- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান
সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান

আমার একমাত্র কন্যা জুনহাই-এর গানের নানু হচ্ছেন বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান।
সম্প্রতি তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান, তারা সবাই যার যার ক্ষেত্রে একেকজন নক্ষত্র। তাদের কারও সঙ্গে কারও তুলনা হয় না।
আমরা তখন থাকি ৬৪ গ্রিন রোড বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের সাউন্ড স্টুডিও 'মুভিটোন'-এর একটা বাড়ি পরে।
শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের মেয়ে রুমানা, রুবানা ও আনিকা আমার কন্যা জুনহাইয়ের মা মুক্তির আপন খালাতো বোন। সেই সুবাদে জুনহাইয়ের গানের নানু বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান।
তখন সালটা ঠিক মনে নেই, খুব সম্ভবত ১৯৯৬ কি ১৯৯৭ হবে।
জার্মান এমবাসির আমন্ত্রণে, জার্মানে একক পিয়ানোর শো করে ফিরেছেন বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান।
আর উপহার হিসেবে পেয়েছেন ত্রিভুবন-সেরা মিউজিক কম্পোজার লাডউইগ ভ্যান বিটোভেনের শ্বেতপাথরের আবক্ষ মূর্তি। সতেরোশ' শতাব্দীর এই বিশ্ববিখ্যাত সুরকারের সৃষ্টি 'ফিফথ সিম্ম্ফোনি' আজও সারাবিশ্বে সমানভাবে সমাদৃত।
জার্মান এমবাসির আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসা জার্মান বেহালাবাদক আসছেন সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের 'মুভিটোন' স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের জন্য।
সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের আপন ছোট ভাই 'সাজ্জাদ' ভাই আর আমাকে ভিডিওগ্রাফির দায়িত্ব দেওয়া হলো।
দায়িত্ব পেয়ে আমি তো আহদ্মাদিত। মনে মনে সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান খালুকে হাজার সালাম।
রেকর্ডিংয়ের দিন ঠিক কলটাইম এগারোটায় জার্মান বেহালাবাদক- লম্বা প্রায় ছয় ফুট, সাদা চামড়া, সোনালি চুল- তার ছোট্ট বেহালা নিয়ে এসেছেন। নামটা যেন কী, ঠিক মনে নেই, তবে 'আঁন্দ্রে-ই' এই রকম আবছা মনে পড়ছে।
শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান খালু তাকে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড় করালেন।
একটু পর জার্মানির বেহালাবাদক মি. আঁন্দ্রে শুরু করলেন তার ছোট ছোট তিন-চার মিনিটের মিউজিক পিস।
এই সুরের মূর্ছনার বিবরণ ভাষায় প্রকাশ করার মতো শব্দ আমার জানা নেই।
আমি পুনা ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ইনস্টিটিউটের ছাত্র। আমাদের মিউজিক টিচার ছিলেন ভারতের বিখ্যাত সুরস্রষ্টা ভাস্কর চন্দ্রাভারকার, যিনি আমাদের নিয়ে পণ্ডিত রবিশংকরের লাইভ সেতার শুনিয়েছেন।
এই লাইভ শোর স্থির ছবি তুলেছে আমার পুনার সহপাঠী শফীকুল ইসলাম স্বপন। আমি ভারতের বিখ্যাত খেয়ালসম্রাট ভীম সেন যোশীর বাসায় বসে রেওয়াজ শুনেছি, সেই আমিও এই সুর সৃষ্টির বর্ণনায় অপারগ।
এত সুন্দর মিষ্টি সুর আগে কখনও এত কাছ থেকে শুনেছি বলে মনে পড়ে না।
রেকর্ডিং শেষে এবার আপ্যায়নের পালা। সবাই জল খাবাওে ব্যস্ত।
বেহালাবাদক আঁন্দ্রেই তার বেহালাটাকে কেমন যেন অভ্যবের মতো আগলে আগলে রাখছেন। দৃষ্টিকটু।
ওই বেহালা কি কেউ চুরি করবে নাকি? উন্নত দেশ কী মনে করে নিজেদের!
এত বড় সুরকারের এমনি নিচু মন! সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যার আঁন্দ্রেইর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমিও চান্স পেয়ে গেলাম।
'আচ্ছা আপনার দেশে একটা ভালো বেহালার আনুমানিক দাম কত?'
