
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এ সময়ের আলোচিত এক অভিনেত্রীকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার, রিমান্ড আবেদন, কারাগারে পাঠানো এবং জামিনে বের হওয়ার ঘটনায় দেখা গেল, একটি সাধারণ আইনি প্রক্রিয়ার জল কতদূর গড়াতে পারে। পুরো ঘটনার ব্যাপ্তি মাত্র আট ঘণ্টার। এর মধ্যে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। আর তা ঢেউ তুলেছে তাঁর জীবন ছাপিয়ে সমাজ ও সামাজিক মাধ্যমে।
ঘটনার সূত্রপাত একটা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে। বিরোধের একটি পক্ষ মাহিয়া মাহি ফেসবুকে লাইভে এসে গাজীপুরের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নায়িকার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরছিলেন তিনি। এই অভিনেত্রী ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে একই দিনে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী আরও একটি মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- ‘চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তাঁর স্বামী রকিব সরকার অপমান, অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকার তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপরাধ করেছেন। এ কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাঁদের নামে মামলা করা হয়েছে।’
তবে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে জামিন না মিললেও বিকেলে নতুন করে আবেদনের পর জামিন মিলেছে। অভিনেত্রীর আইনজীবী বলেছেন, অভিনেত্রী ‘সন্তানসম্ভবা ও সেলিব্রিটি’– এই বিবেচনায় তাঁকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আইনজীবী বলেছেন, দুপুরে জামিন আবেদন করতে পারেননি বলে আদালত মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠালেও এর পরেই তাঁরা জামিন আবেদন দাখিল করেন। বিশেষত আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত হওয়া একজন সন্তানসম্ভবা যে কোনো বিবেচনাতেই মানবিক আচরণ প্রত্যাশা করতে পারেন। সে হিসেবে মাহি যে শেষ পর্যন্ত জামিন পেয়েছেন, তা যে কোনো সংবেদনশীল মানুষের জন্যই স্বস্তিকর।
এই ঘটনার শেষ দৃশ্যে দেখা যাবে, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি পাঁচ ঘণ্টার কারাবাস থেকে বের হয়ে আবারও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। সেখানে তিনি আবারও দৃঢ়ভাবে দাবি করেছেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা মাহি ও তাঁর স্বামীর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে তাঁদের বিপক্ষে কাজ করছেন। এর আগে ফেসবুকে বলার কারণে আইসিটি আইনে মামলা করা হলেও এইবার প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবির পর অবশ্য আর কিছু ঘটেনি।
আমরা তর্কের খাতিরে ধরে নিতে পারি, ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘুষ নেননি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যখন একজন অভিযোগ তুললেন, তখন কেন এই বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কেউ তদন্ত করে দেখবেন না? দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এবারই যে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেল, বিষয়টি তা নয়। তাই একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অসত্য প্রমাণের চেষ্টা না করে যখন অভিযুক্তকে আইসিটি অ্যাক্টের মতো বিতর্কিত আইনের ফাঁদে ফেলতে চাইছেন, তখন তাঁর পেশাগত আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ করার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়।
অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি দেশের অতি পরিচিত মুখ। তাঁর স্বামী গাজীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মাহি নিজেও আওয়ামী লীগের একটি উপকমিটির সদস্য। স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর অভিনেত্রীর আয়নায় একসঙ্গে বেশ কিছু চলচ্চিত্র দেখা হয়ে গেল আরও অনেকের।
এহ্সান মাহমুদ: সহ-সম্পাদক, সমকাল
মন্তব্য করুন