- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- করোনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই
করোনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই

এখন বিশ্বব্যাপী করোনা ত্রাস চলছে। জন্মভূমি বাংলাদেশও এখন আক্রান্ত। জনজীবন ঘরে বন্দি হয়ে আছে। দেশের প্রায় সব মানুষই কর্মহীন গৃহবন্দী জীবন যাপন করছে। তবে সবচেয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন রাজনীতিবিদেরা। বিশেষত যারা প্রবীণ রাজনীতিবিদ। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা প্রতিনিয়ত তাদের প্রিয় এলাকাবাসীর কাছে যেতে পারছেন না। যাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা হতো, সুখ-দুঃখের অংশীদার হতো, তাদের এখন বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রিয় এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে এবং সার্বিক সহযোগিতা করতে হচ্ছে।
এই সময় আমাদের সেই কারাজীবনের কথা বারবার মনে হয়, যখন কারাবন্দি থেকে বিভিন্ন সময়ে কিছু সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হতো। আমরা তো একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বেশিরভাগ সময় এলাকার জনগণের সঙ্গে অবস্থান করতাম এবং জনগণের সুখ-দুঃখের সাথী হতাম। এছাড়াও প্রতিনিয়ত এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করতাম।
আওয়ামী লীগ একটি জনমুখী রাজনৈতিক দল। দুঃসময়ে ও দুর্যোগের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনোদিনও ঘরে বসে থাকেনি। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেমন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তেমনি '৭৫ পরবর্তী কালেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল স্বৈরাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই করেছে, রক্ত দিয়েছে, বারবার কারা নির্যাতন ভোগ করেছে, কিন্তু মাঠ ছেড়ে যায়নি। আজও এই করোনাভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যেও সারাদেশব্যাপী গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের অঙ্গসংগঠনের শতশত নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত এরা দরিদ্র দুস্থ এবং কর্মহীন মানুষকে খাদ্য সহায়তা এবং ওষুধ দিয়ে সহায়তা করছে।
প্রায় প্রতিদিনই আমরা যার যার নিজস্ব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সার্বিক সহযোগিতা করছি এবং ত্রাণকার্য মনিটরিং করা হচ্ছে। সরকারি ত্রাণ যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের উপরে অব্যাহত তদারকি বজায় রাখা হচ্ছে। কোথাও কোনো বিচ্যুতি ঘটলে তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনা প্রতিপালন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন আন্তরিকভাবে এই ত্রাণকার্যে অংশগ্রহণ করছে। মানুষ মানুষের জন্য- এই কথাটি দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সময় বাংলাদেশে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
সমাজে কিছু দুষ্টু গ্রহ দুর্বৃত্ত থাকে, যারা এই দুর্বিপাকের সময় অসদুপায় অবলম্বন করে থাকে। এরা যুগ যুগ ধরে অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে। কিন্তু তারপরেও এই বিশাল সহযোগিতার কর্মকাণ্ডকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একজন সত্যিকারের রাজনীতিবিদের সব সময়ের জন্য জনগণের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এদেশে কিছু সুবিধাবাদী সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি রাজনৈতিক দলে ভিড়ে, তাদেরকে দুঃসময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের রাজনীতির ইতিহাসে এই রকম কিছু সুবিধাবাদী আগেও ছিল, এখনও আছে। এদের চেহারা মানুষ জানে এবং চেনে। এদের নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অতীতে অনেক দুঃসময় পাড়ি দিয়েছি, এবারও ইনশাআল্লাহ, এই দুঃসময় অতিক্রম করবো।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি মানুষকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটি থেকে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে খাদ্য এবং চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।
আজকে চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মী গণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে সাহস এবং ত্যাগের মধ্য দিয়ে করোনা প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে, তা অবশ্যই ব্যাপক প্রশংসার দাবি রাখে। সাংবাদিকরাও এই যুদ্ধে এগিয়ে এসেছে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছেন এবং একজন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতি তাদেরকে সালাম জানায়। রাজনৈতিক কর্মীদের বাইরেও তরুণ-যুবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই যুদ্ধে এগিয়ে এসেছে। আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্র যুবক তরুণেরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে- এটি একমাত্র বাংলাদেশ এবং বাঙালির পক্ষেই সম্ভব।
এখন দূর থেকে ঘরে বসে অযৌক্তিক সমালোচনা করার সময় নয়। যার যার অবস্থান থেকে এই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য শরিক হওয়ার সময়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অতীতে সকল দুঃসময় এবং দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও সামনে থেকে করোনা বিরোধী যুদ্ধে যোগ্য সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ জয়ী হবেই।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সমন্বয়ক, কেন্দ্রীয় ১৪ দল
মন্তব্য করুন