- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- 'ম্যাপড ইন বাংলাদেশ'
'ম্যাপড ইন বাংলাদেশ'

বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আশির দশক থেকেই তৈরি পোশাক খাত দেশীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৩ সালে এক হাজার একশ' শ্রমিকের প্রাণহানি এবং আড়াই হাজারেরও অধিক শ্রমিকের আহত হওয়ার সাক্ষী হওয়া সেই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ছিল বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নের জন্য বিশাল এক বিপত্তি। কোভিড-১৯-এর বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য অঘোষিত লকডাউনে যখন দেশের তৈরি পোশাক খাতও আক্রান্ত, তখনই গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সপ্তম বর্ষ অতিক্রান্ত হলো।
রানা প্লাজা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ গৃহীত হয়। বহুল আলোচিত অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স এবং আরও কিছু উদ্যোগের ন্যায় একটি প্রকল্প হলো 'ম্যাপড ইন বাংলাদেশ'। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওন্ট্রেপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট। এই প্রকল্পের অধীনে একটি ডিজিটাল মানচিত্র [www.mappedinbangladesh.org]
নির্মিত হয়েছে যেখানে বাংলাদেশের সব রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানার তথ্য সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শিত হবে।
তৈরি পোশাক খাতের ব্যাপৃত এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ঘাটতি পূরণ করাই হলো এই মানচিত্রের অন্যতম লক্ষ্য। এই মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া তথ্যের মধ্যে আছে- কারখানার নাম ও ঠিকানা, কারখানার সদস্যপদ (বিজিএমইএ/বিকেএমইএ), কারখানার ধরন, কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের ধরন, কারখানার প্রস্তুত-প্রক্রিয়া, কারখানার সংশ্নিষ্টতা ও সনদ প্রাপ্তি, কারখানার শ্রমিক সংখ্যা (নারী ও পুরুষ শ্রমিকের অনুপাতসহ), কারখানার দালান কাঠামো, কারখানার ক্রেতা (বায়ারস ও বায়ারস ও ব্র্যান্ডস), কারখানার পণ্য রপ্তানি করা দেশগুলো, কারখানা থেকে নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন ও হাসপাতালের দূরত্ব ইত্যাদি। ইতোমধ্যে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের দুই হাজার পাঁচশ' ছাব্বিশটি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার তথ্য মানচিত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
কভিড-১৯-এর সংকটকালীন সময়ে এখনও বিষয়টি পরিস্কার নয় যে, কবে থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত তার সম্পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে চালু হবে, যদিও ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে পরিচালিত হওয়ার শর্তে বেশ কিছু পোশাক কারখানা সম্প্রতি চালু হয়েছে। এই পোশাক কারখানায় আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা এবং পোশাক শ্রমিকদের কারখানায় যাতায়াতে আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনো ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ম্যাপড ইন বাংলাদেশের ডিজিটাল মানচিত্রটি ব্যবহার করা সম্ভব।
যেহেতু এই মানচিত্রটি গুগল মানচিত্রের অনুরূপ, তাই এটি ব্যবহার করে সরকার, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি বা বিজিএমইএ সহজেই থানা অনুযায়ী পোশাক কারখানাগুলো চিহ্নিত করতে পারবে। একই সঙ্গে কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় যাতায়াতের জন্য কোন কোন পথ অনুসরণ করছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা যেতে পারে, যেন যাতায়াতকালে শ্রমিকরা নিরাপদ থাকে। লকডাউন চলাকালীন শ্রমিকদের চলাফেরার মাঝে সাধারণ মানুষ যেন মিশে না যায় সেজন্য নির্ধারিত পথে চেকপোস্টও বসানো যেতে পারে। একই সঙ্গে এসব পথে স্বাস্থ্য ডেস্ক, হাত ধোয়ার সুবিধা এবং জীবাণুমুক্তকরণ বুথ বসানোর জন্য এনজিও ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। কোন কোন পথগুলো পরিছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, তা নির্ধারণের জন্য সিটি করপোরেশনগুলোও এই মানচিত্রটি ব্যবহার করতে পারে। যদি কোনো শ্রমিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও মানচিত্রে উল্লিখিত কারখানাগুলোর নিকটবর্তী হাসপাতালের তথ্যও এক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগিতা করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে যদি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সীমিত আকারে হলেও কারখানাগুলো চালু রাখতে হয়, তাহলে সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্নিষ্টদের তথ্য দিয়ে যদি কোনো সাহায্য করা যায়, তার জন্য ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্প সদাআগ্রহী এবং প্রস্তুত রয়েছে।
লেখকদ্বয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে
সেন্টার ফর ওন্ট্রেপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্টে কর্মরত
mappedinbangladesh@bracu.ac.bd
মন্তব্য করুন