
যখন চারপাশে বিভ্রান্তির খবর থাকে, ভুল আর আতঙ্কের ছড়াছড়ি থাকে, তখন মানুষ আশ্বস্ত হতে চায়। আশ্বস্তের অন্যদিকে আছে আতঙ্ক। করোনার ব্যাপার যদি আমরা দেখি, বাস্তব সত্যটা কী?
সত্য হচ্ছে, করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হন, তাদের ৮১ শতাংশ মাইল্ড বা ক্ষুদ্র অসুস্থ হন। যেটার জন্য হাসপাতালে যাওয়ারও কোনো প্রয়োজন হয় না। ১৪ শতাংশ অসুস্থ হন, তাদের হাসপাতালে নিতে হয়। বাকি ৫ শতাংশ জটিল। ইনটেনসিভ কেয়ারে বা নিবিড় পরিচর্যায় নিতে হয়। তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে। তাহলে যেই রোগের ৮১ শতাংশের জন্য হাসপাতালেও নেওয়ার প্রয়োজন হয় না; ক্ষুদ্র সর্দি-কাশি-জ্বর মানে ফ্লু ছাড়া আর কী বলা যায়?
রোগ যেমন কিছু বছর পরপর পাল্টায়, আতঙ্কটাও তেমনি কিছু বছর পরপর শুরু হয়। আর বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের নামে যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, এটা ফ্লুরই অ্যাকটিভ ভ্যারিয়েশন। যেটা কখনও সার্স নামে, কখনও সোয়াইন ফ্লু নামে, কখনও আরেক ফ্লু নামে- বিভিন্ন সময়ে নতুন নামকরণ নিয়ে আসে। কারণ প্রত্যেকটা রোগের ধরন কিছু বছর পরে পাল্টায় এবং আতঙ্কটাও এই কিছু বছর পরে শুরু হয়। যখন একটা নতুন নামকরণ করা যায় তখন।
আসলে আমরা যেটাকে জ্বর-সর্দি-কাশি বলি, ইউরোপ-আমেরিকাতে এটাকেই ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা বলা হয়। অর্থাৎ এটা নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, শীতকালের রোগ। শীত আসা এবং শীত যাওয়ার সময়। আমরা যদি দেখি, ২০১৬-১৭ সালে মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দুই কোটি ৯০ লাখ মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে পাঁচ লাখ ব্যক্তিকে, মারা গেছে ৩৮ হাজার।
মজার ব্যাপার যেটা হচ্ছে, ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, চীনের পরে চীনের কাছাকাছি চীনের আরেকটা ভাই আছে। সেটা হচ্ছে তাইওয়ান। কারণ আপনারা জানেন, তাইওয়ান চীনের অংশ ছিল একসময়। তারা বলছিল, তাইওয়ানে পরিস্থিতি হবে সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ কাছাকাছি। দেখতে-শুনতে এক রকম। খাওয়া-দাওয়াও এক রকম; কিন্তু তাইওয়ানে আক্রান্ত ও মৃত প্রায় নগণ্য।
যে চীনে করোনা ছড়ানোর পরেই অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা গুজব ছড়ায় যে, দক্ষিণ তাইওয়ানে ট্রাকে ট্রাকে লাশ চুল্লিতে নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। এই গুজব ঠেকানোর জন্য তাইওয়ানের টিভি এবং রেডিও-গণমাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, সংক্রমণ ঠেকানোর উপায় কী- এটা তারা খুব ইতিবাচকভাবে প্রচার করে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে আশ্বস্ত হয় এবং সময়মতো কার্যকরী পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। আর ওই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে যেটা হয়েছে, সেখানে বিদেশফেরত প্রত্যেককে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তারা কোয়ারেন্টাইনে কী করেছেন? প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর তিনি বাসায় আছেন কিনা, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মধ্য দিয়ে এবং কঠোর জরিমানার ব্যবস্থা। সেখানে প্রত্যেকটা অ্যাপার্টমেন্ট, প্রত্যেকটা শপ- সব খোলা। শুধু হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। আমরাও সেটা করতে পারি। হাত ধোয়াটা আমরা 'বাংলা সাবান' দিয়ে করলে খরচ কমবে। কারণ বাংলা সাবানের মতো এ রকম চমৎকার পরিস্কারক আর কিছু নেই। