
কয়েকদিন আগের ঘটনা। আমার এক বন্ধুর মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ছিলাম। আমরা রাজধানীর ধানমন্ডিতে পশ্চিম দিকের একটি গলি থেকে মিরপুর রোডের ক্রসিং পেরিয়ে পূর্ব দিকের গলিতে যাব। ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় আমাদের দিকের যানবাহনগুলোকে দাঁড়ানোর সংকেত দেয়, দাঁড়াই। পরে যখন যাওয়ার সংকেত দেয়, তখন সবাই এগোই। বিপত্তি ঘটে বিপরীত অর্থাৎ পূর্ব প্রান্তে। সেখানে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশ মিরপুর রোডের উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী গাড়িগুলোকে ক্রসিংয়ে দাঁড়ানোর সিগন্যাল দেয়নি। ফলে উত্তর এবং আমাদের পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো রাস্তার মাঝখানে জটলা পাকায়। সবাই যে যার মতো জায়গা খুঁজে বের হয়। আমরা পূর্ব দিকের গলিতে ঢুকবার সময় সেই প্রান্তের ট্রাফিক কনস্টেবল থামান। মোটরসাইকেলের সব কাগজ চান। ঠিক ঠিক সব কাগজ ছিল, তবু বন্ধুর ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যান। কারণ জানতে চাইলে বলেন, রাস্তা পার হওয়া আমাদের দোষ। আমরা বলি, ওপারের ট্রাফিক পুলিশ আসার সিগন্যাল দিয়েছে। মুখ খিঁচিয়ে, হাত ছুড়তে ছুড়তে চিৎকার করে ট্রাফিক কনস্টেবলটি বলেন, 'পুলিশ সিগন্যাল দিলেই আগুনে ঝাঁপ দেবেন?' আমরা ভীষণ অবাক হই! দুটি কারণে- এক. ট্রাফিক সংকেত মানার পরও তিনি আমাদের দোষারোপ করছেন; দ্বিতীয়ত, তার অত্যন্ত বাজে মুখভঙ্গি ও ক্রুদ্ধ শারীরিক ভাষা, যা অপমানজনক ছিল। যতই যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, আমরা ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করিনি; ট্রাফিক পুলিশটি ততই ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতে থাকেন এবং বারবার বলেন, 'পুলিশ সিগন্যাল দিলেই আগুনে ঝাঁপ দেব কিনা?'
আসলে তিনি উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী গাড়িগুলোকে ক্রসিংয়ে দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তার ভুল বা দায়িত্বে অবহেলার জন্যই দু'দিকের যানবাহনের জটলা হয় রাস্তার মাঝে। নিজের দায় আড়াল করতে ট্রাফিক পুলিশ উল্টো আস্টম্ফালন ও দোষারোপের কৌশল গ্রহণ করেন, যা সহজেই বুঝতে পারি। কিন্তু সেই ট্রাফিক পুলিশ মুখ ও চোখের যে ভয়ংকর ভঙ্গি করেছিলেন, সেটা মাস্তান-সন্ত্রাসীদের করতে দেখি। তাকেও বলেছিলাম, নাগরিকদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করার অধিকার কোনো আইনে পুলিশকে দেওয়া হয়নি। শুধু কেউ অন্যায় করলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ। ভালো ব্যবহার জানা পুলিশও আমি চিনি। কিন্তু ভালোরা বাহিনীতে সংখ্যালঘু, এটা তাদের অনেকের কথা। বিরল-ব্যতিক্রম ছাড়া, রাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র ও ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আজব মানসিকতা দেখে প্রিয় মাতৃভূমিতে বেড়ে উঠেছি। ইউনিফর্মের ভেতর তারা নিজেদের প্রভু মনে করেন আর সাধারণ মানুষকে ভৃত্য। রাজতন্ত্র ও জমিদার প্রথায় এমন মানসিকতার অস্তিত্ব ছিল বলে জেনে এসেছি। ভিনদেশি শাসক ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের মধ্যেও 'প্রভুর' মানসিকতা দেখার অভিজ্ঞতা পরিবারেই আছে। সেসব শাসকের কাছে সাধারণ মানুষের জীবন ছিল পুতুল খেলা মাত্র। তাদের স্বার্থে সব করতেন, বলতেন জনগণ ও সাধারণ মানুষের কথা। বাংলাদেশ স্বাধীনের ৪৯ বছরেও সেই মানসিকতার পবির্তন অনুভব করা কঠিন।
