জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অসময়ে বন্যা ও তীব্র শীতের প্রকোপে প্রকৃতির যেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তেমনি দেশের নদনদীগুলোও নাব্য হারিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল বিশাল চরের। এসব চরে এখন নানা জাতের সবজির চাষাবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে দোআঁশ মাটির ফসল চীনাবাদাম, আলু, ভুট্টা, কুমড়া, স্কোয়াশ, তরমুজসহ নানা জাতের সবজি চাষাবাদ করে প্রান্তিক চাষিদের অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওর প্রত্যক্ষ সহায়তায় চরাঞ্চলে কৃষি চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র নদীগুলো পানির অভাবে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে চরের পর চর। এসব চরাঞ্চলে এখন ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে, যা আগেই বলেছি। বিশেষ করে ভারতের উজান থেকে বয়ে আসা তিস্তায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এখন তিস্তায় হাঁটুপানি। মানুষ এখন হেঁটেই পারাপার হচ্ছে। সুবিস্তৃত তিস্তার চরাঞ্চলে মানুষ গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টার চাষাবাদ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিস্তার চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে অ্যাপসের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সুবাদে এখন চাষিরা ভুট্টার মাঠ থেকে অ্যাপস ব্যবহার করে পরামর্শ নেওয়ায় কীটপতঙ্গের আক্রমণ হতে ভুট্টার জমিকে রক্ষা করতে পারছে। এমনকি কখন কী পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে এবং কখন সেচ কীভাবে দিতে হবে, তাও জেনে নিচ্ছেন।
উলেল্গখ্য, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অ্যাপস ব্যবহার করায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছিল। এ বছরও ভুট্টার ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আশা করা হচ্ছে, এ বছরও বাম্পার ফলন হবে। তবে ভুট্টা চাষিরা ভুট্টার চাষ করে ফলন বৃদ্ধি করলেও উপযুক্ত মূল্য পান না। ফলে ভুট্টা চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। অথচ ভুট্টার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ভুট্টা চাষে বৈপল্গবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হতো। ভুট্টা পোলট্রি শিল্পের জন্য একটি সুষম খাদ্য। দেশে পোলট্রি কিলোর উত্থান যেভাবে হয়েছে, সেভাবে খাদ্যের জোগান দেশীয়ভাবে দেখা সম্ভব হলে পোলট্রি শিল্প আরও বিকশিত হতো। কিন্তু অনেক সময়ই ভুট্টা চাষিদের কম মূল্যে ভুট্টা বিক্রি করতে হয়। ফলে ভুট্টা চাষিরা দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও এ জন্য উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। উলেল্গখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নীলফামারীতে এক অনুষ্ঠানে সরাসরি কৃষকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে ভুট্টা চাষিরা ভুট্টার উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না মর্মে অভিযোগ করেন। ওই অনুষ্ঠানে তারা সরকার যেভাবে অভ্যন্তরীণভাবে ধান, চাল, গম সংগ্রহ করে থাকে, সেভাবে অভ্যন্তরীণভাবে ভুট্টা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করেন। তখন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অভ্যন্তরীণভাবে ধান, চাল, গম সংগ্রহের মতো ভুট্টাও সংগ্রহ করা হবে মর্মে ভুট্টা চাষিদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে ভুট্টা সংগ্রহের ঘোষণা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
কৃষির সমৃদ্ধি ব্যতীত দেশের অর্থনীতিকে বলিষ্ঠ করা যাবে না। কৃষিতে যেটুকু অর্জন, তাতে দেশের কৃষির উন্নতি হলেও কৃষকের অবস্থা ভালো নেই, অপ্রিয় হলেও এটাই বাস্তবতা। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে আরও মনোযোগ বাড়াতে হবে। নানাক্ষেত্রে আরও বাড়াতে হবে ভর্তুকি। অভ্যন্তরীণভাবে ভুট্টা সংগ্রহের বিষয়ে ভাবতে হবে।
সাবেক ছাত্রনেতা
মন্তব্য করুন