'ভালোর তো কোনো শেষ নেই, তবে আমার বেহালা মোটামুটি ভালো। এটার দাম ৮০ হাজার ইউএস ডলার।'
মনে মনে আঁতকে উঠলাম, দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ।
ঢাকার টাকায় প্রায় ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই একটা পুঁচকে বেহালার দামে ঢাকায় তিনটি এক হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট কিনতে পারি।
ওকে নাকি এমবাসি থেকে বলে দিয়েছে, বাংলাদেশ চোরের দেশ, রেকর্ডিং স্টুডিওতে বেহালাটা চোখে চোখে রাখতে।
মনটা বিষাদে মুচড়ে গেল।
এত সুন্দর সুরের মূর্ছনা যেন একমুহূর্তে বাংলার ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল...।
চলচ্চিত্র নির্মাতা
সম্প্রতি তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান, তারা সবাই যার যার ক্ষেত্রে একেকজন নক্ষত্র। তাদের কারও সঙ্গে কারও তুলনা হয় না।
আমরা তখন থাকি ৬৪ গ্রিন রোড বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের সাউন্ড স্টুডিও 'মুভিটোন'-এর একটা বাড়ি পরে।
শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের মেয়ে রুমানা, রুবানা ও আনিকা আমার কন্যা জুনহাইয়ের মা মুক্তির আপন খালাতো বোন। সেই সুবাদে জুনহাইয়ের গানের নানু বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান।
তখন সালটা ঠিক মনে নেই, খুব সম্ভবত ১৯৯৬ কি ১৯৯৭ হবে।
জার্মান এমবাসির আমন্ত্রণে, জার্মানে একক পিয়ানোর শো করে ফিরেছেন বরেণ্য সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান।
আর উপহার হিসেবে পেয়েছেন ত্রিভুবন-সেরা মিউজিক কম্পোজার লাডউইগ ভ্যান বিটোভেনের শ্বেতপাথরের আবক্ষ মূর্তি। সতেরোশ' শতাব্দীর এই বিশ্ববিখ্যাত সুরকারের সৃষ্টি 'ফিফথ সিম্ম্ফোনি' আজও সারাবিশ্বে সমানভাবে সমাদৃত।
জার্মান এমবাসির আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসা জার্মান বেহালাবাদক আসছেন সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের 'মুভিটোন' স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের জন্য।
সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যারের আপন ছোট ভাই 'সাজ্জাদ' ভাই আর আমাকে ভিডিওগ্রাফির দায়িত্ব দেওয়া হলো।
দায়িত্ব পেয়ে আমি তো আহদ্মাদিত। মনে মনে সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান খালুকে হাজার সালাম।
রেকর্ডিংয়ের দিন ঠিক কলটাইম এগারোটায় জার্মান বেহালাবাদক- লম্বা প্রায় ছয় ফুট, সাদা চামড়া, সোনালি চুল- তার ছোট্ট বেহালা নিয়ে এসেছেন। নামটা যেন কী, ঠিক মনে নেই, তবে 'আঁন্দ্রে-ই' এই রকম আবছা মনে পড়ছে।
শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান খালু তাকে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড় করালেন।
একটু পর জার্মানির বেহালাবাদক মি. আঁন্দ্রে শুরু করলেন তার ছোট ছোট তিন-চার মিনিটের মিউজিক পিস।
এই সুরের মূর্ছনার বিবরণ ভাষায় প্রকাশ করার মতো শব্দ আমার জানা নেই।
আমি পুনা ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ইনস্টিটিউটের ছাত্র। আমাদের মিউজিক টিচার ছিলেন ভারতের বিখ্যাত সুরস্রষ্টা ভাস্কর চন্দ্রাভারকার, যিনি আমাদের নিয়ে পণ্ডিত রবিশংকরের লাইভ সেতার শুনিয়েছেন।
এই লাইভ শোর স্থির ছবি তুলেছে আমার পুনার সহপাঠী শফীকুল ইসলাম স্বপন। আমি ভারতের বিখ্যাত খেয়ালসম্রাট ভীম সেন যোশীর বাসায় বসে রেওয়াজ শুনেছি, সেই আমিও এই সুর সৃষ্টির বর্ণনায় অপারগ।
এত সুন্দর মিষ্টি সুর আগে কখনও এত কাছ থেকে শুনেছি বলে মনে পড়ে না।
রেকর্ডিং শেষে এবার আপ্যায়নের পালা। সবাই জল খাবাওে ব্যস্ত।
বেহালাবাদক আঁন্দ্রেই তার বেহালাটাকে কেমন যেন অভ্যবের মতো আগলে আগলে রাখছেন। দৃষ্টিকটু।
ওই বেহালা কি কেউ চুরি করবে নাকি? উন্নত দেশ কী মনে করে নিজেদের!
এত বড় সুরকারের এমনি নিচু মন! সংগীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান স্যার আঁন্দ্রেইর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমিও চান্স পেয়ে গেলাম।
'আচ্ছা আপনার দেশে একটা ভালো বেহালার আনুমানিক দাম কত?'
'ভালোর তো কোনো শেষ নেই, তবে আমার বেহালা মোটামুটি ভালো। এটার দাম ৮০ হাজার ইউএস ডলার।'
মনে মনে আঁতকে উঠলাম, দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ।
ঢাকার টাকায় প্রায় ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই একটা পুঁচকে বেহালার দামে ঢাকায় তিনটি এক হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট কিনতে পারি।
ওকে নাকি এমবাসি থেকে বলে দিয়েছে, বাংলাদেশ চোরের দেশ, রেকর্ডিং স্টুডিওতে বেহালাটা চোখে চোখে রাখতে।
মনটা বিষাদে মুচড়ে গেল।
এত সুন্দর সুরের মূর্ছনা যেন একমুহূর্তে বাংলার ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল...।
চলচ্চিত্র নির্মাতা
মন্তব্য করুন