নিরস্ত্র, সিভিল পোশাকধারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও প্রভুর মানসিকতা বরাবরই দেখেছি। নতুন যা দেখছি তা হলো- অস্ত্র ও ইউনিফর্মধারীদের মতো 'অপ্রিয়' নাগরিকদের প্রাণসংহার করার ভয়ংকর মানসিকতা ও আচরণ; যার তাজাতম দৃষ্টান্ত দেখলাম কুড়িগ্রামে, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে জেলার নিরস্ত্র সিভিল প্রশাসনের হত্যার চেষ্টা ও বর্বর নির্যাতন। গণমাধ্যমে প্রকাশ :হাত-পা-চোখ বেঁধে, বিবস্ত্র করে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পিটিয়েছে রিগ্যানকে। কারামুক্ত হয়ে রিগ্যান জানান, নির্যাতক দলের নেতার নাম নাজিম উদ্দিন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব), সংক্ষেপে আরডিসি নামে পরিচিত। নাজিম পেটাতে পেটাতে রিগ্যানকে বলেছেন, 'আজ তোর জীবন শেষ। তুই কলেমা পড়ে ফেল, তোকে এনকাউন্টারে দেওয়া হবে।' এমন ভয়ংকর ভাষা ইউনিফর্ম ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের ব্যবহারের বহু অভিযোগ আমরা ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি। এখন সিভিল পোশাকের নিরস্ত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ব্যবহার করছেন, যা প্রশাসনে গুণগত নতুন পরিবর্তনের জানান দিচ্ছে। 'ক্রসফায়ার' ও 'এনকাউন্টার'-এর নামে হত্যার দ্বারপ্রান্ত থেকে নানা শর্তে বেঁচে আসা অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন সময় কথা বলার সুযোগ হয়েছে। পত্রিকান্তরে জানলাম, সাংবাদিক রিগ্যান বেঁচেছেন কয়েকটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর, বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ, আধা বোতল মদ ও গাঁজা রাখার সাজানো অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা মেনে নেওয়ার শর্তে।
রিগ্যানের এমন ভয়ংকর পরিণতির কারণ অন্য কিছু নয়, শুধুই সাংবাদিকতা। ৩০ বছর এই পেশায় থেকে আমি জানি, সাংবাদিকতা আমাদের দেশে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। এই ঝুঁকি দু'রকম- এক. যে কোনো ধরনের বিপদ; দুই. প্রলোভন। যাকে কোনো ধরনের বিপদের ভয় দেখিয়ে আটকানো যায় না, তাকে নানা প্রলোভনে কিনে ফেলার কৌশল প্রয়োগ করা হয়। যাকে কেনাও যায় না, শেষ পর্যন্ত তার কপালে বিপদই জুটে, যদি প্রতিপক্ষ ক্ষতি করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকে। খবরগুলো ধারণা দিচ্ছে, শেষটাই ঘটেছে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক রিগ্যানের জীবনে।
কাজে নয়, কিন্তু পরিচয় সাংবাদিক- এমন বহু ব্যক্তি ঢাকাসহ সারাদেশে আমি চিনি। সাংবাদিক পরিচয়টা তাদের বাণিজ্যের সাইনবোর্ড, যা নির্বিঘ্নে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে দুর্নীতি-কুকর্ম করতে দারুণ সহায়তা করে। তারা আমার এই লেখার বিষয়বস্তু নয়। আমার লেখা রিগ্যানকে নিয়ে, যিনি অন্য কোনো অপরাধমূলক কাজের জন্য নয়, শুধু সাংবাদিকতার জন্য নির্যাতিত হয়েছেন। এটা সবার জানা থাকা দরকার, সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। নিজের জীবনের সিংহভাগ সাংবাদিকতায় ব্যয় করেছি। দলবাজি, তেলবাজি, ধান্দাবাজি করে নয়, সততা ও সাহসের সঙ্গে কেবলই ভালো সাংবাদিকতা করার চেষ্টায় ব্রত থেকে। সাংবাদিকতা আমার কাছে পেশার চেয়েও বেশি কিছু; আমি সাংবাদিকতাকে ভালোবাসি। এই পেশায় সততা লাগে, স্পষ্ট করে সত্য বলার সাহস লাগে। নির্যাতিত সাংবাদিক রিগ্যান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজের সম্পর্কে একবাক্যে লিখেছেন, 'অপ্রিয় সত্যগুলো স্পষ্টভাবে বলায় অনেকের কাছে অপ্রিয় আমি।' সংবাদপত্রের খবর অনুসারে, কুড়িগ্রাম প্রশাসনের