- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল চাই
স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল চাই

স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে প্রতি দশ হাজার মানুষের জন্য ৩ দশমিক ৭৫ চিকিৎসক ও ১ দশমিক ৭৫ জন নার্স রয়েছেন। অথচ নিয়মানুযায়ী প্রতি চারজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকবেন। আর চিকিৎসক নার্স অনুপাত ১ :৩ থাকার কথা। অথচ বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে নার্সের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি। এ থেকে সহজে অনুমেয়- সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কতটা বেগ পোহাতে হয় নার্সদের। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় একটি ওয়ার্ডে ৮০ জন রোগীর জন্য প্রতি শিফটে দুই কিংবা তিনজন নার্স সেবা দিয়ে থাকেন।
যদিও সরকার দুই দফায় ২০১৬ ও ২০১৮ সালে পনেরো হাজার নার্স নিয়োগ দেয়। সর্বশেষ করোনা সংকটে ৫০৫৪ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বর্তমানে নার্সের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭০৭৭। এ সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। নিম্ন আয়ের মানুষ বেশিরভাগই সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি চিকিৎসাসেবা তাদের জন্য খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। আমাদের দেশে বেসরকারিভাবে গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসার কোনো সুব্যবস্থা নেই।
আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জড়িতদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, টেকনিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, এফডব্লিউভি, সিএইচসিপি সরাসরি সেবা দিয়ে থাকেন রোগীদের। তাই তাদের নানা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীরা প্রথমে আসেন নার্সদের কাছে, তারা ট্রায়াল (রোগের তীব্রতা অনুসারে রোগী ভাগ করার পদ্ধতি) করার পরে ভর্তি হন এবং সংশ্নিষ্ট চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করেন। তার ওষুধপত্র নার্স সেবন করিয়ে দেন। পথ্য সরবরাহ করার নিমিত্তে প্রায়ই নার্সকে রোগীর কাছে যেতে হয়। তা ছাড়া নার্সরা শিফট ভাগ করে সেবা দেন বিকেল ও নৈশকালীন। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসক ও নার্সদের কমর্স্থলে রোগীর স্বজন কর্তৃক নিপীড়নের হার বেড়েছে। যেহেতু বেশিরভাগই সময় রোগীর কাছে নার্সরা বেশি থাকেন, তাই নার্সদের ঝুঁকির হার বেশি থাকে। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। কর্মস্থলে অনিরাপদ বোধ করেন স্বাস্থ্য সেবা সরবরাহকারীরা। অতিরিক্ত রোগীর কারণে সব রোগীকে সমানভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে রোগীর স্বজন কর্তৃক নিপীড়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাসপাতালগুলোতে যৌন হয়রানির প্রবণতা বাড়ছে। ফলে নারীদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় পরিণত হয়েছে।
মাস কয়েক আগে ঢাকার উত্তরার একটি সরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও এক জেনারেল হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান কর্তৃক নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যেখানে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে নিরাপদ নয় তার অধস্তন কর্মকর্তা, তাহলে সহজেই অনুমেয় নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু স্বাস্থ্য খাতে জড়িত অধিকাংশই নারী; তাই তাদের নিরাপদ কর্মস্থল আর ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করলে স্বাস্থ্য সেবা আরও ত্বরান্বিত হবে।
নার্সিং কর্মকর্তা
syedahmedtanshiruddin@gmail.com
মন্তব্য করুন