- সম্পাদকীয় ও মন্তব্য
- তালেবান-মার্কিন চুক্তির ভবিষ্যৎ
তালেবান-মার্কিন চুক্তির ভবিষ্যৎ
নানা আলোচনা-সমালোচনার পর গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তানের মধ্যে প্রায় দুই দশক ধরে চলা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোর প্রথম পদক্ষেপ। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের জন্য হুমকিস্বরূপ ওই অঞ্চলের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো- যেমন আল কায়দা ও আইএসকে আর্থিক, প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা না দিতে সম্মত হয়েছে তালেবান। তালেবান যদি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং ওই অঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা কমাতে সক্ষম হয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পর্যায়ক্রমে আফগান থেকে সেনা সরিয়ে নেবে এবং ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
এর আগেও কয়েক দফা আলোচনার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। নানা কারণে সেটি পিছিয়ে গেলেও এবার সেটি আলোর মুখ দেখল। এটি একটি বড় সাফল্য। কারণ গত এক দশক ধরে তালেবানরা আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিল।
এই চুক্তির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক. আফগানিস্তানে বিদ্যমান সব সামাজিক সংস্কার যেমন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, দেশটিতে বসবাসরত সব জাতিগোষ্ঠী, সুশীল সমাজ এবং নারী ও তরুণদের ব্যাপারে তালেবানকে উদার হতে হবে। তালেবানরা আফগান সরকারকে আড়াল করতে বেসামরিক বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের একত্র করার চেষ্টা করতে পারে। তবে তারা সে প্রচেষ্টা শুরুর আগেই আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির উচিত হবে সব পক্ষের কাছে পৌঁছানো এবং আফগানিস্তানকে একত্র করার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়া। এটি তালেবানকে দেখিয়ে দেবে যে, আফগান সমাজের সব উপাদান প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করা, সংবিধান বাতিল করা এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো উপেক্ষা করার প্রয়াসকে সমর্থন করে না।
দুই. এখন আফগান সমাজের মধ্য থেকে শত্রুভাবাপন্ন পরিস্থিতি দূর করতে আলোচনা হওয়া দরকার। কিন্তু তালেবানরা মনে করছে, যুদ্ধবিরতির কারণে তাদের শক্তি খর্ব হবে এবং যোদ্ধারা হারিয়ে যাবে। একইভাবে সব পক্ষই আশঙ্কা করছে যে, যুদ্ধবিরতির ফলে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু শান্তির জন্য সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। তালেবানরা যদি মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকেই চুক্তির লক্ষ্য ধরে নেয়, তাহলে অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিঘ্ন ঘটবে। তখন আফগানদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে- তালেবানরা সত্যিই শান্তি চায় না।
তিন. মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি শর্তাধীন থাকতে হবে। আফগানিস্তানে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সৈন্য সংখ্যা ৮ হাজার ৬০০-তে কমিয়ে আনবে। একই সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ১৩৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করা হবে। এই সময়ের মধ্যে সহিংসতা হ্রাস, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠায় তালেবানরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে কিনা তা দেখার সুযোগ পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এটা ধারণা করা যায়, পরবর্তী সময়ে আলোচনাসাপেক্ষে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু তালেবানদের শর্ত মানতে হবে। তালেবান কী করবে তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ বিগত সময়েও তারা সহিংসতা কমানোর কথা বলে তা বাস্তবায়ন করেনি। এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান থেকে সরে যায়, তাহলে দেশটি আবারও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে। বিষয়টি আফগানিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকির কারণ হবে। তারপরও এটা স্বস্তির যে, আপাতত ১৮ বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটল। এই চুক্তি আফগান তরুণ প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত রাখবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকবে এবং মার্কিন সৈন্যরা নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারবে।
লেখকদ্বয় যথাক্রমে সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ওবামা প্রশাসন) ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (বুশ প্রশাসন); ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুদীপ্ত সাইফুল
মন্তব্য করুন