কর্মকর্তারাও নির্যাতন করতে করতে রিগ্যানকে বলেছে, 'তুই আমাদের অনেক জ্বালাচ্ছিস। ডিসির বিরুদ্ধে লিখিস। তুই বড় সাংবাদিক হয়ে গেছিস। আজ তোর সাংবাদিকতা ছোটাবো।' নির্যাতনকারী দলের নেতা আরডিসি নাজিম বলতে বলেন রিগ্যানকে, 'বল, ডিসি (জেলা প্রশাসক) আমার বাবা।' ধারণা হচ্ছে, ছোট আমলা নাজিম উদ্দিন নির্যাতন করতে করতে এতটাই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন, ভুলে বসেছিলেন তার ডিসি পুরুষ নন, একজন নারী। ফলে ডিসি সুলতানা পারভীন সাংবাদিক আরিফের আর যাই হোক, বাবা হতে পারেন না। বুঝতে অসুবিধা হয় না, আক্রোশ মেটাতে শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার কৌশল হিসেবে সাংবাদিক রিগ্যানের জন্মদাত্রী মাকেও অপমান করতে ছাড়েনি।
আক্রোশ থেকে কেন এতটা বর্বর হয়ে উঠেছিল সিভিল পোশাকের নিরস্ত্র ছোট আমলারা? কুড়িগ্রামে নিজস্ব সূত্র থেকে তা জানবার, বুঝবার চেষ্টা করেছি বিগত ক'দিন। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তার বিতর্কিত পুকুর সংক্রান্ত আরিফের প্রতিবেদনকে এক বছরের পুরোনা ঘটনা বলে নির্যাতনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ডিসির অধীন কর্মকর্তা নাজিমের ক্রুদ্ধ কথাগুলো বলে রাগ পুষে রেখেছিলেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। সেই রাগে নতুন নির্ভেজাল ঘি ঢেলেছেন রিগ্যান নির্যাতিত হওয়ার কয়েকদিন আগেই।
১ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে সুলতানা পারভীন তার কার্যালয়ে পাঁচটি নিম্ন পদে ৩০ জন নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেন। শর্তগুলোর শীর্ষে আছে, আগ্রহীদের অবশ্যই কুড়িগ্রাম জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। যে কোনো জেলায় এ ধরনের নিয়োগের সময় স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক তদবির-তৎপরতা চলে, বড় বাণিজ্যের সুযোগও তৈরি হয়। নির্যাতনের শিকার হওয়ার দিন পাঁচেক আগে ৮ মার্চ সাংবাদিক রিগ্যান তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'মুজিববর্ষের প্রাক্কালে কুড়িগ্রামে নিয়োগবাণিজ্যের জনশ্রুতি চলছে। ঘটনা কি সত্যি?' জেলা প্রশাসনের নিয়োগ কিনা, সেটা সুনির্দিষ্ট করে না লিখলেও যাদের যা বুঝবার তারা নিশ্চয়ই সেই বার্তা বুঝে নিয়েছিলেন। ফলে রিগ্যানের পোস্টটা ঢিল হয়ে হয়তো সেই মৌচাকে পড়েছিল, যেখানে কেউ কেউ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে মধু সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যেই ৩০টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল জেলা প্রশাসন, সেগুলো কুড়িগ্রামের রাজস্ব প্রশাসনের অধীন অফিসগুলোতে। আর সাংবাদিক রিগ্যানকে ভয়ংকর নির্যাতনের যিনি নেতৃত্ব দেন, সেই নাজিম উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলার রাজস্ব প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ছিলেন। তিনি রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সংক্ষেপে আরডিসির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাংবাদিক রিগ্যান এই রাজস্ব প্রশাসনের ৩০টি নিম্ন পদের নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের ইঙ্গিত দিয়ে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞপ্তিদাতা ডিসি ও রাজস্ব প্রশাসনের আরডিসি নাজিমের গায়ে নতুন করে জ্বালা ধরার কথা বা পুরোনো ঘায়ে নুনের ছিটার যন্ত্রণাবোধ করেছেন। কিন্তু এই গা-জ্বলার প্রতিষেধক যে গভীর রাতে সাংবাদিক রিগ্যানকে হত্যার পরিকল্পনা এবং অবশেষে ভয়ংকর নির্যাতন করে প্রাণভিক্ষা দিয়ে, মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ হতে পারে, এটা কী করে সিভিল প্রশাসনের নিরস্ত্র আমলাদের চিন্তায় এলো? এ ঘটনা দেশের সিভিল প্রশাসনেও বীভৎস বর্বর মনসিকতার কর্মকর্তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে! যা সত্যিই ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ পেশার কারণে বহু ছোট-বড় আমলার সঙ্গে পরিচিত হতে হয়, যাদের অনেককে মানুষ হিসেবে অনেক মানবিক মনে হয়েছে।
