- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- আমরা তাদের লিবিয়া পর্যন্ত যেতে দিলাম!
আমরা তাদের লিবিয়া পর্যন্ত যেতে দিলাম!
অবৈধ অভিবাসী

লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি, চারজন আফ্রিকান। এ ঘটনায় আরও ১১ ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে অভিবাসন করতে গিয়ে যারা নিহত হলেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা ও ঘটনার নিন্দা জানানো ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে? অমানবিক ব্যাপার হলো, যারা নিহত হয়েছেন তাদের মরদেহ ফেরত আনাও সম্ভব হবে না। নিহতদের পরিবার শেষবারের মতো তাদের দেখতেও পারবে না- এর চেয়ে বড় দুঃখের বিষয় আর কিছু হতে পারে না।
আমরা জানি যে, লিবিয়ায় ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে এখনও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ত্রিপোলির অবস্থা সংকটাপন্ন। কয়েকটি পক্ষ ত্রিপোলি দখলে নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে যারা আগে থেকেই লিবিয়ায় ছিলেন বা করোনাভাইরাসের এই সময়ে সেখানে গিয়ে নেমেছেন, তারা বড় ধরনের বিপদের মুখে রয়েছেন। এই মানুষগুলো কিন্তু লিবিয়ায় থাকার জন্য সেখানে যাননি। তারা হয়তো লিবিয়া হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু ত্রিপোলির অবস্থা খুবই ভয়াবহ হওয়ায় ইউরোপে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও সাতশ' মানুষকে সীমান্তে আটকের পর ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত কয়েকদিন আগেও দুইশ'জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত পাঠানোর পর তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। নিহত ২৬ বাংলাদেশি হয়তো অবৈধভাবে লিবিয়ায় গিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে সেখানেই আটকে পড়েছিলেন। সম্ভবত তারা কোনো ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক ছিলেন। বিগত সময়েও আমরা দেখেছি, অভিবাসীরা লিবিয়ায় দীর্ঘদিন আটকে থাকলে মানব পাচারকারীরা তাদের হত্যা করে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ড নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একজন পাচারকারী নিহত হওয়ার জের ধরে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।
অবৈধ পথে অভিবাসন করা ঠিক নয়- এটা সবার জানা। কিন্তু যারা এ কাজটি করেন, তারা ভাবেন কোনোমতে ইউরোপে যেতে পারলেই জীবন বদলে যাবে। এই ভাবনা থেকে তারা অতীতেও ঝুঁকি নিয়েছেন, বর্তমানেও নিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও নেবেন। অবৈধ অভিবাসনে নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশে প্রচুর সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, এ কর্মসূচিগুলো কোনো কাজে আসছে না। আমি মনে করি, এগুলোর ধরন বদলানো দরকার। একই সঙ্গে তারা কীভাবে অবৈধ পথে অভিবাসন করে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের বড় দায়িত্ব রয়েছে।
অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা কিন্তু প্লেনে চড়েই তাদের গন্তব্যের কাছাকাছি যায়। তার মানে তারা যাচ্ছে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পার হয়ে, সিভিল এভিয়েশনের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তদারকিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি চোখ বন্ধ রাখার প্রবণতা না দেখায় তাহলে কিন্তু অবৈধ অভিবাসন অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ধরনের না জানা, না চেনার মতো ভূমিকা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সম্ভবত অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অতীতে কী হয়েছে এবং বর্তমানে কী হচ্ছে, তা সবার জানা। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে অবৈধ অভিবাসন অব্যাহত না থাকে, সেজন্য দ্রুতই বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে শক্ত নিয়ম আসা জরুরি।
মানুষ কেন সুদান, লিবিয়া বা আফ্রিকার অন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে যাচ্ছে? এই দেশগুলোর ভিসা নিয়ে যারা যেতে চাচ্ছেন এয়ারপোর্টে, তাদের ভিসাগুলো ডাবল-ট্রিপল চেক করা দরকার। তারা কেন সেখানে যাচ্ছেন, কোন প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ পাচ্ছেন- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া দরকার। এগুলো না করে এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়ার অর্থ স্পষ্টই দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ব্যর্থতা। আমরা তাদের জেনেশুনে জীবনের ঝুঁকি নিতে দেই কেন? নিহত বাংলাদেশিরা লিবিয়া পর্যন্ত না যেতে পারলে হয়তো প্রাণ হারাতে হতো না।
দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ এগুলো তাদের এখতিয়ারে নেই। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বারবার আলোচনা করা এবং তাদের দায়বদ্ধ করা। অভিবাসীরা কিন্তু সুদান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে কোনো না কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। কোন রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠাচ্ছে তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে তারা যাচ্ছেন, সেই কর্মকর্তাদেরও দায়বদ্ধ করতে হবে। এই কার্যক্রমগুলো বন্ধ করার সময় এসেছে। অন্যদিকে, কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশে পেল্গন পাঠিয়ে যেভাবে ছাত্র ও অন্যদের ফেরত আনা হয়েছে, একইভাবে লিবিয়ায় আটকাপড়াদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই মানুষগুলো যে না বুঝে সেখানে গেছে, বিষয়টি তা নয়। তারা ভালো জীবনের প্রত্যাশায় অভিবাসন করেছে। তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।
লিবিয়া ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকেও যাচ্ছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাকে লোক যাওয়া বন্ধ থাকলেও অন্যভাবে সেখানে লোকজনের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। যে কোম্পানিগুলো তাদের নিয়ে যায়, তারা শ্রমিকদের অমানবিক অবস্থার মধ্যে রেখে দেয়। অনেক সময় অন্য কোনো দেশে পাঠানোর কথা বলে ইরাকে পাঠানো হয়। ফলে মানুষগুলোকে থাকতে হয় বন্দিশিবিরের ভেতর। সেখানে তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে হয়তো তাদের থাকা-খাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সুতরাং এ মানুষগুলোকে ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সমস্যা হলো, যারা অবৈধ পথে ইরাক বা লিবিয়ায় যেতে সহায়তা করছে, তারা বিচারের আওতায় আসে না। তারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ভবিষ্যতে তারা যাতে এ ধরনের কাজ করতে না পারে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
লিবিয়ার ঘটনায় দূতাবাস তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। করোনাভাইরাসের কারণে দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি পাননি বলে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। বাস্তবতা হলো, এ ধরনের ঘটনায় দূতাবাস কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে- সেটা প্রত্যাশিত নয়, সে অবস্থাও নেই। এরপরও অভিবাসীদের সেবা দিতে দূতাবাসকে পথ বের করতে হবে। এক্ষেত্রে দূতাবাসগুলো ওই দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা, তারা কে কোথায় কীভাবে আছে, কী করছে- এসব বিষয়ে গোপন সমীক্ষা চালাতে পারে। এরপর তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম যে রিটার্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করে, তার আওতায় এই মানুষগুলোকে লিবিয়া ও ইরাক থেকে ফেরত আনা যেতে পারে। বিশেষ করে সীমান্তে আটক হওয়া মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে না দিয়ে সরাসরি দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। আমরা চাই উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা এ মানুষগুলো নিরাপদে দেশে ফিরে আসুক।
চেয়ারম্যান, রামরু
আমরা জানি যে, লিবিয়ায় ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে এখনও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ত্রিপোলির অবস্থা সংকটাপন্ন। কয়েকটি পক্ষ ত্রিপোলি দখলে নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে যারা আগে থেকেই লিবিয়ায় ছিলেন বা করোনাভাইরাসের এই সময়ে সেখানে গিয়ে নেমেছেন, তারা বড় ধরনের বিপদের মুখে রয়েছেন। এই মানুষগুলো কিন্তু লিবিয়ায় থাকার জন্য সেখানে যাননি। তারা হয়তো লিবিয়া হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু ত্রিপোলির অবস্থা খুবই ভয়াবহ হওয়ায় ইউরোপে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও সাতশ' মানুষকে সীমান্তে আটকের পর ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত কয়েকদিন আগেও দুইশ'জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত পাঠানোর পর তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। নিহত ২৬ বাংলাদেশি হয়তো অবৈধভাবে লিবিয়ায় গিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে সেখানেই আটকে পড়েছিলেন। সম্ভবত তারা কোনো ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক ছিলেন। বিগত সময়েও আমরা দেখেছি, অভিবাসীরা লিবিয়ায় দীর্ঘদিন আটকে থাকলে মানব পাচারকারীরা তাদের হত্যা করে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ড নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একজন পাচারকারী নিহত হওয়ার জের ধরে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।
অবৈধ পথে অভিবাসন করা ঠিক নয়- এটা সবার জানা। কিন্তু যারা এ কাজটি করেন, তারা ভাবেন কোনোমতে ইউরোপে যেতে পারলেই জীবন বদলে যাবে। এই ভাবনা থেকে তারা অতীতেও ঝুঁকি নিয়েছেন, বর্তমানেও নিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও নেবেন। অবৈধ অভিবাসনে নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশে প্রচুর সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, এ কর্মসূচিগুলো কোনো কাজে আসছে না। আমি মনে করি, এগুলোর ধরন বদলানো দরকার। একই সঙ্গে তারা কীভাবে অবৈধ পথে অভিবাসন করে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের বড় দায়িত্ব রয়েছে।
অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা কিন্তু প্লেনে চড়েই তাদের গন্তব্যের কাছাকাছি যায়। তার মানে তারা যাচ্ছে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পার হয়ে, সিভিল এভিয়েশনের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তদারকিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি চোখ বন্ধ রাখার প্রবণতা না দেখায় তাহলে কিন্তু অবৈধ অভিবাসন অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ধরনের না জানা, না চেনার মতো ভূমিকা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সম্ভবত অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অতীতে কী হয়েছে এবং বর্তমানে কী হচ্ছে, তা সবার জানা। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে অবৈধ অভিবাসন অব্যাহত না থাকে, সেজন্য দ্রুতই বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে শক্ত নিয়ম আসা জরুরি।
মানুষ কেন সুদান, লিবিয়া বা আফ্রিকার অন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে যাচ্ছে? এই দেশগুলোর ভিসা নিয়ে যারা যেতে চাচ্ছেন এয়ারপোর্টে, তাদের ভিসাগুলো ডাবল-ট্রিপল চেক করা দরকার। তারা কেন সেখানে যাচ্ছেন, কোন প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ পাচ্ছেন- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া দরকার। এগুলো না করে এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়ার অর্থ স্পষ্টই দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ব্যর্থতা। আমরা তাদের জেনেশুনে জীবনের ঝুঁকি নিতে দেই কেন? নিহত বাংলাদেশিরা লিবিয়া পর্যন্ত না যেতে পারলে হয়তো প্রাণ হারাতে হতো না।
দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ এগুলো তাদের এখতিয়ারে নেই। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বারবার আলোচনা করা এবং তাদের দায়বদ্ধ করা। অভিবাসীরা কিন্তু সুদান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে কোনো না কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। কোন রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠাচ্ছে তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে তারা যাচ্ছেন, সেই কর্মকর্তাদেরও দায়বদ্ধ করতে হবে। এই কার্যক্রমগুলো বন্ধ করার সময় এসেছে। অন্যদিকে, কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশে পেল্গন পাঠিয়ে যেভাবে ছাত্র ও অন্যদের ফেরত আনা হয়েছে, একইভাবে লিবিয়ায় আটকাপড়াদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই মানুষগুলো যে না বুঝে সেখানে গেছে, বিষয়টি তা নয়। তারা ভালো জীবনের প্রত্যাশায় অভিবাসন করেছে। তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।
লিবিয়া ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকেও যাচ্ছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাকে লোক যাওয়া বন্ধ থাকলেও অন্যভাবে সেখানে লোকজনের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। যে কোম্পানিগুলো তাদের নিয়ে যায়, তারা শ্রমিকদের অমানবিক অবস্থার মধ্যে রেখে দেয়। অনেক সময় অন্য কোনো দেশে পাঠানোর কথা বলে ইরাকে পাঠানো হয়। ফলে মানুষগুলোকে থাকতে হয় বন্দিশিবিরের ভেতর। সেখানে তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে হয়তো তাদের থাকা-খাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সুতরাং এ মানুষগুলোকে ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সমস্যা হলো, যারা অবৈধ পথে ইরাক বা লিবিয়ায় যেতে সহায়তা করছে, তারা বিচারের আওতায় আসে না। তারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ভবিষ্যতে তারা যাতে এ ধরনের কাজ করতে না পারে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
লিবিয়ার ঘটনায় দূতাবাস তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। করোনাভাইরাসের কারণে দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি পাননি বলে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। বাস্তবতা হলো, এ ধরনের ঘটনায় দূতাবাস কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে- সেটা প্রত্যাশিত নয়, সে অবস্থাও নেই। এরপরও অভিবাসীদের সেবা দিতে দূতাবাসকে পথ বের করতে হবে। এক্ষেত্রে দূতাবাসগুলো ওই দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা, তারা কে কোথায় কীভাবে আছে, কী করছে- এসব বিষয়ে গোপন সমীক্ষা চালাতে পারে। এরপর তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম যে রিটার্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করে, তার আওতায় এই মানুষগুলোকে লিবিয়া ও ইরাক থেকে ফেরত আনা যেতে পারে। বিশেষ করে সীমান্তে আটক হওয়া মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে না দিয়ে সরাসরি দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। আমরা চাই উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা এ মানুষগুলো নিরাপদে দেশে ফিরে আসুক।
চেয়ারম্যান, রামরু
মন্তব্য করুন