- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- করোনাকালে শিশুর টিকা
করোনাকালে শিশুর টিকা

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বেশ সফলতা অর্জন করে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে আমাদের অবস্থান বিশ্বে প্রশংসনীয় হয়েছে। গত ২০ বছরে শিশু মৃত্যুহার ৬৩ শতাংশ কমেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২৬.১ জন। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে আমরা এগিয়ে আছি। মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের টার্গেট নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে এই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে সফল টিকাদান কর্মসূচি। আমাদের দেশে অভিভাবকরা এই ব্যাপারে বরাবর যথেষ্ট সচেতন। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত আতঙ্ক আমাদের শিশুদের টিকাদান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবক শিশুদের টিকা দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। সিটি করপোরেশনের টিকাদান কেন্দ্রগুলো, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের টিকাদান কেন্দ্রগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম যথারীতি চলছে। কিন্তু অভিভাবকদের সবাই করোনা আতঙ্কে শিশুদের টিকা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন না।
পনেরো মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের ইপিআই টিকা বাকি থাকলে নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্রে নেওয়াই ভালো, করোনার সঙ্গে লড়াই কতদিন চলবে বলা যাচ্ছে না, কিন্তু টিকা বাকি থাকলে শিশুদের টিকা দ্বারা প্রতিরোধযোগ্য জটিল রোগ যেমন হাম, ডিপথেরিয়া, যক্ষ্ণা, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া এগুলো হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, যা পরিস্থিতি মারাত্মক করে তুলতে পারে।
কাজেই টিকা আর বাকি না রেখে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিশুকে নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্রে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন, কেবল মা শিশুকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাবেন। যত বেশি পরিবারের সদস্য যাবেন, তত বেশি করোনা সংক্রমণ এর আশঙ্কা। টিকা কার্ড থাকলে অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যাবেন। মা মাস্ক পরিধান করবেন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। যতক্ষণ বাইরে থাকবেন মাস্ক খুলবেন না কিংবা মাস্কের সামনের অংশ স্পর্শ করবেন না। বারবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করবেন। যতটা সম্ভব বাইরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না, করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত পরিস্কার করবেন। শিশু যদি মাস্ক পরালে রাখতে না চায় তাহলে জোর করে মাস্ক পরানোর দরকার নেই। বাইরে থাকার সময় শিশুর নাক, মুখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা যথাসাধ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
ভিড় এড়িয়ে চলবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। অন্যদের ভদ্রভাবে দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করবেন। টিকা দিয়ে বাসায় ফিরেই নিজের হাত সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে মাস্ক কানের পেছন থেকে খুলে ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলে দেবেন। বাইরের পরা পোশাক পরিবর্তন করে মা গোসল করে ফেলবেন।
শিশু আগে থেকেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত থাকলে ভালো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। টিকা দেওয়া পরবর্তী জ্বরের জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন। টিকা-পরবর্তী কোনো জটিলতা যেমন খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
সব শিশু সুস্থ থাকুক, নিরাপদ থাকুক।
মন্তব্য করুন