এতটা দুঃসাহস একজন ডিসি ও আরডিসির কী করে হতে পারে? বহু জেলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুবাদে জানি, স্থানীয় প্রশাসনে যত বড় বড় দুর্নীতি হয়, সেই টাকার ভাগ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাইরেও যায়। এই ভাগবাটোয়ারার তালিকায় যেমন থাকেন জেলার ক্ষমতাশালী কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা, থাকেন প্রভাবশালী কোনো কোনো সাংবাদিক বা সাংবাদিক নেতাও। যেসব সাংবাদিক ভাগবাটোয়ারার অংশীদার হন, তারা নিজেদের এসব অপকর্ম ঠিক রাখার জন্য ঝামেলা পাকাতে ও হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতে সক্ষম জেলার এমন কিছু সাংবাদিকের জন্যও অল্প ভাগ রাখেন। উদ্দেশ্য- তাদের মুখ বন্ধ করে ফেলা। আর জেনেও ভয়ে কুঁকড়ে থাকবে, মুখ বন্ধ রাখবে, এমন সাংবাদিকদের কিছু দিতে হয় না। দুর্নীতির এই পুরো চক্রে সেই সাংবাদিকই সবচেয়ে বড় বাধা বা শত্রু হয়ে দাঁড়ায়, যে টাকার ভাগ নেবে না, আবার ভয়ে চুপও থাকবে না; উল্টো 'দুঃসাহস' দেখিয়ে সব ফাঁস করে দেবে। এমন সাংবাদিকরা নিজের জেলায় গোটা দুর্নীতি চক্রের চক্ষুশূল ও শত্রু হয়ে ওঠেন। সেই শত্রুদের তালিকায় প্রতিদিনই দেখা হয় এমন 'সাংবাদিক' ও 'সাংবাদিক নেতা'ও থাকেন। কুড়িগ্রামে এমন বাস্তবতা কতটা প্রকট আমার জানা নেই। তবে নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পর্যবেক্ষণ হলো- সাংবাদিকতায় সবসময়ই আমাদের পেশার বাইরের জগতের শত্রু বেশি ছিল; কিন্তু তারা ভয় পেত সাংবাদিকদের ঐক্যকে। তাই খেপলেও ক্রুদ্ধ হয়ে ভয়ংকর কিছু করার দুঃসাহস দেখাত না শেষ পর্যন্ত। সাংবাদিকরা রাজনীতি ও দুর্নীতির স্বার্থে যত বিভক্ত হয়েছে, অনৈক্য ও পরস্পরের প্রতি শত্রুতায় নিমজ্জিত হয়েছে, বাইরের শত্রুরা ততই সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ঘরের ভেতর শত্রু তৈরি না হলে বাইরের শত্রু সৎ ও সাহসী সাংবাদিকদের সঙ্গে এতটা ভয়ংকর ও বর্বর হয়ে উঠতে সাধারণত সাহস করে না। কারও উর্বর মস্তিস্ক যদি এমনটা ভেবে থাকে যে, রিগ্যানকে জেলে পুরে দিলে কুড়িগ্রামে নিয়োগবাণিজ্যসহ প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে 'জ্বালানোর' আর কেউ থাকবে না, দুর্নীতির সড়ক মসৃণ হবে; তাহলে তাদের এখন অনুধাবন করা উচিত 'পাপ বাপকেও ছাড়ে না'।
সবশেষে বলতে চাই, কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনের মতো আমলাদের ভয়ংকর রূপ নিরস্ত্র সিভিল প্রশাসন সম্পর্কে নতুন দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। তারপরও এখনও এই বিশ্বাস রাখতে চাই, নিরস্ত্র সিভিল প্রশাসনের সার্বিক আচরণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চয়ই এই ভয়ংকর ছোট-বড় আমলারা করছেন না। তাহলে এমন বর্বর মানসিকতার ব্যক্তিরা প্রশাসনে থাকতে পারে কিনা, সেটা আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় নয়, প্রশাসনের ভাবমূর্তি ও মর্যাদার স্বার্থে অনতিবিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
সাংবাদিক
ঢাকা, ১৭ মার্চ '২০
মন্তব্য করুন