আমন মৌসুমের মতো এবারের বোরো মৌসুমেও দেশের ২২টি উপজেলায় 'কৃষক' অ্যাপের মাধ্যমে সরকার ধান ক্রয় করবে- মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের এই তথ্য উৎসাহব্যঞ্জক সন্দেহ নেই। 'প্রকৃত' কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা নিয়ে প্রায় প্রতিবছরই যে জটিলতা তৈরি হয়, তা নিরসনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের উদ্ভাবনীমূলক ব্যবস্থা নিশ্চয়ই সাধুবাদযোগ্য। এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কৃষকের হাতে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পৌঁছানো সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু তারও আগে কি ক্ষেতের ধান কৃষক যাতে গোলায় তুলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে না? আমরা দেখছি, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার এমন সময় ঘটছে, যখন মাঠে মাঠে কাটার অপেক্ষায় রয়েছে বোরো ধান। কিন্তু 'লকডাউন' পরিস্থিতিতে এসব ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত ও সময়োচিত শ্রমিক মিলছে না। ধান উৎপাদনের প্রধান অঞ্চলগুলোতে সাধারণত এই সময়ে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিকরা গিয়ে ভিড় করেন। এবার তো সেই শ্রমিকরা ঘরের বাইরেই বের হতে পারছেন না, দূর অঞ্চলে গিয়ে ভিড় করা দূরে থাক।
বস্তুত আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, সবচেয়ে আগাম যে অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেই হাওর এলাকায় ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির খবর পাওয়া যাচ্ছে উজানের ভারতীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়েও। এই বৃষ্টির পানি গড়িয়ে এসে হাওরাঞ্চলে প্রতিবছর আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করে। কখনও কখনও তলিয়ে যায় ক্ষেতের পাকা ফসল। সে কারণে ওই অঞ্চলের চাষিদের লক্ষ্য থাকে বৈশাখ মাসের আগেই ধান কেটে ঘরে তোলা। এই মৌসুমে ঠিক সেই মুহূর্তেই যখন শুরু হয়েছে করোনা-সংকট, তখন বৈশাখের মাঝামাঝি সময়েও ধান তোলা সম্পন্ন হয় কিনা সন্দেহ। আমরা দেখছি, এই উদ্বেগ কৃষকের বাইরে অন্যদেরও স্পর্শ করেছে। হাওরাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষে ধান কাটায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। যদিও এসব শেষ পর্যন্ত প্রতীকায়নের বাইরে কার্যকরভাবে কৃষকের জন্য কতটা সহায়ক হবে, সেই সন্দেহ রয়েই যাবে। তবুও আমরা চাই, ছাত্রলীগের এই নজির অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অনুসরণ করতে পারে।
আমরা মনে করি, মাঠের ধান ঘরে তোলার স্বার্থে হলেও শ্রমিকদের ধানপ্রধান অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আশার কথা, দেশের কয়েকটি জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে ধান কাটা শ্রমিকদের ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠানো শুরু হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ক্ষেতের মালিক প্রদত্ত মজুরির বাইরেও প্রশাসন থেকে শ্রমিকদের খাদ্য প্রণোদনার উদ্যোগটি সেক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে আশা করা যায়। ধান কাটার যন্ত্র কৃষকের কাছে পৌঁছানোর জন্য ভর্তুকিমূলক যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও ইতিবাচক। আমাদের কথা, যা করার দ্রুত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার অর্থ হচ্ছে শ্রমিক বা যন্ত্র প্রেরণ অনর্থক হয়ে পড়ার আশঙ্কা।
স্বীকার করতে হবে, এই মুহূর্তে ধান কাটার ক্ষেত্রে হাওরাঞ্চল অগ্রাধিকার। কিন্তু তাতে করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ধান কাটা যেন পিছিয়ে না যায়। মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে গোটা দেশেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, বোরো মৌসুমের ধান সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা তাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর যদি ফসল মাঠেই মারা যায়, তা গোটা দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। আমরা দেখতে চাই, করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কৌশলের মধ্যে কৃষকের ধান ঘরে তোলা অগ্রাধিকার পেয়েছে। চাষির ব্যক্তি উদ্যোগ ছাড়াও প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া তা বাস্তবায়ন কঠিন। মনে রাখতে হবে, কৃষকের গোলায় ধান তুলে দেওয়া এই দুঃসময়ে জাতীয় কর্তব্যেরই নামান্তর। গোটা দেশেই এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
ধান গোলায় ওঠার পর উৎপাদক কৃষকের হাতে ন্যায্যমূল্য পৌঁছানোর দায়িত্বও এই দফায় আরও আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কৃষক অ্যাপ ২২ উপজেলার বাইরেও গোটা দেশেই চালু করার সুপারিশ করি আমরা। আমাদের মনে আছে, আমন মৌসুমেই ১৬ জেলার ১৬ উপজেলায় এই ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক চালুর পর বলা হয়েছিল যে, বোরো মৌসুমে অন্তত ৬৪ জেলায় এই অ্যাপ চালু করা হবে। 'করোনা পরিস্থিতিতে' তা কমিয়ে ২২ উপজেলায় কেন আনা হলো, আমাদের বোধগম্য নয়। যোগাযোগ যখন বিচ্ছিন্ন, সুষ্ঠুভাবে ধান সংগ্রহ এবং কৃষকের হাতে ন্যায্যমূল্য দেওয়া যখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি; তখনই এ ধরনের অ্যাপের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি ছিল নাকি? সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি, এই সিদ্ধান্ত আমরা পুনর্বিবেচনা করতে বলি।
বস্তুত আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, সবচেয়ে আগাম যে অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেই হাওর এলাকায় ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির খবর পাওয়া যাচ্ছে উজানের ভারতীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়েও। এই বৃষ্টির পানি গড়িয়ে এসে হাওরাঞ্চলে প্রতিবছর আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করে। কখনও কখনও তলিয়ে যায় ক্ষেতের পাকা ফসল। সে কারণে ওই অঞ্চলের চাষিদের লক্ষ্য থাকে বৈশাখ মাসের আগেই ধান কেটে ঘরে তোলা। এই মৌসুমে ঠিক সেই মুহূর্তেই যখন শুরু হয়েছে করোনা-সংকট, তখন বৈশাখের মাঝামাঝি সময়েও ধান তোলা সম্পন্ন হয় কিনা সন্দেহ। আমরা দেখছি, এই উদ্বেগ কৃষকের বাইরে অন্যদেরও স্পর্শ করেছে। হাওরাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষে ধান কাটায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। যদিও এসব শেষ পর্যন্ত প্রতীকায়নের বাইরে কার্যকরভাবে কৃষকের জন্য কতটা সহায়ক হবে, সেই সন্দেহ রয়েই যাবে। তবুও আমরা চাই, ছাত্রলীগের এই নজির অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অনুসরণ করতে পারে।
আমরা মনে করি, মাঠের ধান ঘরে তোলার স্বার্থে হলেও শ্রমিকদের ধানপ্রধান অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আশার কথা, দেশের কয়েকটি জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে ধান কাটা শ্রমিকদের ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠানো শুরু হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ক্ষেতের মালিক প্রদত্ত মজুরির বাইরেও প্রশাসন থেকে শ্রমিকদের খাদ্য প্রণোদনার উদ্যোগটি সেক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে আশা করা যায়। ধান কাটার যন্ত্র কৃষকের কাছে পৌঁছানোর জন্য ভর্তুকিমূলক যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও ইতিবাচক। আমাদের কথা, যা করার দ্রুত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার অর্থ হচ্ছে শ্রমিক বা যন্ত্র প্রেরণ অনর্থক হয়ে পড়ার আশঙ্কা।
স্বীকার করতে হবে, এই মুহূর্তে ধান কাটার ক্ষেত্রে হাওরাঞ্চল অগ্রাধিকার। কিন্তু তাতে করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ধান কাটা যেন পিছিয়ে না যায়। মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে গোটা দেশেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, বোরো মৌসুমের ধান সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা তাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর যদি ফসল মাঠেই মারা যায়, তা গোটা দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। আমরা দেখতে চাই, করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কৌশলের মধ্যে কৃষকের ধান ঘরে তোলা অগ্রাধিকার পেয়েছে। চাষির ব্যক্তি উদ্যোগ ছাড়াও প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া তা বাস্তবায়ন কঠিন। মনে রাখতে হবে, কৃষকের গোলায় ধান তুলে দেওয়া এই দুঃসময়ে জাতীয় কর্তব্যেরই নামান্তর। গোটা দেশেই এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
ধান গোলায় ওঠার পর উৎপাদক কৃষকের হাতে ন্যায্যমূল্য পৌঁছানোর দায়িত্বও এই দফায় আরও আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কৃষক অ্যাপ ২২ উপজেলার বাইরেও গোটা দেশেই চালু করার সুপারিশ করি আমরা। আমাদের মনে আছে, আমন মৌসুমেই ১৬ জেলার ১৬ উপজেলায় এই ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক চালুর পর বলা হয়েছিল যে, বোরো মৌসুমে অন্তত ৬৪ জেলায় এই অ্যাপ চালু করা হবে। 'করোনা পরিস্থিতিতে' তা কমিয়ে ২২ উপজেলায় কেন আনা হলো, আমাদের বোধগম্য নয়। যোগাযোগ যখন বিচ্ছিন্ন, সুষ্ঠুভাবে ধান সংগ্রহ এবং কৃষকের হাতে ন্যায্যমূল্য দেওয়া যখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি; তখনই এ ধরনের অ্যাপের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি ছিল নাকি? সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি, এই সিদ্ধান্ত আমরা পুনর্বিবেচনা করতে বলি।
বিষয় : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন