- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- অনলাইন ক্লাস ও ইন্টারনেটের গতি
অনলাইন ক্লাস ও ইন্টারনেটের গতি

করোনা মহামারিতে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গত ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। এমন অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কবলে পড়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। এ সমস্যার সমাধানে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইন ক্লাসের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনলাইন ক্লাস বাংলাদেশের ছাত্র এবং শিক্ষক উভয়ের জন্যই একটি নতুন বিষয়। তার ওপর যে সমস্যা দেখা দেয় সেটি হচ্ছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় হল বা মেসগুলো খালি হয়েছে শুরুতেই। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই রয়েছে নিজ নিজ গ্রামে। এমতাবস্থায় ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। অনলাইন ক্লাস হয়ে থাকে মূলত জুম বা স্কাইপের মাধ্যমে। এ জন্য প্রয়োজন উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। তাদের জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার।
আমাদের দেশের মোবাইল অপারেটর ও তাদের নেটওয়ার্ক সেবার মান উন্নত বিশ্বের মতো ভালো নয়। ফলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করা দুরূহ। অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সুপারভাইজারের। পরীক্ষা সিস্টেমটির ইউজার নিয়ন্ত্রণ, সিস্টেমের ব্যাকআপ, রিকভারির দায়িত্ব সুপারভাইজারের। এ ছাড়া রয়েছে কন্ডাক্টর :যারা তৈরি করবেন বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন এবং টেস্ট টেকার : যারা করবেন পরীক্ষার মূল্যায়ন। এরপর পরীক্ষা গ্রহণের নির্দিষ্ট উইন্ডোতে আপলোড করা হয় প্রশ্নটি। শিক্ষার্থীরা একটি নির্ধারিত ইউজার আইডির মাধ্যমে নির্দিষ্ট উইন্ডোতে প্রবেশ করে পরীক্ষা দেয়। অটোমেটিকভাবেই পরীক্ষাটি মূল্যায়ন করা হয়। পরীক্ষা পরিচালনার এতসব জটিল প্রক্রিয়া অনেকটা হঠাৎ করে শুরু হওয়ায় অনেকেই পুরো বিষয়টি রপ্ত করতে পারেনি। এ ছাড়া অনলাইনে ভাইভা নেওয়া হচ্ছে। দুর্বল ইন্টারনেটের ফলে পরীক্ষার্থী ঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার পরও আশানুরূপ হচ্ছে না। অনেকে মোবাইলে কল দিয়েও ভাইভা দিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় ভাইভায় যথাযথ মূল্যায়ন এক প্রকার অসম্ভব।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা অঙ্কের সেমিস্টার ফি প্রদানে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। গ্রাম থেকে টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না অনেকের; তবে এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় না নিয়ে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না অথবা রেজাল্ট দিচ্ছে না। সবশেষ সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট নিয়ে। অধিকাংশই তাদের আশানুরূপ ফল করতে পারছে না। এক প্রকার গড় নম্বর পেয়ে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। অনলাইনে পরীক্ষা ও ক্লাস নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সহায়তা এবং কারিগরি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন