- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- মুরগি, ডিম ও গুজব
মুরগি, ডিম ও গুজব

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারির কারণে দেশের অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে পোলট্রি শিল্পের ওপর। চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের পোলট্রি শিল্প ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। লকডাউন ও করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার স্বার্থে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এর ফলে বাজারে কেনাকাটাও কমেছে। বিগত এক মাসে মুরগি ও ডিম বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় গোটা পোলট্রি শিল্পের অবস্থা ক্রমান্বয়ে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে পোলট্রি শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক গুজব। ব্রয়লার মুরগি ও ডিম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। মুরগির মাংস বা ডিম থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়- এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তথ্য জানায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা অন্য কোনো সংগঠন। অথচ বাংলাদেশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে একটি পক্ষ। এর ফলে মুরগির মাংস ও ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। এমন আতঙ্কের মধ্যে গত এক মাসে মুরগির বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। গুজবের কারণে মুরগির মাংসের দামও হু-হু করে কমছে। মুরগি বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) মতে, ইতোমধ্যে ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মুরগির মাংস বা ডিম নিয়ে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তা সত্য নয়। এ ধরনের গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুজবটি সরাসরি নাকচ করেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মুরগি ও ডিম নিয়ে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তার কোনো সত্যতা নেই।
করোনাভাইরাসের এই সংকট মুহূর্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশি করে মুরগির মাংস ও ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমেও এ ধরনের তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকের পরিস্কার ধারণা নেই। ডিম ও মাংস উচ্চপুষ্টিসম্পন্ন আমিষ জাতীয় খাদ্য। ব্রয়লার মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এই মাংস ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় কিডনি, লিভার, স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ব্রয়লার মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন ও জিঙ্ক থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চমানের। ডিমে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই একে সুপার ফুডও বলা হয়। কিন্তু গুজবের কারণে অনেকে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো এড়িয়ে চলছেন। অথচ, এত কম দামে এর চেয়ে ভালো তেমন কোনো পুষ্টিকর খাবার পাওয়া যায় না।
আমাদের দেশে সহজেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কিছু লিখলেই অসংখ্য মানুষ তার সতত্য যাচাই না করেই বিশ্বাস করে নেন। এ প্রবণতার কারণে আমাদের দেশে পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এর ফলে একদিকে মানুষের পুষ্টি চাহিদায় ঘাটতি থাকছে, অন্যদিকে পোলট্রি মালিক ও ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে উদ্যোক্তারা এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এতে কয়েক লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন খাতে সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারাও যাতে এই প্রণোদনার সুবিধা পান, সরকারকে সেদিকে অবশ্যই নজর দেওয়া দরকার। একই সঙ্গে গুজব মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগে প্রচারণা চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মাধ্যমে করোনা ছড়ায়- সারাবিশ্বে তার একটিও প্রমাণ নেই। করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে মুরগির মাংস ও ডিম হতে পারে করোনা মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার। এ ক্রান্তিকালে সবার উচিত গুজব এড়িয়ে চলা। গুজবে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে বেশি করে ডিম এবং মুরগির মাংস খাই। কম দামে উচ্চ আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।
ব্যবস্থাপক, আফিল এগ্রো লিমিটেড
মন্তব্য করুন