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া অনেকটা সফলভাবে এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে পেরেছে। দেশটির মূল কৌশল ছিল স্বচ্ছতা, উন্মুক্ততা ও জনগণকে সম্পূর্ণরূপে অবস্থিত ও সম্পৃক্ত করা। তারা প্রথমেই টেস্টিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়। ফলে আক্রান্তদের দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। চীনের সীমান্তবর্তী দেশ নেপালে মোট আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র চারজন। তাদের প্রথম আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে।
আসলে শুধু পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত যে শুদ্ধাচার, সেটা যদি আমরা অনুসরণ করি, তাহলে সংকট আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আর যেটা ডাক্তাররা বলছেন, মানে সরকার বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে, হাতটাকে ভালোভাবে ধোয়া এবং কারও হাঁচি-কাশি বা এই জাতীয় কোনো কিছু দেখলে তার থেকে দুই থেকে তিন ফিট দূরত্ব রক্ষা করা।
বাঙালির যেটা সবচেয়ে বড় শক্তি সেটা হচ্ছে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যে কোনো সংকট কাটিয়ে ওঠার যে ক্ষমতা, আমাদের যে ব্রেইন পাওয়ার- কারণ সবসময় দুর্যোগের মধ্যে আমরা বসবাস করে আসছি। আমাদের পূর্বপুরুষদের দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো জুড়ি নেই। করোনাকে এই জাতির ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কোয়ারেন্টাইনটা আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করা উচিত জীবনের জন্য। কারণ মানুষ আসলে খুব কম সময় পায়, সুযোগ পায় এমন রকম নির্জন থাকার, পরিবার-পরিজনকে সময় দেওয়ার। যে যার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি আসে আবার মানসিক স্বস্তিও আসে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া যায়। শুনতে খারাপ হলেও এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকলে ভালো হয়। কারণ এ রকম নেতিবাচক সংবাদ মানুষকে শুধু অস্থিরতাই দিতে পারে, আর কিছুই নয়।
সাংবাদিক
সত্য হচ্ছে, করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হন, তাদের ৮১ শতাংশ মাইল্ড বা ক্ষুদ্র অসুস্থ হন। যেটার জন্য হাসপাতালে যাওয়ারও কোনো প্রয়োজন হয় না। ১৪ শতাংশ অসুস্থ হন, তাদের হাসপাতালে নিতে হয়। বাকি ৫ শতাংশ জটিল। ইনটেনসিভ কেয়ারে বা নিবিড় পরিচর্যায় নিতে হয়। তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে। তাহলে যেই রোগের ৮১ শতাংশের জন্য হাসপাতালেও নেওয়ার প্রয়োজন হয় না; ক্ষুদ্র সর্দি-কাশি-জ্বর মানে ফ্লু ছাড়া আর কী বলা যায়?
রোগ যেমন কিছু বছর পরপর পাল্টায়, আতঙ্কটাও তেমনি কিছু বছর পরপর শুরু হয়। আর বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের নামে যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, এটা ফ্লুরই অ্যাকটিভ ভ্যারিয়েশন। যেটা কখনও সার্স নামে, কখনও সোয়াইন ফ্লু নামে, কখনও আরেক ফ্লু নামে- বিভিন্ন সময়ে নতুন নামকরণ নিয়ে আসে। কারণ প্রত্যেকটা রোগের ধরন কিছু বছর পরে পাল্টায় এবং আতঙ্কটাও এই কিছু বছর পরে শুরু হয়। যখন একটা নতুন নামকরণ করা যায় তখন।
আসলে আমরা যেটাকে জ্বর-সর্দি-কাশি বলি, ইউরোপ-আমেরিকাতে এটাকেই ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা বলা হয়। অর্থাৎ এটা নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, শীতকালের রোগ। শীত আসা এবং শীত যাওয়ার সময়। আমরা যদি দেখি, ২০১৬-১৭ সালে মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দুই কোটি ৯০ লাখ মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে পাঁচ লাখ ব্যক্তিকে, মারা গেছে ৩৮ হাজার।
মজার ব্যাপার যেটা হচ্ছে, ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, চীনের পরে চীনের কাছাকাছি চীনের আরেকটা ভাই আছে। সেটা হচ্ছে তাইওয়ান। কারণ আপনারা জানেন, তাইওয়ান চীনের অংশ ছিল একসময়। তারা বলছিল, তাইওয়ানে পরিস্থিতি হবে সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ কাছাকাছি। দেখতে-শুনতে এক রকম। খাওয়া-দাওয়াও এক রকম; কিন্তু তাইওয়ানে আক্রান্ত ও মৃত প্রায় নগণ্য।
যে চীনে করোনা ছড়ানোর পরেই অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা গুজব ছড়ায় যে, দক্ষিণ তাইওয়ানে ট্রাকে ট্রাকে লাশ চুল্লিতে নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। এই গুজব ঠেকানোর জন্য তাইওয়ানের টিভি এবং রেডিও-গণমাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, সংক্রমণ ঠেকানোর উপায় কী- এটা তারা খুব ইতিবাচকভাবে প্রচার করে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে আশ্বস্ত হয় এবং সময়মতো কার্যকরী পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। আর ওই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে যেটা হয়েছে, সেখানে বিদেশফেরত প্রত্যেককে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তারা কোয়ারেন্টাইনে কী করেছেন? প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর তিনি বাসায় আছেন কিনা, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মধ্য দিয়ে এবং কঠোর জরিমানার ব্যবস্থা। সেখানে প্রত্যেকটা অ্যাপার্টমেন্ট, প্রত্যেকটা শপ- সব খোলা। শুধু হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। আমরাও সেটা করতে পারি। হাত ধোয়াটা আমরা 'বাংলা সাবান' দিয়ে করলে খরচ কমবে। কারণ বাংলা সাবানের মতো এ রকম চমৎকার পরিস্কারক আর কিছু নেই। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া অনেকটা সফলভাবে এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে পেরেছে। দেশটির মূল কৌশল ছিল স্বচ্ছতা, উন্মুক্ততা ও জনগণকে সম্পূর্ণরূপে অবস্থিত ও সম্পৃক্ত করা। তারা প্রথমেই টেস্টিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়। ফলে আক্রান্তদের দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। চীনের সীমান্তবর্তী দেশ নেপালে মোট আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র চারজন। তাদের প্রথম আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে।
আসলে শুধু পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত যে শুদ্ধাচার, সেটা যদি আমরা অনুসরণ করি, তাহলে সংকট আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আর যেটা ডাক্তাররা বলছেন, মানে সরকার বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে, হাতটাকে ভালোভাবে ধোয়া এবং কারও হাঁচি-কাশি বা এই জাতীয় কোনো কিছু দেখলে তার থেকে দুই থেকে তিন ফিট দূরত্ব রক্ষা করা।
বাঙালির যেটা সবচেয়ে বড় শক্তি সেটা হচ্ছে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যে কোনো সংকট কাটিয়ে ওঠার যে ক্ষমতা, আমাদের যে ব্রেইন পাওয়ার- কারণ সবসময় দুর্যোগের মধ্যে আমরা বসবাস করে আসছি। আমাদের পূর্বপুরুষদের দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো জুড়ি নেই। করোনাকে এই জাতির ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কোয়ারেন্টাইনটা আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করা উচিত জীবনের জন্য। কারণ মানুষ আসলে খুব কম সময় পায়, সুযোগ পায় এমন রকম নির্জন থাকার, পরিবার-পরিজনকে সময় দেওয়ার। যে যার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি আসে আবার মানসিক স্বস্তিও আসে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া যায়। শুনতে খারাপ হলেও এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকলে ভালো হয়। কারণ এ রকম নেতিবাচক সংবাদ মানুষকে শুধু অস্থিরতাই দিতে পারে, আর কিছুই নয়।
সাংবাদিক
মন্তব্য করুন