময়ে তা প্রদান করা। এটি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রথম প্রয়োজন সেবাদানের পদ্ধতিটি সহজ করা। প্রতিটি বিভাগে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে তা সহজীকরণ করা সম্ভব। এটি করলে ৮০ শতাংশ দুর্নীতি এমনিতেই লোপ পাবে। তাই দুর্নীতি দমনের জন্য জরুরিভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা হচ্ছে- ১. অপচয় রোধ করা; ২. চাহিদাভিত্তিক বাজেট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা; ৩. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের নিয়মকে জনবান্ধব করা; ৪. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ওই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির জন্য দায়ীর ব্যবস্থা করা; ৫. প্রতিটি দপ্তর-মন্ত্রণালয়-প্রতিষ্ঠানে একটি ইনটেলিজেন্স ইউনিট বা কাউন্টার ইনটেলিজেন্স ইউনিট তৈরি করা; ৬. প্রতি বছর দুর্নীতির ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করা (যা সামান্য টাকা খরচ করে করা সম্ভব) এবং ৭. সরকারি কর্মকর্তাদের নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পত্তি ক্রয়ে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি মনিটরিং টিম (টাস্ক ফোর্স) করায় এখন সেখানে নদীতীর রক্ষার নামে লুটপাট প্রায় বন্ধ হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত অন্য ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা যেতে পারে। দুর্নীতি দমন কঠিন হলেও একে সহজ করে তোলা যায়, আর এ কাজটি করার জন্য একটু ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার। দরকার সমাজের সচেতন মহলের সজাগ দৃষ্টি এবং সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীলদের ওপর তাদের চাপ অব্যাহত রাখা।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ ট্রাস্ট
মন্তব্য করুন