ঢাকা শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্যক্তি কীভাবে নদীর মালিক হন?

ব্যক্তি কীভাবে নদীর মালিক হন?

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ০৪:০৭

দেশে নদী দখলের ইতিহাসে স্মরণীয় হইয়া থাকিবে হবিগঞ্জের শুটকি নদীর নাম। যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার পর প্রথম কোন নদী ব্যক্তিমালিকানায় চলিয়া গিয়াছে; তাহা হইলে এই মনোরম নদীর নাম আসিবে। যদি বলা হয়, কোন নদীর মালিকানার মামলা অর্ধশতাধিক বৎসরব্যাপী চলমান; তাহা হইলেও শুটকি নদীর নাম আসিবে।

যদি বলা হয়, কোন নদী উদ্ধার করিতে গিয়া প্রশাসনের ছয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সিভিল জেল নামক শাস্তি হইয়াছে; সেই ক্ষেত্রেও শুটকি নদীর কথাই বলিতে হইবে। এই বৎসরের ২২ মে সমকালে নদীটির উপর দখলের বিবরণসমেত সরেজমিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ইহার চার মাসেরও অধিক কাল পর ঢাকায় কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন দেশের শীর্ষ পরিবেশকর্মীদের লইয়া এক সংবাদ সম্মেলনের অনুষ্ঠান করে।

গত শনিবারের সেই সংবাদ সম্মেলনে নদীটি উদ্ধারে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি তাগিদ জানানো হইয়াছে। আমরাও অনুরূপ দায়িত্ববোধ হইতে বলিতে চাহি, ৫০ বৎসর ধরিয়া দখলে থাকা একটা জীবন্ত নদীকে উদ্ধার করা না হইলে সরকারের অক্ষমতাই শুধু নহে; দায়িত্বহীনতাও প্রকাশ পাইবে।

হবিগঞ্জের হাওর এলাকার মধ্য দিয়া প্রবাহিত নদীর প্রায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের মালিকানা ভোগ করিতেছে এলাকার সাবেক জমিদার পরিবার। একটি সাইনবোর্ডসর্বস্ব ফিশারি কোম্পানির নামে নদীটির মালিকানা দাবি করিয়া আদালতে মামলাও করা হইয়াছে। বর্ষায় দুই কূল উপচানো জলরাশি আর গ্রীষ্মে নৌপরিবহনের উপযোগী যেই নদী, তাহা জীবন্ত বটে। অথচ উহাকেই কিনা বদ্ধ জলাভূমি দাবি করিয়া ব্যক্তিগত সম্পত্তি তথা জলমহাল বলিয়া ভোগদখল  করা হইতেছে। এই নদী আবার নাকি ইজারাও দেওয়া চলে। নদীতে বৎসরে কত কোটি টাকার মাছ আহরণ করা হয়, তাহার ইয়ত্তা নাই।

প্রথম কথা হইল, নদীকে আদালতের রায়ের মাধ্যমেই ব্যক্তিমালিকানায় অর্পণ করা হইয়াছিল। কারণ, হবিগঞ্জের ইয়াহিয়া ফিশ ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে দেওয়ান ইয়াহিয়া রাজা নদীর মালিকানা দাবি করিয়া যে স্বত্ব মামলা করিয়াছিলেন, তাহাতে নদীকে বিল দেখাইয়া আদালতকে ধোঁকা দেওয়া হইয়াছিল। তৎপরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সরকারপক্ষের গাফিলতি ও অনুপস্থিতির সুযোগে আদালতের রায়ের মাধ্যমে ইয়াহিয়া রাজা শুটকি নদীর মালিক হইয়া যান। এই অবস্থার অবসান হওয়া অত্যাবশ্যক।

সরকারের নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই নদীর প্রতি স্ব স্ব অঙ্গীকার প্রমাণ করিতে হইবে।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×