করোনাভাইরাসে দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন দেশের সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এক দশক ধরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ানোর জন্য কিছুদিন পরপর ঢাকার রাজপথে ফেস্টুন, লিফলেট, ব্যানার হাতে নিয়ে বয়স বাড়নোর দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ, শাহবাগ অবরোধ, অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। সংসদের বিভিন্ন অধিবেশনে বয়স বাড়ানোর পয়েন্ট অব অর্ডারসহ কণ্ঠভোটের প্রস্তাবও উঠেছে। কিন্তু এতসব আয়োজন শেষে যেই লাউ সেই কদু। এমনিতেই আমাদের বছরের পর বছর নিয়োগ পরীক্ষা ঝুলিয়ে রাখার সংস্কৃতি রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে করোনা যুক্ত হওয়ায় থমকে আছে সব সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া, নিয়োগ। সাম্প্রতিককালে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এসবের আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরের বেশ কিছু চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা থাকলেও করোনার কারণে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে চাকরির আবেদনে বয়সসীমা নির্দিষ্ট থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বয়স চলে যাওয়ায় অসংখ্য চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন।

অন্যান্য দেশের মতো যদি বয়সসীমার গি টা বেশি হতো তাহলে হয়তো চাকরিপ্রত্যাশী বা সরকারকে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হতো না। তাই জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে এবার একটু নড়েচড়ে বসেছেন। আমরা চাই কেবল করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীদের কথা না ভেবে বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি যেন যুগোপযোগী, বৈষম্যহীন ও সর্বজনীন হয়। দীর্ঘ সময় যারা বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য আন্দোলন করেছেন তাদের অনেকের বয়স আজ ৩৫ অতিক্রম করেছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বিগত আন্দোলনকারীদেরও এই সুবিধার আওতায় এনে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক যাতে সেটির সুফল হয় সর্বজনীন। মাস্টার্স শেষ করতে যে কারও বয়সসীমা দাঁড়ায় কমপক্ষে ২৫ বছর। কষ্টার্জিত সনদগুলোকে ৩০ বছরেই অর্থাৎ মাত্র ৪ বা ৫ বছর পরেই মূল্যহীন ও মেয়াদহীন করে দেওয়া কতটা যৌক্তিক। উন্নত দেশগুলোতে কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা বসে থাকছে না, এখানেও তেমনটাই হবে। মেধার যুদ্ধে যারা যখন সফল হবে তারাই কাজে লেগে যাবে আর যারা নিজেকে ব্যর্থ মনে করবে তারা হাঁটবে অন্য পথে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে খুঁজবে প্রাইভেট সেক্টর, হবে হয়তো উদ্যোক্তা বা অন্য কিছু।

তাই জাতীয় স্বার্থে, বেকারমুক্ত দেশ গড়তে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মেধাকে মূল্যায়ন করতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো জরুরি।
 

প্রকৌশলী
nazmulhussen@yahoo.com